Mamata-Suvendu

মুখ্যমন্ত্রী ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন বিরোধীদের কাছে, সৌজন্য সাক্ষাতের পরদিনই কটাক্ষ শুভেন্দুর

বিরোধী দলনেতাকে পাল্টা নিশানা করেছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে সৌজন্যের নজির তৈরি করছেন, সেখানে শুভেন্দুর মন্তব্য চরম ‘অসৌজন্য’ বলে মন্তব্য করেন শাসকদলের মুখপাত্র তাপস রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২২ ১৯:১৪
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল ছবি।

২৪ ঘন্টার মধ্যেই বাংলার রাজনীতি পুনর্মূষিকভব! সৌজন্য-টৌজন্য উড়ে গিয়ে আবার বেরিয়ে এল পারস্পরিক আক্রমণের কঙ্কাল। মুখ্যমন্ত্রীর চা খাওয়ার আহ্বানে তাঁর বিধানসভার ঘরে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আসার পরদিনই বিরোধী বিরোধী দলনেতা বলে বসলেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন!

Advertisement

শুক্রবারেই বিধানসভা ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর ঘরে চা খেতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। ঘরে ঢুকে শুভেন্দু মমতার পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেছিলেন। যদিও সময়ের অপ্রতুলতায় চা খাওয়া হয়নি শুভেন্দু এবং তাঁর সঙ্গী বিজেপির আরও তিন বিধায়কের। তবে শাসক এবং বিরোধী শিবিরের দুই সরাসরি যুযুধানের মধ্যে আচমকা সেই সাক্ষাৎ রাজ্য-রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার ‘স্বমহিমা’য় ফিরে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন শুভেন্দু। কটাক্ষের সুরে বিরোধী দলনেতা বললেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। নিজের থুতু নিজেই চেটেছেন!’’ পাশাপাশিই তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব।’’

বিরোধী দলনেতাকে পাল্টা নিশানা করেছে তৃণমূলও। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে সৌজন্যের নজির তৈরি করছেন, সেখানে শুভেন্দুর মন্তব্য ‘চরম অসৌজন্যের’ বলে মন্তব্য করেছেন শাসক তৃণমূলের মুখপাত্র বিধায়ক তাপস রায়। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধী দলনেতা যে কথা বলেছেন, তা চরম অসৌজন্যের। সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণও বটে।’’

Advertisement

শনিবার ঠাকুরনগরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে একটি জনসভায় যোগ দেন শুভেন্দু। তার আগে ঠাকুরবাড়িতে এসে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দেন বিজেপি বিধায়ক। একান্তে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে। এর পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি সংসদীয় ব্যবস্থার প্রোটোকলও জানি, বিরোধিতাও জানি। ওঁরা জানেন না। জানেন না বলেই কিছু দিন আগে এই মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি ইন্ডোরে বলেছেন, এই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা (কেন্দ্রকে) চিঠি পাঠান (বকেয়া) টাকা আটকানোর জন্য। তাঁর নাম মুখে আনতে ঘৃণা হয়! উনি (মুখ্যমন্ত্রী) কাল নিজের থুতুই চেটেছেন!’’ বৃহস্পতিবার বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বক্তৃতা করতে গিয়ে শুভেন্দু সম্পর্কে ‘ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম’ বলে মন্তব্যে করেছেন। তা নিয়েও কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘বলেছেন, স্নেহের ভাই। ছিলাম, পাস্ট টেন্সে (অতীতে)। এখন নেই।’’

মমতা-শুভেন্দুর সাক্ষাৎ নিয়ে জোর চর্চার মধ্যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অধিকারীদের ঠিকানা শান্তিকুঞ্জে চায়ের আমন্ত্রণ করেছেন তমলুকের সাংসদ তথা শুভেন্দুর দাদা দিব্যেন্দু অধিকারী। দিব্যেন্দু খাতায়কলমে তৃণমূল সাংসদ হলেও তাঁর সঙ্গে দলের সম্পর্ক ‘মসৃণ’ নয়। শান্তিকুঞ্জের গৃহকর্তা তথা কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই অবস্থায় অভিষেককে শান্তিকুঞ্জে চা-চক্রের জন্য আমন্ত্রণে অনেকের মনেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তা নিয়েও মন্তব্য করেন শুভেন্দু। বলেন, ‘‘তোলাবাজ ভাইপোর সঙ্গে কী আছে! আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নন্দীগ্রামে হারিয়েছি। গণতান্ত্রিক ভাবেই মমতাকে হারিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব। আমি এই ঠাকুরবাড়ির পবিত্রভূমিতে বলে গেলাম।’’

শুভেন্দুর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বরাহনগরের বিধায়ক তাপসের কটাক্ষ, শুভেন্দুরই প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার তো মনে হয়, এমন কথা বলে উনিই না প্রাক্তন হয়ে যান! এমন সম্ভাবনা তো প্রবল রয়েইছে। প্রাক্তন বিধায়কও হতে পারেন, আবার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতাও হতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কিছু বলার আগে এই কথাগুলো যেন উনি মাথায় রাখেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement