West Bengal BJP

আপনার কি স্মার্টফোন রয়েছে! তবে নাম উঠবে বিজেপির তালিকায়, বুথে শক্তিবৃদ্ধির ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরি

বিধানসভা নির্বাচনে বুথস্তরে সংগঠন মজবুত না থাকার খেসারত দিতে হয়েছে। এমনটাই মনে করেন বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। তাই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই চলছে প্রস্তুতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:৫৩
Share:

বুথে নজর বিজেপির। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কোন বুথে কোন কোন ভোটারের নিজস্ব স্মার্টফোন রয়েছে, তার তালিকা তৈরি করবে বিজেপি। রাজ্য জুড়ে বুথস্তরে শক্তি বাড়ানোর যে কর্মসূচি গেরুয়া শিবির নিয়েছে তাতে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্মীদের।

Advertisement

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের ‘ভুল’ করতে চাইছে না রাজ্য বিজেপি। দলের নিজস্ব বিশ্লেষণেই মনে করা হয়, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মূলত নরেন্দ্র মোদী হাওয়ায় আশাতীত ফল হলেও ২০২১ সালে সাংগঠনিক দুর্বলতা আশাপূরণের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে গিয়েছিল। সেই ভুল দ্বিতীয় বার করতে চাইছে না দলের নতুন রাজ্য নেতৃত্ব। এখন থেকেই তাই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপি সূত্রে খবর, দিল্লি থেকে আসা রাজ্যের পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল, মঙ্গল পাণ্ডেরাই চাইছেন সময় থাকতে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই এখন থেকেই বুথস্তরের সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্য নিয়েছে রাজ্য বিজেপি।

সেই লক্ষ্যে রাজ্য বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামছে মার্চ মাসেই। ‘আমার বুথ, সবচেয়ে মজবুত’ স্লোগান নিয়ে ১২ মার্চ থেকে এক পক্ষকালের ‘বুথ সশক্তিকরণ অভিযান’ কর্মসূচি নিতে চলেছে রাজ্য বিজেপি। শেষ হবে ২৬ মার্চ। সেই দিন থেকেই শুরু হবে বুথস্তরে শক্তির মূল্যায়ন। প্রতিটি মণ্ডল ধরে মূল্যায়ন হবে। তার উপরে ভিত্তি করে ঠিক করা হবে দ্বিতীয় পর্বের কর্মসূচির দিনক্ষণ।

Advertisement

এই কর্মসূচির আগে রাজ্য বিজেপির তরফে এটাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে যে, বুথস্তরে আদর্শ সংগঠন ঠিক কেমন হতে পারে। সেই মর্মে লিখিত আকারে নির্দেশ গিয়েছে জেলায় জেলায়। দক্ষিণবঙ্গের জেলাস্তরের এক নেতা বলেন, ‘‘আগেও আমরা এই ধরনের কর্মসূচি নিয়েছিলাম। কিন্তু তা সম্পূর্ণ সফল করা যায়নি। তবে এ বার যে ভাবে সবিস্তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা মেনে চললে আদর্শ বুথ সংগঠন গড়ে তোলা খুব একটা কঠিন হবে না।’’

বুথে বুথে শক্তি বাড়ানোর যে ব্লু প্রিন্ট বিজেপি তৈরি করেছে, তাতে কমিটিতে কারা থাকবেন, কত জন থাকবেন এবং কার কী কাজ হবে তা-ও সবিস্তার বলা রয়েছে। ১১ জনের বুথ কমিটি গড়ার পাশাপাশি নির্দেশ প্রতিটি কমিটিতে ২০ জন সদস্য থাকা চাই। যাঁরা ওই বুথের ভোটার তালিকার এক একটি পাতার দায়িত্বে থাকবেন। তাঁদের বলা হবে পৃষ্ঠা প্রমুখ। এঁরা ওই পাতায় নাম থাকা পরিবারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন ও দলের হয়ে কথা বলবেন। গড়ে পাঁচটি করে বুথ নিয়ে একটি করে শক্তিকেন্দ্র বানিয়ে তারও এক জন প্রধান থাকবেন। সকলে মিলে এলাকার ভোটারদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবেন। কোনও বুথ এলাকায় তফসিলি জাতি, জনজাতি সম্প্রদায়ের বসবাস হলে তাঁদেরও বুথ কমিটিতে রাখতে হবে। প্রতিটি বুথ কমিটিতে এক জনকে দায়িত্ব নিতে হবে সেই এলাকায় যেন প্রতি মাসের শেষ রবিবার প্রধানমন্ত্রী ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়াও মহিলা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও এক জনকে দায়িত্ব দিতে হবে।

