TMC Delegation in Jalpaiguri

বাংলাকেও ‘অনুমতি’ দিতে হবে! জলপাইগুড়ির ঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকায় তৃণমূল, রিপোর্ট পাঠাবে কমিশনে

শাসকদল সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের রাজ্য প্রশাসন যাতে সাহায্য করতে পারে, তার বিশেষ অনুমোদনের দাবি নিয়ে গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে গিয়ে ‘হেনস্থা’ হতে হয়েছিল নেতাদের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৪৫
Share:

জলপাইগুড়ির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। —নিজস্ব চিত্র।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে জলপাইগুড়ি গেল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। শাসকদল সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের রাজ্য প্রশাসন যাতে সাহায্য করতে পারে, তার বিশেষ অনুমোদনের দাবি নিয়ে গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে গিয়ে ‘হেনস্থা’ হতে হয়েছিল নেতাদের। এ বার তাঁদের লক্ষ্য জলপাইগুড়ির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে, ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে সেখানকার বাস্তব ছবি কমিশনের সামনে তুলে ধরা। তাঁদের দাবি, অসমের মতো পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও দুর্গতদের সাহায্য করার বিশেষ অনুমতি দিতে হবে।

Advertisement

গত সোমবার দিল্লিতে কমিশনের দফতরে তৃণমূলের যে ১০ নেতা-নেত্রী গিয়েছিলেন, তাঁরাই জলপাইগুড়ির পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়েছেন। শুক্রবার সকালে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, দোলা সেন, শান্তনু সেন, সাগরিকা ঘোষ-সহ ১০ জন নেতা-নেত্রী বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছন। সেখানে দোলা বলেন, ‘‘তৃণমূলের পক্ষ থেকে যে ১০ জনের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়েছিল, তারাই এসেছিলাম। আমরা কমিশনের কাছে গিয়েছিলাম এই মানবিক আবেদন জানাতে যে, ময়নাগুড়িতে টর্নেডোয় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারগুলিকে যাতে রাজ্য প্রশাসন সাহায্য করতে পারে। এই বিশেষ অনুমতিটুকুই চাইতে গিয়েছিলাম আমরা। সেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করতে আমরা উত্তরবঙ্গে এসেছি।’’ সাগরিকা বলেন, ‘‘আমরা মূলত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কথা শুনতে এসেছি। তাঁরা কেমন আছেন, কী ভাবে দিন কাটাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের কী কী দরকার, তাঁদের কোথায় কী অসুবিধা হচ্ছে— এ সব জানতে।’’

ঘূর্ণিঝড়ের ১২ দিন পরে এখনও বিপর্যস্ত অঞ্চলে দুর্গতদের অনেকেই খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ। সরকারি সূত্রে খবর, প্রশাসনের তরফে ত্রাণশিবির করে দেওয়া হলেও দুর্গতদের অনেকেই সেখানে নানা কারণে থাকতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, কবে ভেঙে যাওয়া ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে? যদিও এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক নির্বাচনী জনসভায় জানিয়েছেন, নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু থাকায় তিনি সরকারি ভাবে কোনও ঘোষণা করতে পারবেন না। কিন্তু, আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে রাজ্য প্রশাসনের তরফে যাতে দুর্গতদের ঘর তৈরি করে দেওয়া যায়, সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সেই চিঠির কোনও জবাব এখনও আসেনি। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, তাদের কাছে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। তাঁরা এও জানাচ্ছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী ঘর করে দেওয়ার জন্য ছাড়পত্র চেয়ে কমিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। কমিশন ‘নো অবজেকশন’ বা ছাড়পত্রের চিঠি পাঠালে তাঁরা কাজ শুরু করতে পারবেন। কিন্তু সেই চিঠি এখনও তাঁদের হাতে আসেনি।

Advertisement

তৃণমূলের অভিযোগ, অসমে বিপর্যয়ের ঘটনায় সেখানকার রাজ্য সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করার বিশেষ অনুমতি দিয়েছে কমিশন। প্রশ্ন, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে কেন সেই সুযোগ দেওয়া হবে না? দোলা বলেন, ‘‘আমরা কমিশনের কাছে আশা করব, ভোটের মাঠে সমানে সমানে খেলার ব্যবস্থা করবে তারা। মানবিকতার খাতিরে বাংলা ও অসমের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করবে না তারা।’’

এ ব্যাপারে কমিশন সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। তবে কমিশনের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, কোনও বিপর্যয়ে আপৎকালীন ত্রাণ-পুনর্গঠনের প্রশ্নে ভোটের বিধি বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কমিশনকে জানিয়ে সে সব করলেই চলে। তবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক প্রতিনিধি বা মন্ত্রী যুক্ত থাকতে পারেন না। একমাত্র আধিকারিকেরা সে কাজ করতে পারেন। কমিশনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘প্রশাসন নিজে তো বাড়ি তৈরি করে দেবে না। বরং উপভোক্তাকে সেই টাকা দেবে। সে ক্ষেত্রে তা ক্ষতিপূরণের মতোই। ক্ষতিপূরণের যে মানদণ্ড থাকে, সেই অনুয়ায়ী অর্থ কমিশনকে জানিয়ে দিলে কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement