নিউটাউনে অনুষ্ঠিত সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে মানিক সরকার এবং প্রকাশ করাট। —নিজস্ব চিত্র।
তাঁরাই লাইন পাতেন। তাঁরাই সেই লাইনে ভোটের এক্সপ্রেস ছোটান। কিন্তু সেই লাইনে ভোটের এক্সপ্রেস কি ঠিকঠাক ছুটছে? না কি লাইনচ্যুত হচ্ছে বারংবার? এ নিয়ে এত দিন পর্যন্ত দলীয় স্তরেই আলোচনা করত সিপিএম। কিন্তু ইতিহাসে এই প্রথম বার, নির্বাচনী কৌশলের পর্যালোচনা রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে চলেছে সিপিএম। যা কখনও হয়নি। শুক্রবার থেকে নিউ টাউনে শুরু হয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির (সিসি) বৈঠক। সেখানে পার্টি কংগ্রেসের প্রাক্কালে রাজনৈতিক রণকৌশল লাইন সংক্রান্ত খসড়া চূড়ান্ত হবে। পাশাপাশিই, গত পার্টি কংগ্রেস থেকে এই পর্যন্ত যে যে নির্বাচনী কৌশল নেওয়া হয়েছিল, তা ফলিত স্তরে কী হয়েছে, সাংগঠনিক অবস্থাই বা কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তারও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হবে।
সিপিএমের পরবর্তী পার্টি কংগ্রেস হবে আগামী এপ্রিলে তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরে। কলকাতার তিন দিনের বৈঠক থেকেই রাজনৈতিক খসড়া গৃহীত হবে। তার পর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের আগেই সর্বসমক্ষে আনবে সিপিএম। যেখানে দলীয় সদস্য থেকে সাধারণ মানুষ সংশোধনী পাঠাতে পারেন। শেষ পর্যন্ত তা গৃহীত হবে পার্টি কংগ্রেসে। কিন্তু রাজনৈতিক লাইনের ভিত্তিতে গৃহীত নির্বাচনী কৌশল সংক্রান্ত পর্যালোচনা এত দিন ‘অবারিত’ হত না। এ বার সেটাও করতে চলেছে তারা।
উল্লেখ্য, অতীতে ইএমএস নাম্বুদিরিপাদের সময়ে এক বার ২৫ বছরের নির্বাচনী পর্যালোচনা দলিল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তা-ও এই ভাবে নয়। সিপিএম সূত্রে খবর, এই পরিকল্পনা যখন গৃহীত হয়েছিল, তখন সীতারাম ইয়েচুরি জীবিত ছিলেন। প্রকাশ কারাটপন্থীদের অনেকে বলেছিলেন, সীতারাম যে সময় থেকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন, সেই থেকে এই পর্যন্ত ভোট-কৌশলের পর্যালোচনা দলিল তৈরি হোক। সিপিএম সূত্রে এ-ও খবর, তাতে কারাটই বেঁকে বসেন। সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘তেমনটা হলে মনে হত, গোটা সীতারাম-পর্বকে সমালোচিত করার মনোভাব দেখানো হচ্ছে। সেটা তাই হচ্ছে না।’’ গত তিন বছরের মেয়াদকে ধরা হচ্ছে। এর মধ্যে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, স্থানীয় স্তরের ভোট হয়েছে এবং সর্বশেষ বড় নির্বাচন ২০২৪ সালের লোকসভা হয়েছে। সেই সমস্ত ভোটে রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক অবস্থার পর্যালোচনা প্রকাশ্যে আনবে সিপিএম।
পরবর্তী পার্টি কংগ্রেস থেকে পরের তিন বছরের ‘লাইন’ ঠিক করবে সিপিএম। কিন্তু খসড়া গৃহীত হবে এই বৈঠকেই। পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর কারাট তা পেশ করার পর আলোচনা শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা। সূত্রের খবর, শুরুর দিন বাংলা থেকে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, বিজেপি-বিরোধিতার তীব্রতা রাখতে হবে রাজনৈতিক লাইনে। তবে কংগ্রেস সম্পর্কে তিনি ‘নরম’ মনোভাব দেখিয়েছেন বলেই খবর। পাল্টা কেরলের নেতৃত্ব কংগ্রেস সম্পর্কে তাঁদের অবস্থানে অনড়। কারণ, তাঁদের রাজ্যে কংগ্রেসই তাঁদের প্রধান বিরোধী দল। সেই প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের প্রশ্নে ফের এক বার সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলা এবং কেরলের দ্বিমত দেখা গিয়েছে। সীতারাম ছিলেন কংগ্রেসের প্রতি নরম। আবার কারাট চিরকালই কট্টরপন্থী। সীতারামের প্রয়াণের পরে ফের সিপিএম কারাট লাইনে ফিরবে কি না, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে। যদিও অনেকের বক্তব্য, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কারাট পুরনো অবস্থানে থাকবেন না। আবার সীতারামের মতো ‘নরম’ও হবেন না। ফলে মধ্যবর্তী কোনও একটি অবস্থান নিয়েই খসড়া চূড়ান্ত করবেন বলে দাবি সিপিএমের প্রথম সারির অনেকেরই।