প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মুখ্যমন্ত্রীকে টেনে মন্তব্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। ফাইল ছবি।
‘চারপাশে এত দুর্বৃত্ত, দিদি একা সামলাতে পারছেন না’, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এমনটাই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গ টেনে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিদি’ নামে পরিচিত। বিচারপতির এই মন্তব্যে তাঁর দিকেই ইঙ্গিত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
আদালতে শুনানি চলাকালীন মানিকের মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তের প্রসঙ্গ উঠলে বিচারপতি জানান, মানিক সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য তিনি নিজেও জানেন। উঠে আসে মানিকের লন্ডনের বাড়ির প্রসঙ্গ। মামলার তদন্ত সিবিআই করছে না আদালত, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি।
বুধবার মানিকের প্রসঙ্গে ভরা এজলাসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘দিদি একা আর সামলাতে পারছেন না। চারপাশে এত দুর্বৃত্ত থাকলে তিনি সামলাবেন কী করে?’’ এ প্রসঙ্গেই ভূপেন হাজারিকার ‘হাজার টাকার বাগান খাইলো পাঁচ সিকার ছাগলে!’ গানটি স্মরণ করেছেন বিচারপতি।
মানিকের দু’টি পাসপোর্টের হদিস পাওয়া গিয়েছে। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘মানিক ভট্টাচার্য এখনও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি, এটা লজ্জার বিষয়। অর্থাৎ, তিনি ফিরে এসে আবার এ সব শুরু করবেন। রাজ্যটা কি এ ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে?’’
মানিক সম্পর্কে অনেক তথ্য তাঁর জানা আছে, এজলাসে তার প্রমাণ দেন বিচারপতি নিজেই। তিনি জানান, লন্ডনের কোথায় মানিকের বাড়ি রয়েছে, তা তিনি জানেন। তিনি এ-ও জানেন, সেই বাড়ির পাশে এমন এক জনের বাড়ি রয়েছে, যিনি নিজেও রাজনৈতিক নেতা। সিবিআইয়ের প্রতি বিচারপতির পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কত বার লন্ডনে গিয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য? তাঁর বাড়ির ঠিকানা জানেন? আমি বলতে পারি? শুনবেন? লন্ডনে তাঁর বাড়ির পাশে কার বাড়ি জানেন? আমি জানি।’’
মানিক মামলার তদন্তে গত দু’সপ্তাহে অনেক অগ্রগতি হয়েছে বলে বুধবার আদালতে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘আমরা কিছু এসএমএস উদ্ধার করতে পেরেছি। তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কিছু সূত্রও আমরা পেয়েছি মানিক ভট্টাচার্যর কাছ থেকে।’’ মানিকের যে দু’টি বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে, তার কথা আদালতে জানাতেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এই মামলার শুনানিতে আগেই মঙ্গলবার সিবিআই আধিকারিক সোমনাথ বিশ্বাসকে তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গে বুধবার সিবিআইয়ের আবেদন ছিল, ‘‘তিন সপ্তাহ পরে আমরা রিপোর্ট পেশ করব। তার পর তদন্তকারী আধিকারিক সোমনাথ বিশ্বাসকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হোক।’’ তবে সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি।