ছবি : সংগৃহীত।
সাধারণতন্ত্র দিবসের সন্ধ্যায় প্রতি বছরই বিদেশ থেকে আসা প্রধান অতিথির সম্মানে একটি অনুষ্ঠানের আয়েজন করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। সেই অনুষ্ঠান হয় রাষ্ট্রপতির বাসভবন, অর্থাৎ রাইসিনা হিলসে। বিদেশ থেকে আসা অতিথিরা তো বটেই, দেশের গণ্যমান্যেরাও আমন্ত্রিত থাকেন ওই অনুষ্ঠানে। আর তাঁদের আপ্যায়নে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকে ঢালাও খাওয়াদাওয়া এবং মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা। প্রতি বছরই সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কোনও বিশেষ ভাবনাকে মাথায় রেখে। এ বছর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলির রীতিতে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হবে। এমনকি, অতিথিদের ওই অনুষ্ঠানে আসতে বলে যে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্রপতি মুর্মুর তরফে তাতেও রয়েছে দক্ষিণ ভারতের শিল্পের ছোঁয়া।
কী কী রয়েছে সেই আমন্ত্রণপত্রে? অতিথিদের কাছে যে আমন্ত্রণপত্রটি পৌঁছেছে, সেটি আসলে একটি বেত এবং বাঁশের বাক্স। যার উপরে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের কলমকারি নকশার কারুকাজ। ভিতরে রাষ্ট্রপতি ভবনের আমন্ত্রণের চিঠিটি ছাড়া রয়েছে তেলঙ্গনার পোচমপল্লি ইক্কতের কাপড়ের একটি জরুরি কাগজ রাখার ফাইল, তামিলনাড়ুর কাঞ্জিভরম সিল্কের একটি বটুয়া, কর্নাটকের গঞ্জিফা চিত্রশৈলীতে আঁকা একটি কাঠের তৈরি ফ্রিজ ম্যাগনেট। কেরলের বেতের নকশার বুকমার্ক এবং এক জোড়া অন্ধ্রের ইটিকোপ্পাকা পুতুল। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে খবর, দক্ষিণের ওই পাঁচটি রাজ্যের সংস্কৃতিকেই বিদেশ থেকে আসা অতিথি এবং দেশের অন্য প্রান্তের বিশিষ্টদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু নিজেই।
রাষ্ট্রপতি ভবনে সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র। ছবি: সংগৃহীত।
এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতি ভবনে সে দিনের অতিথি তালিকায় বিশেষ ভাবে নজর কাড়বেন দক্ষিণের রাজ্যের শিল্পজগতের তারকারা। রাষ্ট্রপতি ভবনের এক সূত্রের কথায়, ‘‘সাধারণততন্ত্র দিবসে রাষ্ট্রপতি ভবনের ওই অনুষ্ঠান অতিথিরা দক্ষিণ ভারতকে স্বাদে, গন্ধে, শ্রবণে এবং দর্শনে পুরোপুরি অনুভব করতে পারবেন।’’
শুধু তা-ই নয় অতিথিদের রাইসিনায় স্বাগত জানানোর সময় থেকে শুরু করে তাদের বিদায় পর্ব— সব কিছুতেই থাকবে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির ছাপ। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সাধারণতন্ত্র দিবসের সন্ধ্যায় রাইসিনা হিলসে অতিথিদের স্বাগত জানাবেন দক্ষিণের প্রতিটি রাজ্যের প্রতিনিধি এক এক জন দম্পতি। তাঁদের পরনে থাকবে সেই রাজ্যের আঞ্চলিক এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক। খাওয়াদাওয়া ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের কথা ভাবাই যায় না। রাষ্ট্রপতি ভবনের খাওয়াদাওয়াতেও থাকবে নানা রকম দক্ষিণ ভারতীয় স্বাদের বাহার। শুধু ইডলি, দোসা, সম্বর, উত্তপমের মতো চেনা নাম নয়। দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্যের নিজস্ব কিছু ব্যতিক্রমী রান্নাবান্নাও রয়েছে। সেই সব খাবারও থাকবে রাইসিনার নৈশভোজের আসরে।
অতিথিদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও থাকবে রাইসিনায়। দক্ষিণ ভারতের বৈচিত্রময় সংস্কৃতি এবং শিল্পের ছোঁয়া দেখতে পাবেন অতিথিরা। থাকবে কথাকলি, পড়য়নি, কুচিপুড়ি, ভারতনাট্যম, যক্ষগানের মতো লোকনৃত্যের প্রদর্শন।
এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো প্রধান অতিথি হিসাবে আসছেন ভারতে। সম্প্রতি দক্ষি-পূর্ব এশিয়ার আরও এক দেশে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্টও ভারত সফরে রয়েছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রনেতারা এর আগেও ভারতে এসে বলেছেন, দক্ষিণ ভারতের শিল্প-কলা-লোকনৃত্যের সঙ্গে তাঁদের দেশের মিল খুঁজে পান তাঁরা। হয়তো সে কথা মাথায় রেখেই প্রধান অতিথির সম্মানে ভারতের দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চান রাষ্ট্রপতি মুর্মু।