রাজ্যাপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ফাইল ছবি।
রাজ্যের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানের পথে আরও এক ধাপ এগোল রাজভবন। সোম, মঙ্গলের পর বুধবারও রাজ্যাপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছ’জন উপাচার্য পদত্যাগপত্র জমা দিলে তাঁদের কার্যকালের মেয়াদ ৩ মাসের জন্য বৃদ্ধি করেন রাজ্যপাল।
রাজভবনের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় রাজ্যপালের কাছে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাবাসাহেব অম্বেডকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটি-র উপাচার্য। তাঁদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। তবে নতুন উপাচার্য নিয়োগ করা না পর্যন্ত ওই উপাচার্যদের আগামী ৩ মাসের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তদারকি উপাচার্য হিসাবে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে সোম, মঙ্গলেও একই ভাবে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্রাত্য। মঙ্গলবার বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠক করে ব্রাত্য বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, অস্থায়ী ভাবে তার সমাধানসূত্র দিয়েছেন রাজ্যপাল। ওই উপাচার্যদের মধ্যে ৭ জন গত কালের (সোমবারের) বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা গত কাল ইস্তফাপত্র দিয়েছিলেন। তবে রাজ্যপাল তাঁদের কার্যকালের মেয়াদ ৩ মাসের জন্য বৃদ্ধি করেছেন। বাকি উপাচার্যরাও ধাপে ধাপে একই পদক্ষেপ করবেন। সে জন্য বেশ কয়েক জন উপাচার্য রাজভবনে আজকের (মঙ্গলবারের) বৈঠকে ছিলেন এবং তাঁরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।’’
রাজভবন সূত্রে খবর, এই ৩ মাসের মধ্যে সার্চ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-র নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যপালই রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাঁর অধীনস্থ সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্যের পূর্বতন রাজ্যপাল থাকাকালীন জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের টানাপড়েনের মধ্যে যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য, তখন সে নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপালের কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাব গেলে রাজ্য প্রশাসনের কাছে কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাজ্য তার জবাব না দিয়েই পর দিন থেকে সোনালিকে ৪ বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ করে।
শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এ ভাবে আরও উপাচার্যের নিয়োগ হয়েছিল। কারণ, উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্যের সঙ্গে সংঘাতের পরেই রাজ্য সরকার নতুন বিল এনেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, পদাধিকারবলে মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যের অধীন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আচার্য’ হবেন। সেই বিল বিধানসভায় পাশ হয়ে গেলেও তাতে তৎকালীন রাজ্যপালের সম্মতি মেলেনি। কিন্তু ওই দ্বন্দ্বের মধ্যেই উপরাষ্ট্রপতি হয়ে চলে যান ধনখড়। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ওই পদ থেকে সরে যেতে হয় সোনালিকে। বাকি ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা জিইয়ে থাকে। এ বার সেই সমস্যারই জট খোলার জন্য অস্থায়ী ভাবে সমাধানসূত্র বার হল রাজভবনে।