নন্দিনী চক্রবর্তীর পরিবর্তে তিনটি নামের প্রস্তাব রাজভবনকে পাঠিয়েছে নবান্ন। ফাইল চিত্র।
রাজ্যপালের প্রধান সচিব পদ থেকে নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেওয়ার পরে ফাঁকাই রয়েছে সেই পদ। এখন নতুন করে কাকে ওই দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে, তার জন্য তিনটি নামের প্রস্তাব রাজভবনকে পাঠিয়েছে নবান্ন। এঁরা হলেন অত্রি ভট্টাচার্য, বরুণকুমার রায় এবং অজিতরঞ্জন বর্ধন। এঁরা এই মুহূর্তে যথাক্রমে সুন্দরবন বিষয়ক দফতর, শ্রম দফতর এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে অত্রি অতীতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন।
তবে সেই তিন নামের পরিবর্তে চতুর্থ একজনকে পছন্দ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। তিনি সুব্রত গুপ্ত। এখন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যানপালন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব পদে রয়েছেন। নিজের পছন্দের কথা রাজ্যপাল নাকি নবান্নকে জানিয়েও রেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে নবান্নের পাঠানো নামের তিন জনের মধ্যে এক জনকে আনন্দ বেছে নেবেন, না কি চতুর্থ সুব্রতকে পাওয়ার জন্য অনড় থাকবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তবে চতুর্থ নাম নিয়ে আলোচনার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নবান্ন বা রাজভবনের পক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও ঘোষণা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে নন্দিনীকে রাজভবন থেকে সরিয়ে পর্যটন দফতরে পাঠায় নবান্ন। যদিও তার দিন তিনেক আগেই রাজ্যপালের পক্ষ থেকে নন্দিনীকে সরিয়ে দেওয়ার বার্তা জানানো হয়ে গিয়েছিল। এর পরে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী প্রধান সচিবের জন্য নবান্নের তিনটি নাম রাজভবনকে পাঠানোর কথা। সেই মতো তিন জন আইএএস-এর নাম পাঠানো হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। যে তিন জনের নাম নবান্ন প্রস্তাব করেছে তাঁদের সকলের উপরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরবার ভরসা দেখিয়ে এসেছেন। তাই যে কারণে নন্দিনীকে সরানোর বার্তা দিয়েছিলেন আনন্দ সেই একই কারণে নবান্নের পাঠানো তিনটি নামই অপছন্দ হতে পারে রাজভবনের। নন্দিনীকে সরানোর নেপথ্যে অন্যতম কারণ ছিল বিজেপির পক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠা। এখন নবান্নের পছন্দের কেউ নন্দিনীর জায়গায় এলে ফের বিরোধিতা হতে পারে। সে কারণে নবান্নও বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যপাল এই তিনটি নামের মধ্যে কোনওটি চূড়ান্ত না করলে আনন্দের পছন্দের আইএএস-কে রাজভবনে পাঠানো যায় কি না, সে ভাবনাও রয়েছে নবান্নের।
সাধারণ ভাবে রাজ্য সরকার মনোনীতদের মধ্য থেকেই প্রধান সচিব বাছার রেওয়াজ রয়েছে। তবে তার বদলে অন্য কাউকে বেছে নেওয়ার নজির নেই, তা-ও বলা যাবে না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সুব্রতের নাম নিয়ে জোর চর্চা চলছে। তবে তাঁকেই রাজ্যপালের কেন পছন্দ, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। কারণ, চতুর্থ জন যে মুখ্যমন্ত্রীর একেবারে ভরসার নন, তা-ও নয়।
নন্দিনীর আগে রাজভবনে প্রধান সচিব পদের দায়িত্ব সামলেছেন সুনীলকুমার গুপ্তা। জগদীপ ধনখড় তাঁকে এতটাই পছন্দ করতেন যে, তিনি উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে সুনীলকে নিয়ে যান দিল্লি। এর পরে লা গণেশন অস্থায়ী রাজ্যপাল হলে আসেন নন্দিনী। পরে আনন্দ এলে তিনিই দায়িত্ব সামলাতে থাকেন। তবে পরে রাজভবন সূত্রে জানা যায়, কিছু কিছু বিষয়ে আনন্দের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় বোসের অপছন্দ হয়ে ওঠেন নন্দিনী।
প্রথম দিকে পছন্দের রাজ্যপাল হিসাবে আনন্দকে নিয়ে তৃণমূল শিবির যতটা উৎসাহিত ছিল, তা এখন আর নেই। কোচবিহারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের উপরে হামলার ঘটনায় রবিবারই কড়া বিবৃতি দিয়েছেন আনন্দ। নবান্নের থেকে রিপোর্টও তলব করেছেন। সেই পরিস্থিতিতে নন্দিনীর উত্তরসূরি বাছা নিয়ে নতুন করে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, সেটাই দেখার। নবান্ন এবং রাজভবন অনড় মনোভাব দেখালে সেটা অবশ্যম্ভাবী।