Sushmita Dev and Shanta Chhetri

শান্তা ছেত্রী, সুস্মিতা দেবকে কি আর রাজ্যসভায় পাঠাবে না তৃণমূল? নতুন মুখ কারা হবেন, শুরু হয়েছে জল্পনা

সূত্রের খবর, মেয়াদ উত্তীর্ণ পাঁচ সাংসদের মধ্যে ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং দোলা সেনকে আবার প্রার্থী করবে তৃণমূল। সুখেন্দুশেখর রায়কেও আবার প্রার্থী করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। বাকি তিন কারা, তা নিয়েই জল্পনা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৩ ১৯:৫৭
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

তিন জনের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। বাদ পড়তে পারেন দু’জন। আগামী ২৪ জুলাইয়ের রাজ্যসভা ভোটে প্রার্থিতালিকা ঘোষণার আগে কারা প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে শাসক শিবিরের অন্দরে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। ষষ্ঠ আসনটিতে উপনির্বাচন হবে। সেটির প্রার্থীর বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব।

Advertisement

মেয়াদ শেষ-হওয়া পাঁচ রাজ্যসভা সাংসদের মধ্যে ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং দোলা সেনকে আবার প্রার্থী করা হচ্ছে বলেই খবর। তৃতীয় জন, অর্থাৎ সুখেন্দুশেখর রায়ের আবার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সূত্রের খবর, বাদ পড়তে পারেন শান্তা ছেত্রী এবং সুস্মিতা দেব।

শান্তা-সুস্মিতার জায়গায় কারা টিকিট পেতে পারেন, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দর থেকে একাধিক মত উঠে আসছে। অনেকের মতে, রাজ্যের কোনও প্রবীণ মন্ত্রীকে রাজ্যসভায় পাঠানো হতে পারে। আবার জহর সরকারের মতো কোনও ‘বিশিষ্ট’ এ বারের প্রার্থিতালিকায় থাকতে পারেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। তবে দলীয় নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আপাদমস্তক ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’-দেরই রাজ্যসভায় টিকিট দেওয়ার পক্ষপাতী। দলের একাংশের বক্তব্য, সেই কারণেই দু’বছর আগে নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষের জায়গায় গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরোকে রাজ্যসভায় আনা হয়েছিল। সেই ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ হিসাবে আলোচনায় রয়েছে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের নাম। প্রসঙ্গত, কুণাল আগেও রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। গত নভেম্বর মাস থেকে তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুরের মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ জেলার সাংগঠনিক দায়িত্বে আানা হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের পরে হলদিয়া পুরসভার ভোট পরিচালনার ভারও আগাম তাঁকেই দিয়ে রাখা হয়েছে।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে এ বার নির্বাচন এবং উপনির্বাচন মিলিয়ে মোট সাতটি রাজ্যসভা আসনে ভোটগ্রহণ। আগামী ২৪ জুলাই ভোট এবং সে দিনই গণনা। ছ’জন রাজ্যসভা সাংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওই আসনগুলিতে নির্বাচন। অন্য দিকে, তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত ফেলেইরো মেয়াদ শেষের আগেই ইস্তফা দেওয়ায় সপ্তম আসনটিতে উপনির্বাচন হচ্ছে।

২০১৭ সালে এপ্রিল মাসের রাজ্যসভা নির্বাচনে ওই ছ’টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে জিতেছিল তৃণমূল। ডেরেক, দোলা, সুখেন্দুশেখর, শান্তা এবং মানস ভুইয়াঁ আসনে জিতেছিলেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সবং কেন্দ্রে জয়ী মানস রাজ্যসভার সাংসদের পদ থেকে ইস্তফা দেন। সেই আসনে জেতেন তৃণমূলের সুস্মিতা। এ বার তাঁদের সকলেরই মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অন্য দিকে, ২০১৭ সালে জয়ী কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্যেরও মেয়াদ শেষ হচ্ছে এই দফায়।

