(বাঁ দিকে) সিভি আনন্দ বোস। (মাঝখানে) বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। (ডান দিকে) সুকান্ত মজুমদার।
রাজ্যপালের সমালোচনা করলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল হিসাবে সিভি আনন্দ বোস সংবিধান মেনে কাজ করছেন না বলেও অভিযোগ করলেন তিনি। শনিবার বিধানসভায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন স্পিকার। সেখানে তিনি পঞ্চায়েত ভোট ও রাজ্যপালের ভূমিকা প্রসঙ্গে ওই মন্তব্য করেন। তাঁর মন্তব্যের পাল্টা রাজ্যপালের পাশে দাঁড়িয়ে স্পিকারকেই কটাক্ষ করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার পালিত হয় বিধানসভায়। ওই অনুষ্ঠান শেষে বিমান বলেন, ‘‘রাজ্যপাল যা করছেন, তা না-করাই বাঞ্ছনীয় ছিল বলে আমি মনে করি। অনেক রাজ্যপাল আমরা দেখেছি। অনেক নির্বাচনও দেখেছি আমরা। ২০১১ সালের নির্বাচনও দেখেছি। আমাদের উপর কী অত্যাচার হত সেই সময়! বিরোধী দলের সদস্য হিসেবে দেখেছিলাম, কী ভাবে বিরোধীদের আক্রমণ করা হত, ঘরবাড়ি আক্রমণ করা হত। তখন এত সংবাদমাধ্যম ছিল না। তাই এ সব প্রচার হত না। তখনও রাজ্যপাল ছিলেন, কিন্তু তাঁরা সেই সময় এমন ভূমিকা গ্রহণ করেননি।’’ বিমানের অভিযোগ, রাজ্যপাল অতিসক্রিয় হয়ে কাজ করছেন। তাঁর মতে, রাজ্যপাল এমনটা না করলেই পারতেন। বিমান বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ রাজ্যের এক্তিয়ার। রাজ্যপাল এখানে কেন হস্তক্ষেপ করছেন আমি বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয় সংবিধানের মধ্যে থেকে কাজ করলেই পারতেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। উনি নিয়ে একটা অভিযোগ জানানোর জায়গা করে দিয়েছেন। এর কী মানে আমি জানি না। আমি কোনও রাজ্যে এমন দেখিনি।’’
স্পিকারের সমালোচনা করে পাল্টা রাজ্যপালের পাশে দাঁড়িয়েছেন সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল কোথায় সংবিধানের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন দেখান স্পিকার। সংবিধানের কোন ধারা ভেঙে রাজ্যপাল পদক্ষেপ করেছেন, তা উল্লেখ করুন স্পিকার। যে স্পিকারের আমলে বিরোধী বিধায়ককে বিধানসভাতেই শাসকদলে যোগদান করানো হয়, সেই স্পিকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় জেলায় আক্রান্তদের জন্য রাজভবনে ‘শান্তিকক্ষ’ খুলেছেন রাজ্যাপাল। সঙ্গে কোনও জেলায় কেউ আক্রান্ত হলে রাজভবনে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত ভোটে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা ভাঙড় ও ক্যানিং এলাকার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। ফলস্বরূপ তৃণমূল নেতৃত্বের আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন আনন্দ বোস। রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে বার বার ডেকে পাঠানো সত্ত্বেও তাঁর কাছে যাননি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগপত্র নবান্নে ফিরিয়েও নিজের কড়া অবস্থানের কথা রাজ্য প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বোস। যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। আর এ বার তাঁকে আক্রমণ শানালেন স্পিকার। বোসের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীন জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও জোর বিরোধ হয়েছিল স্পিকার বিমানের। বিধানসভার কাজে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের অভিযোগ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকেও জানিয়েছিলেন বিমান। এ ক্ষেত্রে তেমনটা না হলেও, ফের স্পিকারের সঙ্গে রাজ্যপালের বিরোধী শুরু হয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও, গত বছর নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের দায়িত্ব নেওয়া ইস্তক স্পিকারের সঙ্গে সেভাবে কোনও সংঘাত হয়নি। তবে রাজভবনে বিল আটকে থাকার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন স্পিকার বিমান। তবে এ ভাবে কখনওই রাজ্যপালের সমালোচনা করেননি।