Oxygen

Oxygen Availability: মুনাফাবাজদের এড়িয়েই সুলভ অক্সিজেনে জোর

প্রশাসনের শীর্ষ মহলের নির্দেশ, সুলভ পদ্ধতির অক্সিজেন পেতে ১৫ জানুয়ারি থেকে রাজ্যের সব পিএসএ প্ল্যান্ট সক্রিয় করতেই হবে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৩৯
Share:

ফাইল চিত্র।

পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখা কত জরুরি, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপটের সময়ে সেটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশ। আবার প্রয়োজন ব্যাপক বলেই অক্সিজেন নিয়ে বিপুল মুনাফার ফন্দিফিকির চলছে কি না, তা নিয়ে এখন জোর চর্চা প্রশাসনিক শিবিরে। প্রশাসনের শীর্ষ মহলের নির্দেশ, সুলভ পদ্ধতির অক্সিজেন পেতে ১৫ জানুয়ারি থেকে রাজ্যের সব পিএসএ প্ল্যান্ট সক্রিয় করতেই হবে।

Advertisement

জোগানের পদ্ধতি যেমনই হোক, অক্সিজেন এক এবং অদ্বিতীয়। প্রথম পদ্ধতিতে অক্সিজেন পাওয়ার উপায়, বাতাস থেকে অন্য গ্যাস ছেঁকে বাদ দিয়ে সরাসরি তার জোগান দেওয়া। তাতে খরচও কম। এর পোশাকি নাম ‘প্রেশার সুইং অ্যাডসর্পশন’ বা পিএসএ। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে প্রথমটির মতোই জোগান নিরবচ্ছিন্ন। তরল অক্সিজেন প্ল্যান্টে ঢেলে বাষ্পীভূত করে রোগীদের নাকে পৌঁছে দিতে হয় বলে এই পদ্ধতিতে অক্সিজেন তৈরির খরচ তুলনায় কিছুটা বেশি। এর পোশাকি নাম ‘লিকুইড মেডিক্যাল অক্সিজেন’ বা এলএমও। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেন্দ্রের নির্দেশ এবং রাজ্যের অবস্থানে স্পষ্ট ছিল, কম খরচে অক্সিজেন মেলায় অগ্রাধিকার দিতে হবে পিএসএ-কে। তাতে যদি একান্তই না-কুলোয়, তখন বাধ্য হয়েই ঝুঁকতে হবে এলএমও-র দিকে।

কিন্তু রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় পিএসএ-র বদলে এলএমও পদ্ধতি প্রয়োগের প্রবণতা শুরু হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, কোভিড অতিমারিতে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বলেই গোটা রাজ্য প্রশাসনে খরচ নিয়ন্ত্রণের বিধি কঠোর ভাবে বলবৎ করেছে সরকার। এই অবস্থায় সরকারি হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করতে বেশি খরচ করা হবে, না, সুলভে পাওয়া অক্সিজেন রোগীদের বাঁচাতে সাহায্য করবে, তা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। এক পর্যবেক্ষক বলেন, “এলএমও ব্যবহারের অর্থ, লিকুইড অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি। কোনও বেসরকারি সংস্থা থেকে তা সংগ্রহ করার দরকার পড়বে। খরচ বাড়বে সরকারের। অথচ পিএসএ থেকে প্রায় নিখরচায় এই অক্সিজেন পাওয়া সম্ভব।”

Advertisement

কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গে রাজ্য তথা গোটা দেশেই অক্সিজেনের চাহিদা চরমে ওঠে। অক্সিজেনের জন্য কোভিড রোগীদের নিত্য হাহাকারের পাশাপাশি সমানে চলে প্রাণহানি। তখনই স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের পরিকাঠামো তৈরির উপরে জোর দেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেন তৈরির স্থায়ী পরিকাঠামোর জন্য পিএসএ এবং এলএমও প্ল্যান্ট বসানোর কাজ শুরু হয় তখনই। ৬৭টি পিএসএ পরিকাঠামো পায় বাংলা। তার মধ্যে কেন্দ্র দিয়েছিল ৪৯টি এবং অনুদান ও সিএসআর বাবদ পাওয়া যায় ১৮টি। প্রশাসনের অন্দরের খবর, ৬৭টির মধ্যে রাজ্যে এখন কাজ করছে ১৯টি পিএসএ। কয়েকটি জায়গায় প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় তার সুরাহার জন্য ডিআরডিও-কে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পিএসএ এবং এলএমও পরিকাঠামো রাখা বাধ্যতামূলক। বঙ্গে ১৮-২০টি এলএমও প্লান্ট রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, অভিযোগ এসেছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক এবং কোচবিহারের একটি হাসপাতাল থেকে। সেখানে পিএসএ থাকা সত্ত্বেও এলএমও ব্যবহারের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছিল। অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকের ধারণা, কেন্দ্রের নির্দেশের পরে যে-হেতু রাজ্য স্তর থেকে দ্রুত সব পিএসএ চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাই এর পরে প্রথা মেনে আগামী দিনে অগ্রাধিকার পাবে সেই পরিকাঠামো। সংশ্লিষ্ট মহল আরও জানাচ্ছে, এতে আখেরে লাভ হবে রাজ্যেরই। কারণ, এমনিতে রাজ্যকে কোভিড, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন খাতে যে-খরচ করতে হচ্ছে, তাতে অক্সিজেনের খরচ কিঞ্চিৎ বাঁচানো গেলে কিছুটা চাপমুক্ত হবে কোষাগার।

কয়েক দিন আগে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের নতুন পরিকাঠামোর ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক মঞ্চে ছিলেন। সেই বৈঠকে কোভিড পরিকাঠামো তৈরিতে রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্র কতটা সহযোগিতা করছে, তার সবিস্তার বিবরণ দেন মোদী। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ঘটনাচক্রে সম্প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশ এসেছে, দ্রুত সব পিএসএ চালু করতে হবে। তার পরে প্রশাসনিক নির্দেশ আসে, ১৫ জানুয়ারি থেকে সব পিএসএ চালু করতেই হবে।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণ রোগীদের কারও অক্সিজেনের দরকার হলে গড়পরতা মিনিটে ১৫-২০ লিটার অক্সিজেন দিতে হয়। আইসিইউ রোগীদের ক্ষেত্রে তা মোটামুটি প্রতি মিনিটে ৩০-৪০ লিটার হয়ে থাকে। ভেন্টিলেটরে যে রোগীদের থাকতে হয়, তাঁদের জন্য সাধারণত প্রতি মিনিটে ৫০-৬০ লিটার অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। অবশ্য স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী অক্সিজেনের পরিমাণ এবং তা দেওয়ার সময় নির্ভর করে। তবে প্রতিটা ক্ষেত্রেই নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হয়। তা ব্যহত হলে রোগীর সমস্যা বাড়তে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement