বাংলার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগে এবং রাজ্যের প্রাপ্য আদায়ের দাবি নিয়ে পথে তৃণমূল। বাংলাতে লাগাতাড় আন্দোলনের পরে এখন দিল্লিতেও সেই আন্দোলনের ঢেউ। বারবার উঠছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন উন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের নাম। বিজেপি সূত্রে জানা যায়, গিরিরাজকে খুবই পছন্দ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই বারবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় গুরুত্ব বেড়েছে তাঁর।
গিরিরাজ বারবার রাজ্যকে জানিয়েছেন কেন তিনি কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাবদ বাংলার বকেটা অর্থ আটকে রেখেছেন। চিঠিও পাঠিয়েছেন রাজ্যকে। ফলে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের চলতি বিবাদে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের নাম গিরিরাজ। যিনি মোদী মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে রয়েছেন।
গত অগস্টেই গিরিরাজের লেখা চিঠি নিয়ে উত্তপ্ত হয় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। বিধানসভায় বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বঞ্চনা’ নিয়ে আলোচনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর একটি চিঠি দেখিয়ে দাবি করেন, রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পাঠানোর অর্থের অপব্যবহার হয়েছে।
অন্য দিক, তৃণমূলের দাবি গিরিরাজ বাংলাকে চাপে রাখতেই বঞ্চিত করছেন। দিল্লি অভিযানের অঙ্গ হিসাবে তিনি গিরিরাজের সঙ্গে দেখা করতে চান বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সামনেই জন্মদিন গিরিরাজের। ৭১ বছর বয়সের গিরিরাজের জন্ম ১৯৫২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। জন্ম হয় বিহারের লখিসরাই জেলার বারাহিয়া শহরে জন্ম।
গিরিরাজের লেখাপড়া বিহারেই। মগদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন ১৯৭১ সালে। এক কন্যার পিতা গিরিরাজ উমা সিংহকে বিয়ে করেন রাজনীতির আসার পরে।
বিহার রাজনীতি থেকে জাতীয় স্তরে উত্থান। প্রথমবার বিধায়ক হন ২০০২ সালে। তবে তিনি ছিলেন বিহার বিধান পরিষদের সদস্য।
বিহারে নীতিশ কুমার মন্ত্রিসভায় গিরিরাজ সদস্য হন ২০০৮ সালে। রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী ছিলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত।
২০১০ সালে দফতর বদল হয় গিরিরাজের। সমবায়ের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ দফতর পান। পশুপালন ও মৎস্য দফতরের মন্ত্রী ছিলেন ২০১৩ সাল পর্যন্ত।
গিরিরাজ ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হন। সে বার তিনি লড়েছিলেন নওয়াদা আসন থেকে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের রাজবল্লভ প্রসাদকে সে বার হারিয়েছিলেন ১, ৪০,১৮৭ ভোটে।
সাংসদ হয়েই মন্ত্রিত্ব পান গিরিরাজ। প্রথম মোদী সরকারে তিনি অবশ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পান ক্ষুদ্র, লঘু ও মাঝারি শিল্প দফতর।
২০১৭ সালে মোদী মন্ত্রিসভায় গুরুত্ব বাড়ে গিরিরাজের। প্রতিমন্ত্রী থাকলেও ক্ষুদ্র, লঘু ও মাঝারি শিল্প দফতরের স্বাধীন দায়িত্ব পান।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসন বদল হয় গিরিরাজের। প্রার্থী হন গুরুত্বপূর্ণ আসন বিহারের বেগুসরাইয়ে। প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন সিপিআই-এর কানহাইয়া কুমার। গিরিরাজ অবশ্য বিপুল জয় পান। ব্যবধান ছিল ৪,২২,২১৭ ভোটের।
এই দফায় মোদী মন্ত্রিসভায় গুরুত্বও বাড়ে গিরিরাজের। পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে পান পশুপালন, দুগ্ধ ও মৎস্য মন্ত্রক। এই মন্ত্রকে ছিলেন ২০২১ সাল পর্যন্ত।
২০২১ সালে মোদী মন্ত্রিসভায় রদবদল হলে আরও গুরুত্বপূর্ণ দফতর পান গিরিরাজ। ওই বছরের ৭ জুলাই থেকে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত রাজ মন্ত্রী রয়েছেন।