(বাঁ দিকে) শুক্রবার সন্দেশখালিতে ভাঙচুর হওয়া ইডির গাড়ি। শুক্রবার রাতে বনগাঁ থেকে গ্রেফতার হওয়া শঙ্কর আঢ্য (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শুক্রবার সন্দেশখালিতে ইডির আধিকারিকেরা আক্রান্ত হওয়ার পর বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। সেই রাতে গ্রেফতার হয়েছেন বনগাঁ পুরসভা প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো ব্যারাকপুরেও সংসদ সদস্য অর্জুন সিংহ বনাম বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের দ্বন্দ্ব প্রতি দিন বেড়েই চলেছে। এমনই সব দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে চাপে পড়েছে একদা ‘বালুর জেলা’ বলে পরিচিত উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই আবহে সোমবার বৈঠকে বসছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করে দেওয়া কোর কমিটি। গত ২৮ ডিসেম্বর দেগঙ্গাতে আয়োজিত তৃণমূলের এক কর্মিসভায় এই কোর কমিটির ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। একটা সময় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নজর দিয়েই গোটা জেলাকে দেখতেন মমতা। কিন্তু সেই বালুই এখন ইডির হেফাজতে। বালুর অনুপস্থিতিতে তাই মমতা কোর কমিটির গঠন করে দিয়েছেন আগামী লোকসভা নির্বাচন পরিচালনা করতে। কিন্তু এখন সেই কমিটি ব্যস্ত অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটাতেই।
কোর কমিটির তৃণমূলের এক সদস্যের দাবি, “ব্যারাকপুর সন্দেশখালি কিংবা বনগাঁতে যে ঘটনাই ঘটুক না কেন, তার সঙ্গে এই বৈঠকের কোনও যোগাযোগ নেই। দিদি কোর কমিটি গঠন করে বলেছিলেন নিয়মিত বৈঠক করে তাঁর কাছে রিপোর্ট পাঠাতে হবে লোকসভা ভোটকে কেন্দ্র করে। সেই কারণেই এই কমিটির বৈঠকে বসছে।” সোমবার তৃণমূলের মধ্যমগ্রামের দলীয় কার্যালয় এই বৈঠক হবে। এই বৈঠকে যে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসবে সন্দেশখালি, বনগাঁ এবং ব্যারাকপুর প্রসঙ্গ, তা মেনে নিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। কারণ, যে ভাবে একের পর এক ঘটনাক্রমে জড়িয়ে পড়ছেন তৃণমূল নেতারা, তাতে পরিস্থিতি আয়ত্তে এনেই লোকসভা ভোট পরিচালনা করতে হবে বলে মনে করছে একাংশ। কারণ প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের একাংশের মত, রাজ্যের সবচেয়ে বেশি লোকসভার আসন রয়েছে এই জেলায়। গত বার তার মধ্যে দু’টিতে জয় পেয়েছিল বিজেপি। সেই দু’টি আসন এ বার তৃণমূলের দখলে আনতে গেলে যাবতীয় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব মিটিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। কিন্তু পারস্পরিক দ্বন্দ্ব তো বটেই, সন্দেশখালি ঘটনায় যে ভাবে ইডি আধিকারিকেরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাতে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রেও দলকে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করছে দলের একাংশ নেতৃত্ব।
আপাতত প্রথম বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হবে তা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূলের কোনও নেতা। কোর কমিটির চেয়ারম্যান নির্মল ঘোষ এই বৈঠকটি তলব করেছেন। তাই বৈঠক পরিচালনা থেকে সংবাদমাধ্যমে জানানো— সব কিছু তার ওপরেই ছেড়ে দিচ্ছেন কোর কমিটির সদস্যেরা। তবে বসিরহাট জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘সংগঠন যেমন বালুদা নিজের হাতে করেছিলেন, তেমনি এই জেলার সংগঠনে বেনো জল ঢুকেছিল তাঁর আমলেই। এখন হয়তো আর তিনি নেই, কিন্তু তাঁর করে যাওয়া বিভিন্ন কাজের ফল দলকে ভুগতে হচ্ছে। কোর কমিটি বালুদার দেখানোর পথ ছেড়ে কী ভাবে নিজের পথে চলে লোকসভা ভোট পরিচালনা করতে পারে, আমরা সে দিকেই তাকিয়ে।” প্রসঙ্গত, সন্দেশখালির শাহজাহান থেকে শুরু করে বনগাঁর শঙ্কর— জেলার রাজনীতিতে এঁরা সবাই বালু অনুগামী বলে পরিচিত।