তৃণমূল নেতা সুব্রত বক্সী। — ফাইল চিত্র।
বিধানসভা অধিবেশনে মন্ত্রীদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা আনতে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে শুক্রবার থেকে। বিধায়কদের হাজিরার ক্ষেত্রেও থাকবে দলের নজরদারি। শুক্রবার তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী পরিষদীয় দলের বৈঠকে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেই ‘হিসাব’ রাখার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
সুব্রত বৈঠকে বলেন, ‘‘আমাকে প্রতি দিন বিধায়কদের হিসাব মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছে পাঠাতে বলেছেন। সেই মতো প্রতি দিন আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সেই হিসাব পাঠিয়ে দেব। যে কোনও দিন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় এসে হাজির হতে পারেন। সে দিন যাঁরা উপস্থিত থাকবেন না, তাঁদের নিজের জবাব নিজেকেই দিতে হবে।”
তৃণমূল পরিষদীয় দলের বৈঠকে মন্ত্রী-বিধায়কদের উদ্দেশে সুব্রত অধিবেশন পর্বের আচরণবিধিও জানিয়েছেন স্পষ্ট করে। শুধু হাজিরা নয়, অধিবেশনে উপস্থিত থাকাও যে বাধ্যতামূলক, সে কথা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আবার বিধানসভায় এসে বাইরে ঘুরে বেড়ালাম, অধিবেশনে হাজিরা দিলাম না, তেমনটা করলে চলবে না। বিধানসভায় হাজির হয়ে অধিবেশনে যোগ দিতে হবে। প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে বিধায়কদের তৈরি হয়ে আসতে হবে। প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সব বিষয় সঠিক জেনে প্রশ্ন করতে হবে।’’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো শুরুর দিনই মন্ত্রীদের হাজিরা খাতায় সই করতে হয়েছে। শুক্রবার পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে রাখা ছিল মন্ত্রীদের হাজিরা খাতা। কে, কখন বিধানসভা অধিবেশনে প্রবেশ করছেন, সেই সময় উল্লেখ করে সই করতে হয়েছে। শুধু প্রবেশের সময় নয়। মন্ত্রীরা কখন বার হচ্ছেন সেই সময় উল্লেখ করে ফের এক বার সই করতে হবে। অর্থাৎ যা থেকে বোঝা যাবে, কোন মন্ত্রী কত ক্ষণ বিধানসভায় ছিলেন।
নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে দৃশ্যতই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কি স্কুলে পড়ি নাকি! পার্টি বলেছে, তাই করলাম (সই)। কিন্তু এটার সঙ্গে আমি সহমত নই।’’ ফিরহাদের পাশে দাঁড়ানো রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকও বলেন, “১১ বছর ধরে বিধানসভায় রয়েছি। এক দিনও কামাই করিনি।’’
পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পাঁচ জনের একটি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তৈরি হয়েছে। যার চেয়ারম্যান শোভনদেব। আর রয়েছেন ফিরহাদ, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং বিরবাহা হাঁসদা। শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য হয়েও ববি যে ভাবে শুক্রবার সই নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরে। কেন এই কমিটি গঠন করা হয়েছে শোভনদেব তারও ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘‘সকাল ১১টায় অধিবেশন শুরু হলে দেখা যাচ্ছে অনেক বিধায়ক নেই। এটা তো ঠিক নয়। মানুষ তো তাঁদের নির্বাচিত করেছে বিধানসভায় কথা বলার জন্য।’’
শোভনদেব আরও বলেন, ‘‘যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন দেখতাম সরকার (বাম) পক্ষের ৫০ শতাংশ বিধায়ক অধিবেশনে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু এখন সেটা দেখা যাচ্ছে না।’’ তিনি এ-ও জানান, কে, কখন বিধানসভায় আসছেন, তার সাত দিনের রিপোর্ট পরিষদীয় মন্ত্রী হিসেবে তিনি পাঠাবেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। শুধু মন্ত্রীদের নয়। বিধানসভা অধিবেশনে বিধায়কদের হাজিরা দেওয়ার ব্যাপারেও বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে দলের বিশেষ অধিবেশন থেকে বার্তা দিয়েছিলেন মমতা। শুক্রবার জানা গেল, বিধায়কদের ‘দায়িত্ব’ পেয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত।