ধর্নামঞ্চে হুমকি পোস্টারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের ময়দান থানায়। নিজস্ব চিত্র।
মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) নিয়ে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের মঞ্চে হুমকি পোস্টার। যার বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে সোমবার। আন্দোলনরত কর্মীদের ভয় দেখাতে কিছু দিন আগে ওই পোস্টার ফেলে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। রবিবার এই আন্দোলন নিয়ে রাজ্যের এক বিশিষ্ট নেতার মন্তব্যের পরেই পোস্টারগুলির বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
কী লেখা ছিল ওই হুমকি পোস্টারে?
ডিএ ধর্নামঞ্চে হুমকি পোস্টারে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে এই আন্দোলনকে ‘নাটক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘এই নাটক বন্ধ কর, নইলে বম্ব মেরে মঞ্চ উড়িয়ে দেব’। গত ৬ মার্চ ধর্নামঞ্চ পরিষ্কার করার সময় স্বেচ্ছাসেবকেরা এই পোস্টারগুলি পান।
সোমবার এই হুমকি পোস্টারের বিরুদ্ধে ময়দান থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন আন্দোলনকারীরা। এই পোস্টারে তাঁরা ভয় পাননি বলেও জানিয়েছেন। দাবি, ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না। আন্দোলনের নেতা এবং অন্যতম আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘গত ৬ তারিখ মঞ্চের পিছন দিক থেকে স্বেচ্ছাসেবকেরা একগুচ্ছ পোস্টার পান। আমরা তখন সেগুলিকে তেমন গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু গতকাল দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও কারও কথায় ওই পোস্টারে ব্যবহৃত শব্দবন্ধের মিল পাওয়ার পরে আমরা আশঙ্কিত হয়ে পড়ি। পুলিশকে জানালে তারা এফআইআর করার পরামর্শ দেয়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা আশঙ্কিত হলেও আতঙ্কিত বা ভীত নই। সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই সরকারি কর্মচারীরা এই মঞ্চে একত্রিত হয়েছেন। এই ধরনের পোস্টার দেখিয়ে আন্দোলন ভাঙার কোনও প্রচেষ্টা সফল হবে না। বরং এতে আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়বে।’’
আন্দোলনকারী রাজীব দত্ত বলেন, ‘‘গত ১০ মার্চ ধর্মঘটের পর থেকে স্কুল, কলেজ কিংবা অন্যত্র সরকারি কর্মচারীদের উপর আক্রমণ নেমে আসছে। অনেককে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, শাসকদলের নেতামন্ত্রীদের বাক্যবাণও কানে আসছে আন্দোলনকারীদের। তাই ধর্নামঞ্চে পোস্টার ফেলে যাওয়া একটি সুপরিকল্পিত ঘটনা বলে আমরা মনে করছি।’’
উল্লেখ্য, রবিবার কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ডিএ আন্দোলনকারীদের অনশনকে ‘নাটক’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। ধর্নামঞ্চের হুমকি পোস্টারেও ‘নাটক’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে। কে বা কারা ধর্নামঞ্চে এই ধরনের পোস্টার সেঁটে দিয়ে গেল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। থানায় কারও নাম না করেই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র বিশ্বজিৎ দে বলেন, ‘‘তৃণমূল কখনও হিংসাকে প্রশ্রয় দেয় না, সমর্থনও করে না। যাঁরা ডিএ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারের বদনাম করতে নিজেরাই ওই পোস্টার লাগিয়েছেন। ওই ধর্নামঞ্চকে মদত দিচ্ছে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস। এই ধরনের অপচেষ্টার কাছে সরকার মাথা নোয়াবে না।’’
ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন সম্প্রতি চতুর্থ সপ্তাহে পা দিয়েছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্যেরা। ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল রাজভবনে যায় রবিবার। রাজ্যপাল তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। জানিয়েছেন, তিনি নিজেও প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী। তাঁদের দাবি ন্যায্য। তা পূরণের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন রাজ্যপাল। অনুরোধ করেন আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ার।
তবে ডিএ আন্দোলনের নেতারা জানান, এখনই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। রাজ্যপালের আশ্বাসের পর কী পদক্ষেপ করা হয়, তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তার পরের দিনই ধর্নামঞ্চে হুমকি পোস্টার নিয়ে দায়ের হল এফআইআর।