—প্রতীকী ছবি।
পুরসভায় নিয়োগ মামলায় রাজ্যের আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। স্কুলের পাশাপাশি পুরসভার নিয়োগ মামলাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু সেই তদন্তের বিরোধিতা করে নতুন করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। কিন্তু সোমবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ রাজ্যের সেই আর্জি খারিজ করে দিল। অর্থাৎ, পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের যে নির্দেশ হাই কোর্ট দিয়েছিল, তা বহাল থাকছে।
শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির সূত্র খুঁজে পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি। ঘুষের টাকা কার কার মধ্যে হাতবদল হয়ে কোথায় পৌঁছেছে, সেই সন্ধানও পেয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। পুরসভার নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত যে অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছিল, তদন্ত চালিয়ে হাই কোর্টে তার রিপোর্ট ইতিমধ্যেই জমা করেছেন তদন্তকারীরা। পুরো বিষয়টিতে শীর্ষ আদালত সন্তুষ্ট। এই কথা জানিয়েই রাজ্যের করা আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির আইনজীবী জানিয়েছিলেন, পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ঘুষের টাকা হাতবদল হয়ে কার কার কাছে পৌঁছেছে, তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে তদন্তকারীদের কাছে। তদন্তকারীরা এই সংক্রান্ত প্রমাণও হাতে পেয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে সেই নথি এখনই আদালতে পেশ করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষ হলেই চার্জশিট দায়ের করা হবে।
প্রসঙ্গত, পুর নিয়োগ মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরে বেঞ্চ বদলে মামলাটি যায় বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চে। সেখানেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল রাখা হয়। সিঙ্গল বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রথমে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য। সেখানে মামলা চলাকালীন তারা সুপ্রিম কোর্টেও স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি) দায়ের করে।
হাই কোর্টে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে পুর নিয়োগ মামলার শুনানি চলছিল। কিন্তু রাজ্য ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের আগেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে শুনে বিচারপতি অসন্তুষ্ট হন। রাজ্যকে ভর্ৎসনাও করা হয়। সেই সময় রাজ্যের তরফে শীর্ষ আদালত থেকে মামলাটি তড়িঘড়ি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টে মামলা প্রত্যাহারের পর হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আবার মামলাটি শোনে। কিন্তু তারাও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখেছিল। সেই নির্দেশ শোনার পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। কিন্তু সোমবার সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে রাজ্যের করা আর্জি খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট।
গত ১৯ মার্চ নিয়োগ মামলায় অয়ন শীলকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। ইডির তরফে দাবি করা হয়, অয়নের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) পাওয়া গিয়েছে। ইডি সূত্রে এ-ও জানা যায়, জেরায় অয়ন তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, বিভিন্ন পুরসভায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি মোট ২০০ কোটি টাকা তুলেছিলেন। এর পরেই আতশকাচে আসে পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি।