ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বাংলার ৪২ লোকসভা কেন্দ্র নয়, ডায়মন্ড হারবারে কেন্দ্রের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়— ঘনিষ্ঠ বৃত্তে এই মর্মেই বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। সে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেই নিজের লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করলেন অভিষেক। তিনি জানিয়ে দিলেন, সাংসদ হিসাবে তাঁর অগ্রাধিকার অবশ্যই ডায়মন্ড হারবার। তবে দল তাঁকে যে ভূমিকায় দেখতে চাইবে, যে দায়িত্ব দেবে, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। নিজেকে দলের অনুগত সৈনিক বলে রবিবার ডায়মন্ড হারবারের পৈলানের মাঠ থেকে অভিষেকের বার্তা, ‘‘নিজের সামর্থ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে যাব।’’ তৃণমূল সাংসদ এ-ও জানিয়েছেন, কেন তাঁর ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ অন্যদের কাছে অনুসরণীয় হবে। বস্তুত, ডায়মন্ড হারবারই বাংলার একমাত্র লোকসভা কেন্দ্র যেখানে আলাদা করে ‘বার্ধক্য ভাতা’ প্রকল্প চালু করলেন সাংসদ অভিষেক।
‘ডায়মন্ড হারবারের প্রবীণ নাগরিকদের শ্রদ্ধার্ঘ্য’ কর্মসূচিতে বেশ কয়েক জন বয়স্ক মানুষের হাতে হাজার টাকার চেক তুলে দিয়ে অভিষেক জানান, গত দু’মাস ধরে এ নিয়ে তাঁরা পরিশ্রম করেছেন। এ বার থেকে ডায়মন্ড হারবারের ৬০ হাজারের বেশি বয়স্ক মানুষকে মাসে হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। তার সূচনা হল রবিবার। অভিষেকের কথায়, ‘‘আমি মনে করি, এই মাননুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানো জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব। গত নভেম্বরে কথা দিয়েছিলাম যে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে বার্ধক্য ভাতা ডায়মন্ড হারবারে চালু করব। ১ তারিখই সভা করতে পারতাম। কিন্তু ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবস। সে দিন অনেক কাজ ছিল।’’ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ জানান, গত দু’মাস ধরে কী ভাবে ডায়মন্ড হারবার ঘুরে ঘুরে ৭৬ হাজার ১২০ জন বয়স্ক মানুষের রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে। তার পর বেছে নেওয়া হয়েছে, কাদের একান্তই বার্ধক্য ভাতা প্রয়োজন। অভিষেক বলেন, ‘‘১৬ হাজার ৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবকের চেষ্টা দেখেছেন। তাতে এই মানুষগুলির ভাতা প্রয়োজন বলে দেখা গিয়েছে।
এঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কী ভাবে হাজার টাকা করে মাসে দিতে পারি, সেটা বড় ব্যাপার। চাইলেই তো হল না। অনেককে এগিয়ে আসতে হবে। গত দু’মাস ধরে এই প্রক্রিয়াটি চালিয়েছে। ১৬,৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক চার জন পাঁচ জন করে দায়িত্ব নিয়েছে। তাঁদের মাধ্যমে প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে মাসে মাসে হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। অভিষেকের দাবি, লোকসভার আগে নিছক প্রচারের জন্য এই প্রকল্প নয়। এই প্রকল্প আগামিদিনে সারা রাজ্যে হতে পারে। তবে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের জন্য সাংসদ হিসাবে তিনি এই কর্তব্য পালন করেছেন। বস্তুত, অভিষেক গত ১০ বছর ধরে সাংসদ হিসাবে ডায়মন্ড হারবারের জন্য তাঁর কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন। কিন্তু এই বার্ধক্য ভাতা কি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য? অভিষেক নিজেই তার জবাব দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে ভাবছেন এক বার তো বার্ধক্য ভাতা দিল, পরের মাসে পাব তো? আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে আমাদের মা-মাটি-মানুষ বার্ধক্য ভাতা চালু করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের উপর আমাদের ভরসা নেই। যেহেতু আমি কথা দিয়েছিলাম, তাই এখানে জানুয়ারি থেকে এখানে শুরু করলাম।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, এমন একটি প্রকল্প সারা ভারতে কোনও সাংসদই করে দেখাতে পারেননি। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নন। নাম না করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও নিশানা করেন। অভিষেক বলেন, ‘‘দেশের আট কোটি মানুষের বয়স ৬০ বছরের বেশি। কেন্দ্র চাইলে কি তাঁদের আর্থিক সাহায্য করতে পারে না? এতে মাসে আট হাজার কোটি টাকার খরচ হবে। আসলে মানসিকতা থাকলে রাস্তা ঠিক বার হয়ে যায়।’’
লোকসভা ভোটের আগে অভিষেক বার বার বুঝিয়ে দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারকে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যে পঞ্চয়েতের নেতা, তাকে তো সেই পঞ্চায়েত দেখতে হবে।’’ শেষে তিনি জানান, বার্ধক্য ভাতার পর এ বার ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন। সাংসদের কথায়, ‘‘৬৬ হাজার লোক রয়েছেন ডায়মন্ড হারবারে, যাঁরা ১০০ দিনের কাজ করে টাকা পায়নি। এক-দু মাসের মধ্যে ব্যবস্থা না হলে সেটাও আমি ডায়মন্ড হারবার দিয়ে শুরু করব।’’