মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জগদীপ ধনখড়।
সব ঠিকঠাক চললে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বসতে পারে বিধানসভার বাদল অধিবেশন। আর সেই অধিবেশনেই আনা হতে পারে রাজ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য বদলের বিল। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করতে চায় রাজ্য সরকার। এই অধিবেশনেই আনা হতে পারে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভিসিটর’ পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে নিয়োগের বিলটিও। চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হয়েছে বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন। বছরের মাঝামাঝি সময়ে আবারও বসবে বিধানসভার অধিবেশন। জুন ও জুলাই মাসব্যাপী বাদল অধিবেশনে উঠতে পারে বিতর্কের ঝড়। কারণ, সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত পাশ হয়েছে। পাশাপাশি আলোচনা হয়েছে শিক্ষামন্ত্রীকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভিসিটর’ নিয়োগের বিষয়টিও।
কিন্তু তার আগে দুটি ক্ষেত্রেই রাজ্য বিধানসভায় বিল পাস করে সরকারি এই সিদ্ধান্তকে আইনে পরিণত করতে হবে। সোমবার বিধানসভায় এসেছিলেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিধানসভায় এসে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে গিয়েছেন তিনি। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী বাদল অধিবেশন নিয়ে আলোচনা করতেই পার্থ স্পিকারের কাছে এসেছিলেন। কিন্তু সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক মহলের একাংশের। কারণ রাজ্যপালকে আচার্য পদ থেকে সরানো নিয়ে পাশ বিল , সেই রাজ্যপালের কাছেই অনুমোদনের জন্য পাঠাবে নবান্ন। রাজ্যপাল বিলগুলিতে স্বাক্ষর না করলে তা কোনওভাবেই আইনে পরিণত হবে না।
ইতিমধ্যেই রাজ্যপালের সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া বেশ কয়েকটি বিল। ১৬তম বিধানসভায় গণপিটুনি রুখতে একটি বিল পাস করা হয়েছিল। সেই বিলটি রাজভবনে পাঠিয়েছিল বিধানসভা কর্তৃপক্ষ। তৎকালীন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী রাজ্যপালকে জানিয়েছিলেন, যে বিলটি বিধানসভায় পাশ করা হয়েছে, এবং যে বিলটি তাঁর কাছে স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হয়েছে, দুটি ভিন্ন। এমনটা জানার পর বিল সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছিল রাজভবন। রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, যতদিন না তাঁর প্রশ্নের সদুত্তর দিচ্ছে রাজ্য সরকার, ততদিন তিনি ওই বিলে স্বাক্ষর করবেন না। আবার গত বছর নভেম্বর মাসে হাওড়া পুর নিগম সংশোধনী বিল পাশ করে স্বাক্ষরের জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছিল সরকার। সেক্ষেত্রেও বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের কাছে ফেরত পাঠিয়ে ছিলেন বিলটি। দু'পক্ষের দড়ি টানাটানিতে বিলটি মাঝপথে আটকে রয়েছে। হাওড়া পুরসভা ও বালি পুরসভার নির্বাচন এই কারণে আটকে রয়েছে। আসানসোল পুরসভার ক্ষেত্রেও একটি বিল আটকে রয়েছে। তাই এমন সব অভিজ্ঞতা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের অনুমোদন কী আদৌ মিলবে? তা নিয়ে সন্দিহান রাজ্যের শিক্ষা মহল।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।