Jogesh Chandra Choudhuri College

পুলিশ প্রহরায় চলল পুজো, যোগেশচন্দ্রে ব্রাত্য, মালা ঢুকতেই আইন পড়ুয়াদের ‘বিচার চাই’ স্লোগান

বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে হাই কোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল। পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, তার পরেও ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ হয়নি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৩৬
Share:
কলেজে বিক্ষোভের মুখে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

কলেজে বিক্ষোভের মুখে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। — নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে কড়া পুলিশি প্রহরায় যোগেশচন্দ্র কলেজের ভিতরে হল আইন বিভাগের পুজো। সেই পুজো দেখতে গিয়ে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, স্থানীয় সাংসদ মালা রায়। তাঁদের দেখে পাল্টা ‘বিচার চাই’ স্লোগান দিতে শুরু করেন আইনের ছাত্র-ছাত্রীরা। তাঁরা দাবি তোলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে হাই কোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল। পড়ুয়াদের অভিযোগ, তার পরেও ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ব্রাত্য চার জন ছাত্রীকে কথা বলার জন্য অধ্যক্ষের ঘরে ডেকে পাঠান। বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলার পরে প্রতিমা দর্শন করে কলেজ থেকে বেরিয়ে যান তিনি। মালা জানিয়েছেন, এত দিন এ বিষয়ে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। তবে পড়ুয়ারা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ুক, তা চান না তিনি।

Advertisement

রবিবার সকাল থেকে কলেজের বাইরে সশস্ত্র পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ মেনে পরিচয়পত্র দেখে তবেই পড়ুয়াদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে কলেজের ভিতরে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার অজয় প্রসাদ নিজেও যান কলেজে। এর মধ্যেই কলেজে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। পড়ুয়াদের অভিযোগ, হাই কোর্টের নির্দেশের পরেও কলেজে বহিরাগতেরা প্রবেশ করে চলেছেন। ছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের অশালীন ভাষায় হুমকিও দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিক্ষোভ দেখিয়ে ‘বিচার চাই’ স্লোগান তোলেন তাঁরা। এর পরেই চার ছাত্রীকে অধ্যক্ষের ঘরে ডেকে বৈঠক করেন ব্রাত্য। বৈঠক শেষে কলেজ থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

(বাঁ দিকে) কলেজের বাইরে রয়েছেন পুলিশকর্মীরা। যোগেশচন্দ্র আইন কলেজের পুজোর প্রতিমা (ডান দিকে)

(বাঁ দিকে) কলেজের বাইরে রয়েছেন পুলিশকর্মীরা। যোগেশচন্দ্র আইন কলেজের পুজোর প্রতিমা (ডান দিকে) — নিজস্ব চিত্র।

রবিবার দুপুরে আইন কলেজের পুজো দেখতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন স্থানীয় সাংসদ তথা কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য মালা রায়। কলেজ থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পুজোর দিনে ‘বিচার চাই’ স্লোগান শুনব না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব রকম পুজো, উৎসবে উৎসাহ দেন। সেই মতো সব ছাত্র-ছাত্রী পুজোয় শামিল হবেন, এটাই চাইব।’’ তিনি এ-ও দাবি করেছেন, এর আগে কোনও দিন তাঁকে এই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা কোনও অভিযোগ জানাননি। তাঁর কথায়, ‘‘রবিবার অভিযোগ জানাল। আমি কথা বলে নেব। আমরা চাইব না, পড়ুয়ারা রাজনীতিতে জড়াক।’’

Advertisement

গত শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট যোগেশচন্দ্র আইন কলেজে পুলিশ মোতায়েন করে সরস্বতী পুজোর অনুমতি দেয়। উচ্চ আদালত জানায়, বহিরাগতেরা যাতে কলেজে প্রবেশ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করবে পুলিশ। কলেজে কারা প্রবেশ করছেন, কারা বার হচ্ছেন, তার উপরও নজর দিতে হবে। এর পরেও বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ে সরস্বতী পুজোর দিন বিক্ষোভ দেখালেন আইন বিভাগের পড়ুয়ারা।

যোগেশচন্দ্র আইন কলেজ এবং যোগেশচন্দ্র ডে কলেজের ক্লাস হয় একই ক্যাম্পাসে। আইন কলেজের এক পড়ুয়া তাঁদের কলেজ চত্বরে সরস্বতী পুজো করতে চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। মামলাকারী অভিযোগ করেছিলেন, যে জায়গায় তাঁরা পুজো করে এসেছেন, তা দখল করেছে ডে কলেজ। আদালতে ডে কলেজের তরফে দাবি করা হয়, পুজোর জায়গায় অস্থায়ী নির্মাণ তৈরি করেছেন বহিরাগতেরা। এই বহিরাগতদের কলেজে প্রবেশের উপর আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি কলেজে এই বহিরাগতদের ‘উপদ্রব’ আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শুক্রবার পুলিশ মোতায়েন করে সরস্বতী পুজোর কথা জানিয়ে দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই যোগেশচন্দ্র কলেজে সরস্বতী পুজোর দিন বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠল। শিক্ষামন্ত্রী, সাংসদকে দেখে স্লোগান দিলেন একদল আইনের পড়ুয়া।

যোগেশচন্দ্র কলেজের বাইরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে টাঙানো হয়েছে ব্যানার। — নিজস্ব চিত্র।

অন্য দিকে, মূল ক্যাম্পাসে পুজো করতে না পেরে বিক্ষোভ দেখান যোগেশচন্দ্র ডে কলেজের পড়ুয়ারাও। তাঁদের দাবি, ক্যাম্পাসের ভিতরে পুজো করতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। বাধ্য হয়ে কলেজের বাইরে ইন্দ্রাণী পার্কের সামনে পুজোর আয়োজন করেছেন তাঁরা। এই নিয়ে আঙুল তুলেছেন কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়ের দিকে। অন্য দিকে, অধ্যক্ষ কলেজের ভিতরে নিজের উদ্যোগে ছোট প্রতিমা বসিয়ে পুজো করেছেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ উড়িয়ে তিনি জানিয়েছেন, হাই কোর্টের নির্দেশে পুজোর জন্য কমিটি গড়ে দিয়েছেন। টাকা দিয়েছেন। তার পরেও তাঁকে পুজো নিয়ে কিছুই জানানো হয়নি। সেই টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হয়েছে, তা তিনি জানেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement