প্রকল্প বনাম প্রকল্প। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
তৃতীয় তৃণমূল সরকারের প্রথম প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নিয়ে রাজ্যজুড়ে বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সেটা নিয়ে রাজনৈতিক চাপও বাড়াচ্ছে তৃণমূল। এমন পরিস্থিতির মোকাবিলায় বাংলার বিজেপি তুলে ধরতে চাইছে অসম সরকারের ‘অরুণোদয়’ প্রকল্পকে। বিজেপি-র বক্তব্য, বাংলার তুলনায় অসমের বিজেপি সরকার অনেক ভাল প্রকল্প চালায় এবং এ বার তাতে টাকার পরিমাণও বাড়ছে।যদিও এমন দাবিতে বাংলায় বিজেপি কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই মনে করছে তৃণমূল।
গত ১০ মে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। হিমন্ত সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে শুক্রবার একগুচ্ছ নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অসম মন্ত্রিসভা। তার মধ্যেই বলা হয়েছে, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ‘অরুণোদয়’ প্রকল্পে রাজ্যের দরিদ্র পরিবার পিছু মাসে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এখন এই প্রকল্পে মাসিক ৮৩০ টাকা করে পাওয়া যায়। শুক্রবার হিমন্ত মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মতো প্রতি মাসের ১০ তারিখে দরিদ্র পরিবারের নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা দেবে সরকার। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে ধাপে ধাপে ওই অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে মাসিক তিন হাজার টাকা করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে অসমে এই প্রকল্প শুরু হয়। তখন সর্বানন্দ সোনোয়াল সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন হিমন্ত।
বাংলায় ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকেই নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ অনেকেই এটিকে তৃণমূলের ‘কাটমানি’ আদায়ের নতুন কায়দা বলে কটাক্ষ করে। প্রসঙ্গত রাজ্যের ঘোষণা মতো, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে গৃহবধূরা মাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন। তফসিলি জাতি এবং জনজাতিভুক্ত গৃহবধূদের ক্ষেত্রে এই অনুদানের পরিমাণ ১ হাজার টাকা। ২৫-৬০ বছর বয়সের মহিলারা আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে স্থায়ী সরকারি চাকরিরত, পেনশনভোগী, স্বশাসিত সংস্থা, সরকার অধিগৃহীত সংস্থা, পঞ্চায়েত, পুরসভার কর্মী এবং যে সব শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা স্থায়ী বেতন বা পেনশন পান, তাঁদের স্ত্রীরা এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন না।
সরকারের এই ঘোষণা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘ভোটের আগে তৃণমূলের ইস্তাহারে যা বলা হয়েছিল তার সঙ্গে এই প্রকল্পের কোনও মিল নেই।’’ তাঁর দাবি, রাজ্যের ১ কোটি ৬০ লাখ পরিবারের মহিলাদের সুযোগ দেওয়ার কথা ছিল। তাতে ৫ কোটি বধূর এই প্রকল্পের আওতায় টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে রাজ্যে ১ কোটি ৫৮ লাখ মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের আওতায় আসবেন। এই দাবি জানানোর পাশাপাশি শুভেন্দু বলেন, ‘‘বিজেপি চায়, রাজ্যের সকল মহিলাকেই এই প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হোক।’’
এ হেন পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপি অসমের উদাহরণকে সামনে রেখে বাংলাতেও প্রচার হোক। ইতিমধ্যেই দলীয় বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে এখনই ঘোষিত কোনও কর্মসূচি নেই দলের। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘রাজ্যের লক্ষ্মীর ভান্ডারের সঙ্গে তুলনার কোনও বিষয় নেই। শুধু অসম নয়, বিজেপিশাসিত যে কোনও রাজ্যের প্রকল্পের সঙ্গে বাংলার তুলনা হয় না। আকাশ আর পাতাল সম্পর্ক। বাংলায় যা প্রকল্প তার সবই দলীয় নেতাদের টাকা তোলার সুবিধা করে দেওয়া। ইতিমধ্যেই তার অনেক প্রমাণ সামনে এসেছে।’’ বিজেপি কি অসমের প্রকল্পকে সামনে রেখে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর বিরুদ্ধে প্রচারে নামবে? সায়ন্তন বলেন, ‘‘প্রচারের দরকার নেই। মানুষ সব দেখতে পাচ্ছে। কোনটা আকাশ আর কোনটা পাতাল সাধারণ মানুষ বোঝে। কোনও সরকারই নিজের টাকা দেয় না। সাধারণের থেকে পাওয়া রাজস্ব থেকেই দেয়। কিন্তু সেই দেওয়াটায় কতটা সদিচ্ছা এবং স্বচ্ছতা রয়েছে ফারাকটা সেখানেই।’’
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা বিধানসভায় দলের উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায় বলেন, ‘‘মোকাবিলা করবে কী করে। সবই তো আমাদের অনুকরণ। এই রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে যত রকমের সুযোগসুবিধা দিয়েছেন তার কোনও অতীত নজির নেই। কেন্দ্রেরও এত প্রকল্প নেই। ফলে বিজেপি কী প্রচার করল তা নিয়ে আমাদের ভাবনাও নেই।’’