কী কী তথ্য সংগ্রহ করতে হবে তারও সবিস্তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের বয়স অনুযায়ী চাহিদা জানার পাশাপাশি কাদের নিজস্ব স্মার্টফোন রয়েছে সেই তথ্য এবং নম্বরও নিতে হবে। এলাকার কোনও পরিবার কোন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে রাখতে হবে তারও হিসাব। তাঁদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করতে হবে। সেই সঙ্গে বুথস্তরের কর্মীদের বিগত দিনের নির্বাচনে ওই এলাকায় কেমন ফল হয়েছিল তার সবিস্তার তথ্য নিজেদের কাছে রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট বুথের তফসিলি জাতি, জনজাতি ভোটারদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে হবে। প্রতি বুথ এলাকায় কমপক্ষে পাঁচটি দেওয়ালে দলের প্রতীক পদ্মের ছবি আঁকতে হবে। সেই সঙ্গে যেতে অন্য দলের সমর্থকদের কাছেও। নিয়মিত বোঝাতে হবে দলের আদর্শ ও লক্ষ্য। নির্দিষ্ট নম্বরে মিসড কল দিয়ে সদস্য বানাতে হবে। নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে স্থানীয় ক্লাব, মঠ, মন্দির, সমবায় সমিতি এবং বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে।

এই সব কাজের উপরে কারা নজরদারি রাখবেন সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে রাজ্য বিজেপির নির্দেশাবলিতে। প্রতিটি লোকসভা আসনকে বিজেপি সাংগঠনিক ভাবে জেলা বিবেচনা করে। এক একটি লোকসভা এলাকায় থাকে গড়ে ৩০টি মণ্ডল। প্রতিটি মণ্ডলে এক জন করে ‘বুথ সশক্তিকরণ অভিযান’ প্রমুখ থাকবেন। মণ্ডল সভাপতি ছাড়া যে কেউ এটা হতে পারেন। শাখা সংগঠন ও মোর্চার নেতারাও দায়িত্ব পেতে পারেন।

সব শেষে বলা হয়েছে, যেখানে যাঁরা দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের নাম ‘সরল’ (সংগঠন রিপোর্টিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস) অ্যাপে ‘আপলোড’ করতে হবে। যা থেকে রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় নেতারা এক নিমেষে বুঝে যাবেন কারা, কী কাজ করছেন। একই সঙ্গে দলের কর্মীদের বয়স, পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা সবই থেকে যাবে দলীয় সার্ভারে। যা ভোটের প্রচারে বা অন্য কাজে লাগাতে চায় বিজেপি।

জেলায় জেলায় এই নির্দেশ পৌঁছে গেলেও বিজেপির রাজ্য নেতারা এখনই এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেন না। এ ব্যাপারে রাজ্যস্তরের এক নেতা বলেন, ‘‘বুথ সশক্তিকরণ অভিযান আমরা শুরু করছি ঠিকই, কিন্তু তাতে কী কী থাকবে তা একান্ত ভাবেই দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’’ একই সঙ্গে ওই নেতা দাবি করেন, রাজ্যে অতীতের তুলনায় বুথস্তরের শক্তি বিজেপি অনেকটা বাড়িয়ে ফেলেছে। এ বার সেটা একটা নিয়মের মধ্যে ফেলে আরও শক্তিশালী করাই লক্ষ্য।

এতটা ভাবা হয়ে গেলেও বিজেপির অন্দরে একটাই চিন্তা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঠিক করে দেওয়া ‘আদর্শ’ বুথ তৈরি করার জন্য এত মানুষ সব জায়গায় পাওয়া যাবে তো! তবুও বুথস্তরে শাসক তৃণমূলের যে শক্তি রয়েছে তার মোকাবিলা করার মতো সংগঠন তৈরি করতে মরিয়া বিজেপি নেতৃত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement