ফিরহাদের বদলে তপন দাশগুপ্তকে ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হল। —ফাইল চিত্র।
ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হল ফিরহাদ হাকিমকে। বদলে দায়িত্ব দেওয়া হল হুগলি জেলা তৃণমূলের নেতা তপন দাশগুপ্তকে। মঙ্গলবার এ কথা জানা গেলেও, প্রশাসনিক ভাবে এই সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে নবান্নের একটি সূত্র। বিদায়ী চেয়ারম্যান ফিরহাদ নিজেই ফোন করে তপনকে নতুন দায়িত্বের কথা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রীকে দ্রুত কাজে নামার দিয়েছেন বলে সোমবার জানা গিয়েছিল। এর পরেই মঙ্গলবার জানা গেল ফুরফুরায় উন্নয়ন পর্যদের চেয়ারম্যান বদলের কথা।
সোমবার বিধানসভায় মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। তার পরে পাঁচ নেতাকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠান মমতা। তাঁরা সকলেই সংখ্যালঘু। গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান, সংখ্যালঘু প্রতিমন্ত্রী গোলাম রাব্বানী ও জঙ্গিপুরের মন্ত্রী জাভেদ খান তাঁর ঘরে যান। সূত্রের খবর, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এই কমিটিকে সাগরদিঘি ভোটের বিপর্যয় নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন।
হুগলি জেলা রাজনীতির অতি পরিচিত মুখ তৃণমূল বিধায়ক তপন। দায়িত্ব পাওয়ার পর তপন জানিয়েছেন, বুধবারই তিনি ফুরফুরা শরিফে যাবেন। কথা বলবেন ফুরফুরা শরিফের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে। যদিও বর্তমানে সেখানে ইসালে সাওয়ার উৎসব নিয়ে ব্যস্ত তাঁরা। এই নিয়োগ প্রসঙ্গে ফুরফুরার মতামত জানতে একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের ফোন করা হলেও জবাব মেলেনি।
বর্তমানে ফুরফুরা শরিফের একাংশের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কারণ ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। সম্প্রতি তাঁকে ৪২ দিন কারাবাসে থাকতে হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি ধর্মতলায় দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিকে ঘিরে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আইএসএফ সমর্থকদের। সেই ঘটনার জেরে নওশাদ সহ ৮৮ জন আইএসএফ কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার তাঁর জামিন ম়ঞ্জুর হলেও শনিবার মুক্তি পান নওশাদ। তাঁর ৪২ দিন কারবাসের কারণে ফুরফুরার একাংশ রাজ্য সরকারের উপর ক্ষুব্ধ। যে কারণে রবিবার স্থানীয় বিধায়ক তথা পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী নওশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে, দেখা হয়নি তাঁদের।
তাই ফুরফুরা শরিফের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতেই অভিজ্ঞ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করছে রাজনীতির বৃত্ত থাকা একাংশ। কারণ ফিরহাদ কলকাতার মেয়র, সঙ্গে পুরমন্ত্রীর দায়িত্বও তাঁর কাঁধে। তাই হুগলির মতো জেলায় গিয়ে উন্নয়ন পর্ষদের কাজ দেখা ফিরহাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না বলেই তপনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই দাবি প্রশাসনিক আধিকারিকদের। সঙ্গে ফুরফুরার উন্নয়নে গতি আনাও রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। কারণ সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের পরাজয়ের পরেই গুঞ্জন উঠেছে, সংখ্যালঘুরা শাসকদলের পাশ থেকে সরতে শুরু করেছে। যে কারণে সোমবার বিধানসভায় ৫ জন নেতাকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাঁরা সাগরদিঘির পাশাপাশি রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটের অবস্থা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট দেবেন। আর তারপরেই ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদে নতুন দায়িত্বে আনা হল তপনকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় কৃষি বিপণন মন্ত্রী ছিলেন তপন। বর্তমানে তিনি আদি সপ্তগ্রাম কেন্দ্রের বিধায়ক। পরপর ৩ বার ওই কেন্দ্র থেকে জিতেছেন। দীর্ঘদিন হুগলি জেলা তৃণমূলের সভাপতিও ছিলেন তপন। এ বার সেই অভিজ্ঞ নেতাকেই ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করলেন মমতা। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরেই ফুরফুরা শরিফ এলাকার উন্নয়নের জন্য এই পর্ষদ গড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘ সময় এই পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর অবশ্য জেলাশাসকের হাতেই চলে গিয়েছিল এই পর্ষদের ক্ষমতা। কিন্তু তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ফিরহাদকেই চেয়ারম্যান করা হয়। কিন্তু এ বার সেই ফিরহাদকে সরিয়ে বসানো হল হুগলির প্রবীণ নেতাকে।