হাজিরা খাতায় সই করছেন মন্ত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা অধিবেশনে মন্ত্রীদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা আনতে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। শুক্রবার থেকে শুরু হল বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে রাখা ছিল হাজিরা খাতা। সেই খাতায় সই করে, সময় লিখে অধিবেশন কক্ষে ঢুকতে হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রীদের জন্য চালু হওয়া নিয়ম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেল মন্ত্রীদের মধ্যে। কেউ সংবাদমাধ্যমের সামনে সরাসরি জানিয়ে দিলেন, এই নিয়ম তাঁর একেবারেই পছন্দ নয়। আবার কেউ বললেন, খাতায় সময় লিখে, সই করে অধিবেশন কক্ষে ঢুকতে ভাল লাগছে। পরিষদীয় মন্ত্রীর ঘরে এই সই নিয়ে রসিকতাও শোনা গেল শুক্রবার।
সময় লিখে সই করে অধিবেশনে ঢোকা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন পুর এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কি স্কুলে পড়ি নাকি! পার্টি বলেছে, তাই করলাম (সই)। কিন্তু এটার সঙ্গে আমি সহমত নই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নিজেদের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা তো স্কুলের বাচ্চা নই যে সই করতে হবে।’’ তাঁর পাশে দাঁড়ানো রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকও বলেন, “১১ বছর ধরে বিধানসভায় রয়েছি। এক দিনও কামাই করিনি।’’ যদিও এই নতুন নিয়ম নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।আবার মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘‘সই করলাম, সময় লিখলাম। বেশ ভালই লাগছে।’’ দেখা যায় পরিষদীয় মন্ত্রীর ঘরে লাইন দিয়ে সই করছেন মন্ত্রী সুজিত বসু, স্বপন দেবনাথ, বিরবাহা হাঁসদা, শশী পাঁজা, ব্রাত্য বসু, বেচারাম মান্না, উজ্জ্বল বিশ্বাস প্রমুখেরা। এর মধ্যেই এক জন ব্রাত্যের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘‘প্রক্সি সই করা যাবে নাকি?’’ সেই কথা শুনে হেসে ফেলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য।
পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পাঁচ জনের একটি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তৈরি হয়েছে। যার চেয়ারম্যান শোভনদেব। আর রয়েছেন ফিরহাদ, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং বিরবাহা হাঁসদা। শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য হয়েও ববি যে ভাবে শুক্রবার সই নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরে। কেন এই কমিটি গঠন করা হয়েছে শোভনদেব তারও ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘‘সকাল ১১টায় অধিবেশন শুরু হলে দেখা যাচ্ছে অনেক বিধায়ক নেই। এটা তো ঠিক নয়। মানুষ তো তাঁদের নির্বাচিত করেছে বিধানসভায় কথা বলার জন্য।’’ শোভনদেব আরও বলেন, ‘‘যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন দেখতাম সরকার (বাম) পক্ষের ৫০ শতাংশ বিধায়ক অধিবেশনে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু এখন সেটা দেখা যাচ্ছে না।’’ তিনি এ-ও জানান, কে, কখন বিধানসভায় আসছেন, তার সাত দিনের রিপোর্ট পরিষদীয় মন্ত্রী হিসেবে তিনি পাঠাবেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। শুধু মন্ত্রীদের নয়। বিধানসভা অধিবেশনে বিধায়কদের হাজিরা দেওয়ার ব্যাপারেও বৃহস্পতিবার দলের বিশেষ অধিবেশন থেকে বার্তা দিয়েছিলেন মমতা।