সন্দেশখালির গ্রামে প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী নুরুল ইসলাম। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।
ঢাকের তালে ঝুমুর নাচ চলছিল তখন। কিছুক্ষণ সেই তালে তাল মিলিয়ে হাঁটলেন হাজি নুরুল ইসলাম। তার পরে সন্দেশখালিতে তৃণমূলের প্রথম প্রচার শোভাযাত্রায় তাঁর সঙ্গী, স্থানীয় বিধায়ক সুকুমার মাহাতোকে জানালেন, গা জ্বালা করা গরমের দুপুরে শরীর সায় দিচ্ছে না। টোটোর ব্যবস্থা ছিলই। তাতেই উঠে পড়লেন বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী। যে কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র সন্দেশখালিতে প্রচার শুরু করেছিলেন, সেই মন্দিরের সামনেও এলেন তিনি। তাঁর হয়ে পুজো দেন তৃণমূল নেতারা। এ সবের ফাঁকে জানিয়ে দিলেন, শাহজাহান ‘ক্লোজ়ড চ্যাপ্টার’। বললেন, ‘‘জিতলে ভোট দেওয়ার ঋণ শোধ করে দেব।’’
এ দিকে রবিবারই বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের হাত ধরে শতাধিক তৃণমূল নেতা-কর্মী তাঁদের দলে যোগ দেন বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের। সূত্রের দাবি, রবিবার দুপুরে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের হাড়োয়া বিধানসভা এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন রেখা। সেখানেই তৃণমূলের ওই নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন বলে দাবি। বিজেপিতে যোগ দিয়ে তৃণমূলের এক কর্মী, সেলিম মোল্লা দাবি করেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিজেপিতে যোগ দিলাম।’’ যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এই যোগদানের ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ।
এ দিন হাজি নুরুল সরবেড়িয়া যান দুপুর ১১টা নাগাদ। সেখানে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরে ধামাখালি হয়ে সন্দেশখালি ঢোকেন দুপুর ১২টার পরে। সন্দেশখালির ত্রিমণীতে সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আধ ঘণ্টার সভায় মিনিট পাঁচেকের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তৃণমূল প্রার্থী বলেন, ‘‘আমি তো আপনাদের পরিচিত। আগেও সাংসদ হয়েছি। আয়লার সময় এক বুক জলে দাঁড়িয়ে আপনাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। ভোটে জয়ী হলে এলাকায় উন্নয়ন করে ভোট দেওয়ার ঋণ শোধ করব।’’ পরে নুরুল বলেন, ‘‘ক্লোজ়ড চ্যাপ্টার শাহজাহান। সংগঠন সুকুমার দেখছে। যেমনটা দেখলাম, বুঝলাম সন্দেশখালির মানুষকে ভুল বোঝানো হলেও সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।’’ এ দিনের সভায় দেখা গেল, সন্দেশখালি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা তৃণমূলের সন্দেশখালি-২ পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান কর্মাধ্যক্ষ দিলীপ মল্লিককে। শিবপ্রসাদ হাজরার সঙ্গে বিবাদের জেরে বহুদিন এলাকাছাড়া ছিলেন তিনি।
দলীয় সূত্রে খবর, প্রার্থী এ দিন অসুস্থ বোধ করায় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। সন্দেশখালি-২ ব্লক তৃণমূলের নির্বাচন কমিটির সদস্য তথা মণিপুর পঞ্চায়েতের প্রধান প্রসেনজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রার্থীর দিন কয়েক আগে একটা অস্ত্রোপচার হয়েছে। তীব্র গরমে অনেক মানুষের ভিড়ে অসুস্থ বোধ করছিলেন। একটি মিছিল করার পরিকল্পনা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়।’’
তৃণমূল প্রার্থী ঘোষণার পরেও সন্দেশখালিতে প্রচার দেরিতে শুরুর কারণ হিসেবে বসিরহাটে অভিষেকের সভার পরে রূপরেখা তৈরির করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তার সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গিয়েছে। তার পরেও প্রচারে দেরি কেন? প্রার্থী বলেন, ‘‘সম্প্রতি দলের বৈঠকে ঠিক হল, কবে কোথায় প্রচারে যাব। সেই মতো প্রচার শুরু হল।’’ যদিও সুকুমার বলেন, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে অপপ্রচারের জেরে কর্মীরা সাময়িক ভাবে থমকে গিয়েছিলেন। এখন আবার পুরনো ফর্মে।’’
বিজেপির স্থানীয় নেতা বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রার্থী তাঁর নাম ঘোষণার অনেক পরে সন্দেশখালিতে প্রচারে এলেন। আসলে সন্দেশখালিতে তৃণমূলের সংগঠন ভেঙে পড়েছিল। তাই লোক জড়ো করা যেত না প্রার্থী এলে। এ দিন যে জনসামগম, তার সবটাই বাইরে থেকে আসা মানুষের ভিড়।’’