এই ছ’টি আসনের প্রতিটিতে জয়ের জন্য ৪২ জন করে বিধায়কের ‘প্রথম পছন্দের ভোট’ প্রয়োজন। ফলে এ বারও পরিষদীয় পাটিগণিতের নিয়মে তৃণমূলের পাঁচটি আসনে জেতার কথা। ষষ্ঠ আসনটিতে বিজেপির জয় মোটামুটি নিশ্চিত। উপনির্বাচনের একমাত্র আসনটিতে জেতার জন্য প্রয়োজন ৪৯ জন বিধায়কের সমর্থন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার যা বিন্যাস এবং রাজ্যসভার ভোটের যা অঙ্ক তাতেও মমতার দলের প্রার্থীর জয় কার্যত নিশ্চিত।

প্রার্থী সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সর্বময় নেত্রী মমতাই। তবে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, পূর্ণ মেয়াদের পাঁচটি আসনে দু’জন নতুন প্রার্থী দেওয়া হওয়া হতে পারে। শান্তা এবং সুস্মিতার ‘পারফরম্যান্স’-এর ভিত্তিতে তাঁদের আবার টিকিট না-ও দেওয়া হতে পারে। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা তিনটি বিধানসভা ভোটে জিএনএলএফ প্রার্থী হিসাবে কার্শিয়‌ং কেন্দ্রে জিতেছিলেন শান্তা। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়ে ওই কেন্দ্রে ‘জোড়াফুল’ প্রতীকে লড়ে হেরে যান তিনি। পরের বছরেই শান্তাকে সংসদের উচ্চকক্ষের টিকিট দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু গত কয়েক বছরে পাহাড়ের রাজনীতিতে শান্তাকে তেমন ভাবে ‘সক্রিয়’ হতে দেখা যায়নি।

প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেবের কন্যা তথা অসমের শিলচরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা ২০২১ সালের অগস্টে অভিষেকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। সে বছর সেপ্টেম্বরে মানসের ছেড়ে-যাওয়া রাজ্যসভা আসনের উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন সুস্মিতা। দিল্লির মিরান্ডা হাউস এবং পরে লন্ডনের কিংস কলেজের প্রাক্তনী সুস্মিতা ছিলেন কংগ্রেসের মহিলা শাখার সর্বভারতীয় সভানেত্রী। রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন তাঁর ‘টিম’-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন অসমের এই বাঙালি নেত্রী।

তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে মমতা এবং অভিষেক উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাঙালি গরিষ্ঠ রাজ্য ত্রিপুরার সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছিলেন সুস্মিতাকে। এর পর আগরতলা-সহ কয়েকটি পুরসভার ভোটে কিছুটা ‘মুখরক্ষা’ হলেও চলতি বছরের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়। ২৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে সবক’টিতেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সার্বিক ভাবে ‘নোটা’র চেয়েও কম ভোট পড়ে ‘জোড়াফুল’ প্রতীকে। তার পর থেকেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে কিছুটা আড়ালে চলে যেতে দেখা গিয়েছিল সুস্মিতাকে। তবে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্বের রাজনীতির কথা ভেবে সুস্মিতাকে টিকিট দেওয়াও হতে পারে।

একদা কংগ্রেসের অন্দরে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত সুখেন্দুশেখর ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পর তৃণমূলে যোগ দিয়ে রাজ্যসভার মনোনয়ন পান। পরবর্তী সময়ে রাজ্যসভার উপ-দলনেতার পদ দেওয়া হয় তাঁকে। দু’দফার মেয়াদে রাজ্যসভায় বিভিন্ন বিষয়ে দলের অবস্থানের পক্ষে প্রভূত সরব হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বিশেষত গত ন’বছরে ধারাবাহিক ভাবে সংসদের ভিতরে-বাইরে বিজেপিকে নিশানা করেছেন তিনি। নির্বাচন কমিশনে দলের প্রতিনিধিত্বও করছেন সুখেন্দু। পাশাপাশিই, দলের দৈনিক মুখপাত্রের সম্পাদক পদেও আনা হয়েছে এই প্রবীণ এবং অধ্যয়নে অভ্যস্ত রাজনীতিককে। দলের নেতাদের অনেকেরই ধারণা, তাঁকেও তৃণমূল নেত্রী আবার রাজ্যসভায় পাঠাবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement