ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
দীর্ঘ নীরবতার পরে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে নিজের অবস্থান আবারও স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার নিজের লোকসভা কেন্দ্র পৈলানে আয়োজিত এক সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানেই নিজের নীরবতা ভাঙার পাশাপাশি, লোকসভা ভোটে তাঁর পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে দিলেন। তবে বয়স বাড়লে যে কর্মক্ষমতা কমে এ কথা বার বার উল্লেখ করলেন তিনি। কখনও উদাহারণ হিসেবে নিজের কথা বললেন, কখনও আবার দেখালেন মঞ্চে উপস্থিত বয়স্ক নেতাদের। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব দিলে যে তিনি সাধ্যমতো তা পালনের চেষ্টা করবেন, তাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
অভিষেক বলেন, ‘‘অনেকে বলছে তৃণমূলের মধ্যে নতুন আর পুরনোর দ্বন্দ্ব। আমি আপনাদের বলছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ। কোথাও কোনও দ্বন্দ্বের জায়গা নেই। দল আমাকে যে সুযোগ দিয়েছে, দায়ভার দিয়েছে তা আমি পালন করেছি। দল আমাকে ২০২১ সালে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে বলেছিল। আমি দিয়েছি। দল আমাকে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে নবজোয়ার যাত্রা করতে বলেছিল আমি করেছি। দল আমাকে ২০২৩ সালে দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি নিয়ে দু’কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিল। আমি আমার সীমাবদ্ধ এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে চেষ্টা করেছি। ২০২৪ সালেও দল যদি কোনও দায়িত্ব দেয়, আমি অক্ষরে অক্ষরে সেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত সুসংহত ভাবে দল চালাচ্ছেন, আমার যতটুকু সামর্থ রয়েছে, এক্তিয়ার রয়েছে, ক্ষমতা রয়েছে, সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে। আমি সব দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়াব। এতে দ্বিমত কোথায়?’’
আমি বলেছি, বয়স হলে কর্মক্ষমতা কমে। আমি দু’মাস আড়াই মাস রাস্তায় ছিলাম নবজোয়ার যাত্রার জন্য। আমার বয়স ছিল ৩৬, কিন্তু আমি পারব আড়াই মাস রাস্তায় থাকতে? যখন আমার ৭০ বছর বয়স হবে, পারব না। এটা সত্যি কথা। এটা আপনাকে মানতে হবে। আমার কর্মক্ষমতা আজ যা, ৫৬ বছর বয়স হলে একটু হলেও তো কমবে। আমার ৩৬-৩৭ বছর বয়সের পর ২০ বছর হয়ে গেলে আমার ক্ষমতা একটু হলেও কমে যাবে। ৩০ বছর পর আরও কমবে। ৪০ বছর পর আরও কমবে। এটা ধ্রুব সত্য, অস্বীকার করার কিছু আছে? তার মানে এই না যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছে, আমি দলের আর কোনও কাজ করব না।
দলের নবীন প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁর পুরনো অবস্থান স্মরণ করিয়ে অভিষেক বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দল চালাচ্ছেন। আমাকে যখন দল যে দায়িত্ব দিতে চাইবে, আমি দলের অনুগত সৈনিক হিসাবে, যতদিন শরীরে প্রাণ আছে, গলা কেটে দিলেও, তৃণমূলের সঙ্গে আছি। ‘জয় বাংলা’ আমি যতদিন আছি, ততদিন বলব। এতে অন্তর্দ্বন্দ্ব, এতে দ্বিমত, গৃহদাহ, এ সবের জায়গা কোথায়?’’ তিনি আরও বলেন ‘‘বয়স হলে আমাদের কর্মক্ষমতা কমে। এতে অসুবিধার কি আছে? এই যে আমি যদি দিলীপদা ( দিলীপ মণ্ডল পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী), মোহনদাকে (সাতগাছিয়ার বিধায়ক মোহন নস্কর) বলি আড়াই মাস রাস্তায় থাকতে হবে। তাদের একটু হলেও অসুবিধা তো হবেই। দল বলছে বলে হয়ত থাকবে। কিন্তু অসুবিধা হবে না? সেই তুলনায় আমি যদি একটা ২৫ বছরের ছেলেকে বলি, তা হলে তো তার কিছুটা হলেও কম অসুবিধা হবে। একই জিনিস আমার জন্য প্রযোজ্য। বয়স ৩৬ ছিল বলে আমি করতে পেরেছি, কিন্তু বয়স যখন ৫৬-৬০ হবে তখন আর করতে পারব না। এটাই তো আমি বলতে চেয়েছি।’’
৩০ ডিসেম্বর শনিবার অভিষেক-ঘনিষ্ঠ নেতারা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে তাঁকে ‘সক্রিয়’ হওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, অভিষেক সেই নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটে তিনি শুধু ডায়মন্ড হারবারেই নিজেকে সক্রিয় রাখতে চান। নীতি নির্ধারণ বা সাংগঠনিক কাজ আগের মতো দেখার ক্ষেত্রে তাঁর ‘অপারগতা’ রয়েছে। জানা গিয়েছে, বিনয়ের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠদের আর্জি তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ নিয়েও রবিবার নিজের লোকসভা কেন্দ্রেই তাঁর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
অভিষেকের কথায়, ‘‘২০২৪ সালে আমি নিজে প্রার্থী হলে বাড়তি দায়িত্ব তো থাকবেই। সময় দিতে হবে। আমি যদি ভেবে নিই, আমি অনেক বড় নেতা, আমি লোকসভা দেখব না। যে পঞ্চায়েতের নেতা তাঁকে তো নিজের পঞ্চায়েত দেখতে হবে। তারপর তো আপনি ব্লকের নেতা। ভোটের সময় মানুষগুলোর কাছে পৌঁছনো আপনার দায়িত্ব নয়?’’