বাঁ দিকে কুন্তল ঘোষ এবং ডান দিকে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডির নজরে এখন এই দু’জনের ‘সম্পর্ক’। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এক জন ইডির হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে। অন্য জনকেও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে বার পাঁচেক ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হুগলি বলাগড়ের দুই যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ব্যবসায়িক যোগসূত্রও রয়েছে বলে মনে করছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কর্তারা।
কুন্তলের ব্যবসায়িক ক্ষেত্র শুধুমাত্র শিক্ষা জগতেই নয়, তার উপস্থিতি রয়েছে বাংলা বিনোদন জগতেও। সেই ব্যবসার খোঁজখবর করতে গিয়েই, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি বানানোর এক সংস্থার অংশীদার হিসাবে কুন্তলের পাশাপাশি শান্তনুর পরিবারের এক সদস্যের নাম পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। ওই সংস্থার আর্থিক লেনদেন এবং অংশীদারিত্বের বিষয়টি এখন ইডির আতসকাচের তলায়।
২০১৫ সালে ওই সংস্থা তৈরি করেন কুন্তলরা। ইডি সূত্রে খবর, নথি অনুযায়ী ৫ লক্ষ টাকার প্রাথমিক পুঁজির ওই সংস্থায় অংশীদার ৬ জন। সবচেয়ে বেশি অংশ রয়েছে কুন্তলেরই। ২ লক্ষ টাকা। ৫০ হাজারের অংশীদার শান্তনুর স্ত্রী বলে ইডি সূত্রে দাবি। সরাসরি শান্তনুর অংশীদারিত্ব না থাকলেও, শান্তনুর স্ত্রীর ১০ শতাংশ অংশীদারিত্বের প্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে বলে এক ইডি আধিকারিকের দাবি। এই বিষয়ে শান্তনুর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, এর আগে কুন্তল দাবি করেছেন, শান্তনুর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত বা অন্য কোনও যোগাযোগ নেই। এমনকি তিনি শান্তনুকে চেনেনও না।
কুন্তলদের ছবি তৈরির সংস্থাটির অফিস রয়েছে কসবায়। সেই অফিসে পরিচিত এক অভিনেত্রী এবং এক অভিনেতার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাঁদের বিষয়েও খোঁজখবর রাখছে ইডি।
সামাজিক মাধ্যমে এই সংস্থার একটি ভিডিয়ো চ্যানেল রয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, ওই সংস্থার তৈরি ‘ভ্যালেনটাইন স্পেশাল’ একটি মিউজিক্যাল শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছেন বিনোদন জগতের এক পরিচিত অভিনেত্রী। সংস্থার তৈরি একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল বলেও জানা গিয়েছে। এই ভিডিয়ো বা ছবি তৈরির অর্থ কোথা থেকে এসেছে তা খতিয়ে দেখছে ইডি। বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, নিয়োগ দুর্নীতির টাকা এখানে বিনোয়োগ করা হয়েছিল কি না।
রাজারহাট-নিউ টাউনে এক অভিজাত আবাসনে কুন্তলের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। একই দিনে হুগলির বলাগড়ে শান্তনুর বাড়িতেও রাত পর্যন্ত তল্লাশি চলে। এতে চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা-সহ একাধিক নথি উদ্ধার হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
গত ২১ জানুয়ারি কুন্তলকে গ্রেফতার করে ইডি। ১৪ দিন ইডি হেফাজতে থাকার পর শুক্রবার ব্যাঙ্কশালের বিশেষ ইডি আদালত তাঁকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। বিনোদন জগতে কুন্তলের অর্থ বিনিয়োগ নিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে চাইছেন ইডি আধিকারিকরা। এই অর্থের উৎস জানতে ইডি জেলে গিয়ে কুন্তলকে আরও জেরা করাতে চায়। ইডির এই আবেদন মঞ্জুরও করেছেন বিশেষ আদালতের বিচারক।