প্রতীকী ছবি।
চোলাইয়ের রমরমা ঠেকাতে কম দামের দিশি মদ বাজারে আনার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে আবগারি দফতর। কী ভাবে এই মদ বাজারে ছাড়া হবে, কাদের উৎপাদন করতে দেওয়া হবে, দাম কী হবে এবং নতুন সস্তার মদ আনলে দিশির বাজারে প্রভাব কী পড়বে তার বিচার শুরু হয়েছে। আবগারি ডাইরেক্টরেটের তৈরি করা নীতি-পত্র নবান্ন অনুমোদন দিলে আগামী বিধানসভা ভোটের আগেই বাজারে আসতে পারে ৫০-৬০ টাকা বোতলের হলদে রঙের দিশি মদ। যা চোলাইপায়ীদের কাছে পছন্দের হবে বলেই আবগারি দফতর মনে করছে।
দফতর সূত্রের দাবি, বছরে এখন রাজ্যে গড়পরতা ৪০ কোটি বোতল দিশি মদ বিক্রি হয়। রাজ্য সরকার বরাবরই দিশি মদের গুণগত মান বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে। দিশি মদের বোতল এখন গড়ে ৮০ থেকে ১১৫ টাকায় পাওয়া যায়। গত দু’তিন বছরে এই দাম অনেকটাই বেড়েছে। আবগারি কর্তাদের অনেকের বক্তব্য, দাম বাড়ার ফলে খেটে খাওয়া মানুষের একটি বড় অংশ দিশি মদের বদলে চোলাই পানে উৎসাহিত হয়ে পড়েছে। কারণ, প্রতিদিন ১০০ টাকা খরচ করে দিশির বোতল কেনা অনেকের পক্ষে কুলোচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ, লকডাউন এবং তার জেরে কাজ হারানো মানুষের হাতে এখন রোজগারও কম। কিন্তু নেশার প্রবণতা তেমন কমেনি বলেই আবগারি কর্তারা জেনেছেন। তাই ক্রমেই রাজ্যে দিশির খরিদ্দাররা চোলাইয়ের পথে হাঁটছেন।
এক কর্তার কথায়, ‘‘দিশি মদের অর্ধেক দামে চোলাই পাওয়া যায়। বছরে ৪০ কোটি বোতল দিশি মদ বিক্রি হলেও চোলাইয়ের বাজার এর প্রায় অর্ধেক। বহু চেষ্টা করেও চোলাই কারবারীদের ঠেকানো যাচ্ছে না। এক মাত্র বিকল্প চোলাইয়ের সমতুল দামে সরকারি মদ নিয়ে আসা। তার ব্যাপক বিপণন করা। তা হলে অন্তত বহু মদ্যপায়ী চোলাই ছেড়ে সরকারি দিশি মদ পান করতে পারবেন।’’ কর্তাদের আরও আশঙ্কা, অর্থনীতির করুণ অবস্থার কারণে দিশির বিক্রি কমছে। যার অর্থ, চোলাইয়ের বিক্রি বাড়ছে। বিধানসভা নির্বাচনের বছরে অতীতের মগরাহাট বা তমলুকের মতো কোথাও যদি বিষমদে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে,তা হলে সরকারের মুখ পুড়বে। সেই কারণেই সস্তার দিশি আনতে উঠেপড়ে লেগেছে আবগারি কর্তারা।
বাজারে এখন ৫০ ডিগ্রি দিশি এবং ৬০ডিগ্রি দিশি বেশি বিক্রি হয়। এ ছাড়াও ডুয়ার্সের চা বাগান বা জঙ্গলমহল এলাকায় ৮০ডিগ্রির দিশি বিক্রি হয়। এই মদের দাম অনেক কম। নতুন যে সস্তার মদ আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা ৮০ডিগ্রি দিশির সমতুল। গুড় থেকে তৈরি হবে সেই মদ, রঙিনও হবে। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে নবান্নের অনুমোদন সাপেক্ষে।
নবান্নের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, আবগারি দফতরের প্রস্তাব এলে তা দেখেশুনে সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নতুন সস্তার মদ এলে রাজস্বের উপর কী প্রভাব পড়বে, তাও খতিয়ে দেখা হবে।