গণপ্রহারে শাস্তির বিধান দিয়ে আইন তৈরি করতে চলেছে রাজ্য সরকার।—ফাইল চিত্র।
গণপ্রহারের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করে এবং শাস্তির বিধান দিয়ে আইন তৈরি করতে চলেছে রাজ্য সরকার। যে কোনও অছিলায় গণপ্রহারে জড়িত ব্যক্তিরা তো বটেই, নেপথ্যে থেকে কেউ গণপ্রহারের ঘটনায় মদত বা চক্রান্তে সামিল হলে সে ক্ষেত্রেও শাস্তির বিধান থাকছে নতুন বিলে।
ধর্ম, জাত বা খাদ্যাভ্যাসের দোহাই দিয়ে দেশের নানা প্রান্তে ইদানীং বেড়েছে গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনা। তার প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট সব রাজ্য সরকারকে এই বিষয়ে আইন প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে। বিজেপি-শাসিত কোনও রাজ্যের আগেই কংগ্রেস-শাসিত রাজস্থান এই মর্মে বিল এনেছে। এ বার তৃণমূলের সরকারও সেই রাস্তায় হাঁটল। বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই আগামী শুক্রবার পেশ হওয়ার কথা ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল (প্রিভেনশন অব লিন্চিং) বিল, ২০১৯’। সেখানে অপরাধীদের শাস্তির পাশাপাশি গণপ্রহারের প্রবণতা রুখতে রাজ্য স্তরে ডিজি, কমিশনারেটে পুলিশ কমিশনার এবং জেলায় পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কো-অর্ডিনেটর এবং নোডাল অফিসার নিয়োগ করে নিয়মিত নজরদারি চালানোর।
বিলে বলা হয়েছে, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জন্মস্থান, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, যৌনরুচি, রাজনৈতিক বিশ্বাস, জাতিসত্তা বা অন্য কোনও কারণে দুই বা তার চেয়ে বেশিসংখ্যক ব্যক্তি কারও প্রতি হিংসাত্মক আচরণ করলে বা হিংসায় প্ররোচনা দিলে তাকে ‘গণপ্রহার’ বলে গণ্য করা হবে। একই সঙ্গে ছাপার অক্ষরে বা সামাজিক মাধ্যমে বিকৃত, উস্কানিমূলক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই ধরনের ঘটনায় অপরাধী চিহ্নিতকরণ ও শাস্তির প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার স্বার্থে সাক্ষীরা চাইলে তাঁদের পরিচয় গোপন রাখার সংস্থানও বিলে থাকছে।
মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য, গণপ্রহারের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে এই বিল আনা হচ্ছে। বিলের লক্ষ্য বা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী ও কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তীর দাবি, আইনের ‘অপব্যবহার’ যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখা প্রয়োজন।
গণপ্রহারে আক্রান্তকে যে কোনও সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বলেছে বিল। ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকারি নিয়মানুযায়ী আক্রান্ত ক্ষতিপূরণও পাবেন।
রাজ্য পুলিশের আইজি পদমর্যাদার এক জন অফিসারকে নোডাল অফিসার হিসাবে নিয়োগ করবেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। কলকাতায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার এক জন নোডাল অফিসার হবেন। এই ধরনের ঘটনার আঁচ পেতে মাসে এক দিন গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে নোডাল অফিসারেরা বৈঠক করবেন।