শুভেন্দু অধিকারী।
গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করেছে তৃণমূল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কতটা ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’, সেই অভিযোগ করতে গিয়েই এ কথা বললেন শুভেন্দু অধিকারী। অভিযোগ, শুধু তিনিই নন, তাঁর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জানান, গত বছর ২ মে, যে দিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয়, তার পর থেকে রাজ্য সরকার মোট ২৯টি মামলা দায়ের করেছে তাঁর ও তাঁর ভাই সৌমেন্দুর বিরুদ্ধে। শুভেন্দুর দাবি, সেই সব মামলা চালাতে রাজস্বভান্ডার থেকে ইতিমধ্যে ২০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।
যদিও শুভেন্দুর এই অভিযোগ ও দাবিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘ওঁর (শুভেন্দু) কথার কোনও সারবত্তা নেই।’’ শাসকদলের পাল্টা কটাক্ষ, কেন্দ্রের মোদী সরকার তো তৃণমূলের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা লাগিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। সেই টাকা তা হলে কোথা থেকে আসছে?
রবিবার মহালয়ার দিন দলীয় মুখপত্রের উৎসব সংখ্যা প্রকাশের মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, তাঁর সরকার মোটেই প্রতিহিংসাপরায়ণ নয়। যদি সে রকম হত, তা হলে অনেকেই গ্রেফতার হতে পারতেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। বদলা নয়, বদল চাই বলেছিলাম বলেই ৩৪ বছরের কাউকে গ্রেফতার করিনি। অনেক কর্মকাণ্ড থাকা সত্ত্বেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।’’ নাম না করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেও নিশানা করেন মমতা। বলেন, ‘‘আর যাঁরা দিল্লিতে বসে আছেন...। তাঁদের লাড্ডু যিনি খেয়েছেন, তিনি পস্তেছেন। যিনি খাননি, তিনিও পস্তেছেন। মনে রাখবেন, ওদের মাথার উপরে চন্দ্র, সূর্ষ, গ্রহ, তারার মতো নানা রকম এজেন্সি বসে আছে। যারা চোখে দেখেও দেখতে পায় না।’’
মমতার এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই সোমবার শুভেন্দু বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের ফল ঘোষণার পর থেকে আমার আর আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মোট ২৯টি মামলা দায়ের এই রাজ্য সরকার। তার মধ্যে আমার বিরুদ্ধে ২১টি মামলা আর আমার ভাই সৌমেন্দু (কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান)-র বিরুদ্ধে ৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। এই সব মামলার জন্য রাজ্য সরকারের রাজস্ব থেকে ২০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।’’ বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, বিরোধী শিবিরকে জব্দ করতে রাজ্যের মানুষের করের টাকা দিয়ে মামলা লড়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘যে টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করার কথা, সেই টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে বিরোধী দলনেতাকে জব্দ করার জন্য।’’
শুভেন্দু এখানেই থামেননি। তাঁর আরও দাবি, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলার জন্য রাজ্যের তহবিল থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ওই টাকা দেওয়া হয়েছে আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে। শুভেন্দু বলেন, ‘‘এর থেকেই বোঝা যায়, উনি কতটা রাজ্যের মানুষের জন্য ভাবেন।’’
বিরোধী দলনেতাকে পাল্টা বিঁধেছে তৃণমূলও। তৃণমূলের এক রাজ্য স্তরের নেতা বলেন, ‘‘শুভেন্দু যা অভিযোগ করছেন, তার কোনও প্রমাণ নেই। শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে যে ভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার টাকা কোথা থেকে আসছে?’’ শুভেন্দুর কথায় কোনও গুরুত্ব না দিয়ে তাপস বলেন, ‘‘অভিযোগ করা এখনও শুভেন্দুর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অভ্যাস বশতই অভিযোগ করে যাচ্ছেন উনি। ওঁর অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। তাই, ওঁর কথার জবাব দেওয়ার কোনও প্রয়োজন মনে করছি না আমরা।’’