সুপ্রিম কোর্টে খারিজ এনআইএর আবেদন, তেলতুম্বডের জেল থেকে মুক্তিতে আর বাধা রইল না। — ফাইল ছবি।
বম্বে হাই কোর্ট জামিন মঞ্জুর করেছিল আগেই। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল এনআইএ। এ বার সুপ্রিম কোর্টেও খারিজ হয়ে গেল এনআইএর আবেদন। অবশেষে জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন শিক্ষাবিদ আনন্দ তেলতুম্বডে। এলগার পরিষদ মামলায় ২০২০-তে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
শুক্রবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এনআইএর আবেদন খারিজ করে দেয়। এনআইএ আবেদন জানিয়েছিল, গত ১৮ নভেম্বর বম্বে হাই কোর্টের দেওয়া আনন্দের জামিনের রায় খারিজ করুক শীর্ষ আদালত। কিন্তু আবেদন ঘিরে উভয় পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আমরা এই আবেদন গ্রহণ করার কোনও কারণ দেখছি না।’’ তার পরই খারিজ হয়ে যায় তদন্তকারী সংস্থার জামিন বাতিলের আবেদন।
বম্বে হাই কোর্ট আনন্দের জামিন মঞ্জুর করেছিল ঠিকই কিন্তু পাশাপাশি এনআইএর আবেদন মেনে তাঁকে এক সপ্তাহ জেল থেকে মুক্তি না দেওয়ার রায় দেয়। এই সময়ের মধ্যে এনআইএকে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে হত। সেই মতোই এনআইএ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সেই মামলা ওঠে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। কিন্তু শুক্রবার এনআইএর আবেদন খারিজ করে দিলেন বিচারপতিরা। এর ফলে মহারাষ্ট্রের তালোজা জেল থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন আনন্দ।
এনআইএর পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি সওয়াল করেন, তেলতুম্বডে এবং তাঁর সহযোগীদের কাছ থেকে এমন কিছু নথি পাওয়া গিয়েছে যা তদন্তে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই অবস্থায় অভিযুক্ত মুক্তি পেলে তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পাল্টা তেলতুম্বডের আইনজীবী কপিল সিব্বল সওয়াল করেন, যে সমস্ত নথির কথা এনআইএ বলছে, তার একটিও তেলতুম্বডের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার মক্কেল একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং এজেন্সি এমন একটিও নথি জমা দিতে পারেনি যেখানে লেখা আছে তেলতুম্বডে পুণের অনুষ্ঠানে যেখানে প্ররোচনামূলক ভাষণ দেওয়ার দাবি করা হচ্ছে, সেখানে হাজির ছিলেন।’’
২০১৮-র ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁওয়ে দলিত ও উচ্চবর্ণের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তাতে এক দলিত যুবকের মৃত্যু হয়। দলিতদের উপর হামলার অভিযোগে হিন্দুত্ববাদী দুই নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। এই মামলাতেই একে একে গ্রেফতার করা হয় সুধীর ধাওয়ালে, সোমা সেন, সুধা ভরদ্বাজ, গৌতম নওলখা, অরুণ পেরেরা, রোনা উইলসন, আনন্দ তেলতুম্বডে, ভারাভারা রাও, হানি বাবু, ভার্নন গঞ্জালভেস, সুরেন্দ্র গ্যাডলিংয়ের মতো ব্যক্তিত্বকে। ‘আরবান নকশাল’ তকমা দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে সিপিআই (মাওবাদী)-র সঙ্গে যোগাযোগ, ভীমা-কোরেগাঁওয়ে হিংসা ছড়ানো ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে হত্যার চক্রান্তের অভিযোগ আনা হয়। আনা হয় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ। জুড়ে দেওয়া হয় ইউএপিএ-র মতো ভয়ঙ্কর আইনে আনা মামলা, যাতে ধৃতেরা চটজলদি জামিন না পেতে পারেন।
সেই মামলাতেই সুপ্রিম কোর্টেও জামিন পেলেন আনন্দ।