গিরিরাজ সিংহ (বাঁ দিকে) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। — ফাইল চিত্র।
বঞ্চনার অভিযোগের জবাবে দুর্নীতির পাল্টা অভিযোগে তুলে সিবিআই তদন্তের বার্তা। সোমবার গান্ধীজয়ন্তীতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নয়াদিল্লিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ধর্না কর্মসূচির দিনেই বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ তুললেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ। সেই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, ‘‘এ নিয়ে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করার সময় এসে গিয়েছে।’’ যার জবাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিবিআই তদন্ত হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’ কিন্তু সেই তদন্ত আদালতের পর্যবেক্ষণে হতে হবে বলে জানান অভিষেক।
একশো দিনের কাজের প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পশ্চিমবঙ্গ সরকার নয়ছয় করেছে বলে অভিযোগ তুলে গিরিরাজ বলেন, ‘‘২৫ লক্ষ ভুয়ো ‘জব কার্ড’ তৈরি করানো হয়েছে। সেই টাকা চুরি করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছি, গরীবের টাকা ফেরত দিন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পের অন্তর্গত বক্ষরোপণ কর্মসূচির গাছ ‘হাতিতে খেয়ে নিয়েছে’ বলে অসত্য ব্যাখ্যা দিয়ে টাকা চুরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় যাঁর দোতলা বাড়ি রয়েছে তিনি টাকা পেয়েছেন। অন্য দিকে, প্রকৃত গরীব যাঁর আবাস যোজনার টাকা প্রাপ্য, বঞ্চিত হয়েছেন।’’
নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে দিল্লিতে তৃণমূলের ধর্না-কর্মসূচিকে নিশানা করে সোমবার গিরিরাজ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কোনও বঞ্চনা করা হয়নি। বরং ইউপিএ জমানার তুলনায় বর্তমান সরকারের আমলে অনেক বেশি অর্থ দেওয়া হয়েছে।’’ বিহারের বিজেপি নেতা গিরিরাজের দাবি, ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বাংলাকে ৫৪ হাজার ১৫০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। ইউপিএ আমলে দেওয়া হয়েছিল ১৪ হাজার কোটি টাকা।
এর পরে গিরিরাজ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আমরা পশ্চিমবঙ্গকে ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি, প্রথমে ৪৫ লক্ষ এবং তার পর আরও ১১ লক্ষ বাড়ি বানানোর টাকা দেওয়া হয়েছে। ইউপিএ আমলে দেওয়া হয়েছিল ৫,৪০০ কোটি টাকা। সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ১১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। ইউপিএ সরকার দিয়েছিল মাত্র ৪,৪০০ কোটি।’’ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দিল্লিতে তৃণমূল বিক্ষোভ কর্মসূচির নামে তাঁর দফতরে হামলার পরিকল্পনা করেছে বলে অভিযোগ করেন গিরিরাজ।
দিল্লির রাজঘাটে দাঁড়িয়ে অভিষেক সোমবার বিজেপির তোলা ‘দুর্নীতি’র অভিযোগের জবাব দেন। জানান, সিবিআই তদন্তে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু বিজেপির দাবি মোতাবেক চারটি জেলায় দুর্নীতি হয়ে থাকলে বাকি ১৬টি জেলায় কেন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। সেই সঙ্গে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে চার শিশু-সহ পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘গিরিরাজ ব্যঙ্গ এবং অহং না দেখালে ফুলের মতো শিশুদের মৃত্যু হত না।’’
প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে বিষ্ণুপুরের বড়ামারা গ্রামে বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় অঙ্কুশ সর্দার (৩), নিশা সর্দার (৪) ও রোহন সর্দারের (৫)। মৃতদের পরিবারের দাবি ছিল, আবাসের তালিকায় নাম থাকলেও টাকা না মেলায় পাকা বাড়ি গড়া যায়নি। বাঁকুড়ার ছাতনা ও পুরুলিয়ার কেন্দায় রবিবার আবার দু’টি পৃথক ঘটনায় ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে পূরবী হাঁসদা (৬৮) এবং আরও একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দু’ক্ষেত্রে পরিবারের নাম আবাস যোজনার তালিকায় রয়েছে, জানাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। ওই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনেই দিল্লি যাওয়ার পথে রবিবার কলকাতা বিমানবন্দরে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘তিনটি ফুলের মতো শিশু মারা গিয়েছে। মাটির কাঁচা দেওয়াল ভেঙে মারা গিয়েছে তারা। এর দায় কার? বিচার ব্যবস্থার কাছে আবেদন করেছি। এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত।’’ পাশাপাশি, গিরিরাজের গ্রেফতারিরও দাবি তোলেন তিনি।