অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে ইডি। ফাইল চিত্র।
বাবা জেলে। দীর্ঘ অসুস্থতার পর মা প্রয়াত হয়েছেন। এমন এক জনকে গ্রেফতার না করে কি তদন্ত চালানো যাচ্ছিল না? অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের গ্রেফতারি নিয়ে এমন মানবিক প্রশ্নই তুলল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই প্রশ্ন তোলার আগে যদিও জানিয়েছেন, আইন আইনের পথেই চলবে, সে ব্যাপারে দলের কোনও বক্তব্য নেই। বিজেপি যদিও দাবি করেছে, সুকন্যার এই গ্রেফতারি ছিল সময়ের অপেক্ষা। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ওই মন্তব্য করেছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় সুকন্যাকে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গরু পাচার মামলায় সাড়ে আট মাস আগেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত। তিনি এই মুহূর্তে তিহাড় জেলে রয়েছেন। এ বার ওই একই মামলায় সুকন্যাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। সুকন্যার গ্রেফতারি নিয়ে দলের তরফে কুণাল জানিয়েছেন, আইনি বিষয় নিয়ে তাঁর বা দলের কোনও বক্তব্য নেই। তবে তিনি একই সঙ্গে মানবিক প্রশ্নও তুলেছেন। কুণালের কথায়, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা গ্রেফতার, এটি সম্পূর্ণ আইনি ব্যাপার। আইন আইনের পথে চলবে। যদি কেউ বা কারা দোষ করে থাকেন, শাস্তি পাবেন। এ নিয়ে তৃণমূল কখনও কারও হয়ে কথা বলেনি। কিন্তু নির্দিষ্ট ভাবে এই ক্ষেত্রে একটি বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারত।’’ তিনি বলেন, ‘‘যে মেয়েটিকে গ্রেফতার করা হল, কিছু দিন আগে দীর্ঘ অসুস্থতার পর তাঁর মা মারা গিয়েছেন। বাবা জেলে রয়েছেন। মেয়েটিকে বাইরে রেখে কি তদন্ত করা যেত না? তাঁর বয়স খুব বেশি নয়। বাবা, মায়ের ছায়ায় সে বড় হয়েছে। সম্প্রতি একা হয়ে গিয়েছে। ইডিতে অনেক দক্ষ অফিসারেরা রয়েছেন। ন্যূনতম মানবিকতা কি দেখানো যেত না এ ক্ষেত্রে?’’
কেন্দ্রীয় এজেন্সির উপরে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের চাপের প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘এটি কোনও প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের চাপ নয়তো? মেয়েটিকেও ছাড়া যাবে না? কারণ সে অনুব্রতের মেয়ে? তাঁর নামে কী সম্পত্তি আছে, কী ভাবে এল, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু বাবা কারাবন্দি, মাতৃহারা মেয়েটিকে গ্রেফতারের এই ঘটনা আইনের কথা বলে এড়িয়ে যেতে পারছি না।’’
অনুব্রত-কন্যার গ্রেফতারির পর মুখ খুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তিনি বলেন, ‘‘এই গ্রেফতারি ছিল সময়ের অপেক্ষা। বার বার ইডি এবং সিবিআই তাঁকে ডেকেছে। কিন্তু কোনও সহযোগিতা পায়নি। উচ্চ আদালতে গিয়ে বার বার পাশ কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। অল্প বয়স। বিপুল সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে তাঁর নামে। অনুব্রতেরও সেই অর্থে রোজগারের উৎস নেই। আয়ের অধিক এই সম্পত্তি কী ভাবে এল, উত্তর দিতে হবে।’’
গরু পাচার মামলায় শুধু অনুব্রত কিংবা সুকন্যা নন, আরও বড় নাম প্রকাশ্যে আসতে চলেছে বলে দাবি সুকান্তের। তাঁর কথায়, ‘‘অনুব্রত জেলা সভাপতি। তাঁর একার পক্ষে গরু পাচার এবং কয়লা পাচার চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কালীঘাটের নেতাদেরও এর সঙ্গে যোগাযোগ আছে। আমার আশা এই বৃত্ত সম্পূর্ণ শীঘ্রই সম্পূর্ণ হবে।