শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার অনুপস্থিত ছিলেন উপাচার্য শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি জানিয়ে দিলেন, আপাতত আর ক্যাম্পাসমুখী হবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি নিগৃহীত হতে পারেন, এই আশঙ্কায় আপাতত বাড়ি থেকেই কাজ করতে চান শুভ্রকমল। ইতিমধ্যে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কার কথা তিনি লিখিত ভাবে পুলিশ এবং রাজভবনকে জানিয়েছেন। রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস সমস্ত কিছু জানার পরে আপাতত বাড়ি থেকেই তাঁকে কাজের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নিরাপত্তার উপযুক্ত ব্যবস্থা না-হওয়া পর্যন্ত আমি যাব না। বাড়ি থেকেই কাজ করব। নিরাপত্তার জন্য কী কী করতে হবে সবটাই রেজিস্ট্রারকে জানিয়েছি।’’
গত ৫ জুলাই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে শুভ্রকমলের নাম ঘোষণা করেন রাজ্যপাল বোস। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সমস্যা চলছে। এর আগে রবীন্দ্রভারতীতে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য ছিলেন নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তী। তাঁর মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর প্রায় দু’মাস বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যহীন ছিল। প্রাক্তন উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে তাঁকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। রাজ্যপাল সেই অনুরোধ মেনে নিয়ে নির্মাল্যকে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করেন। নির্মাল্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কর্নাটক হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি শুভ্রকমলকে দায়িত্ব দেন বোস।
তবে রাজ্য সরকার এই নিয়োগের বিরোধিতা করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংগঠনও এর বিরোধিতা করে। আর তা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সঙ্গে সংঘাতের আবহ তৈরি হয় বলে দাবি করেছেন উপাচার্য। শুভ্রকমল বলেন, ‘‘ওঁরা ভুলে গিয়েছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা রাজ্য সরকারের নয়। রাজ্য অর্থ দিলেও আসলে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কর্মী।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘আমায় যে কোনও ভাবে পদত্যাগ করাতে চাইছে কর্মচারী সংগঠন। গত শুক্রবার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, আমি ভয় পেয়ে যাই। সে দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বৈঠক ছিল। তার পরে চাপ তৈরি করে আমাকে দিয়ে ইস্তফাপত্র লিখিয়ে নেওয়া হবে বলে মনে হতেই বৈঠক শেষে আমি কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর)-কে ফোন করি। তিনি লিখিত ভাবে অভিযোগ জমা দিতে বলেন। সেই মতো সিঁথি থানায় অভিযোগপত্র পাঠিয়ে দিই। এর পরে সাদা পোশাকের পুলিশ এসে আমায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার করে আনে। এর পরে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইনি।’’
কেন তাঁকে নিয়ে সমস্যা, কারাই বা তাঁর উপরে চাপ দিচ্ছেন? শুভ্রকমল বলেন, ‘‘তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠন এগুলি করছে। ওঁরা যে তৃণমূলের, তার প্রমাণ, সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে স্লোগান দেন। ওঁদের সংগঠনের প্রধান নেতা রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুইয়াঁ।’’ এ বিষয়ে রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক মানসকে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে ফোন করা হলে তিনি কোনও জবাব দিতে চাননি। শুধু বলেন, ‘‘আমি বাইরে রয়েছি। বিষয়টা জানা নেই। জানার পরে যা বলার বলব।’’
শুভ্রকমলের দাবি, রাজভবন নিয়োগ করছে বলেই তাঁকে নিয়ে আপত্তি কর্মচারী সংগঠনের। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল আমাকে নিয়োগ করেছেন। তাই আমাকে সরাতে হলে তো রাজ্যপালকে বলা উচিত। আর আমি যেটা জানি যে, আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতেই আমাকে নিয়োগ করা হয়েছে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য। ১৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানি। সেই সময় পর্যন্ত তো অপেক্ষা করা উচিত। কিন্তু তাতে কেউ কান দিচ্ছেন না।’’
এ হেন পরিস্থিতিতে আপাতত নিজের বাড়িকেই ‘দফতর’ বানিয়ে নিয়েছেন শুভ্রকমল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুবীর মৈত্রকে কয়েকটি ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সে সব ব্যবস্থা হওয়ার পরেই যাবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুভ্রকমল চাইছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে লোহার গ্রিল লাগাতে হবে। উপাচার্যের দফতর এক তলা থেকে দোতলায় নিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে ওই ভবনে সিসি ক্যামেরা এবং সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে হবে। যদিও তিনি এটা মানছেন যে, হেরিটেজ তালিকায় পড়া রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনগত পরিবর্তন খুব সহজ নয়। এর জন্য হেরিটেজ কমিশনকেও জানিয়েছেন শুভ্রকমল।