ধর্মঘটের দিন ঠিক এবং দিন বদলানোর পিছনেও রয়েছে এক সরল অঙ্ক। ৭ মার্চ, মঙ্গলবার দোল। পরের দিন, ৮ মার্চ বুধবার হোলির ছুটি দিয়ে রেখেছে রাজ্য সরকার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) চাই। মূলত এই দাবিতেই আগামী ৯ মার্চ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি। তবে ৯ মার্চ মাধ্যমিকের শারীরশিক্ষার পরীক্ষা এবং মাদ্রাসা বোর্ডের দ্বিতীয় ভাষার পরীক্ষা থাকায় ধর্মঘট পিছিয়ে ১০ মার্চ করেছে আন্দোলনরত সংগঠনগুলি।
ধর্মঘটের দিন ঠিক এবং দিন বদলানোর পিছনেও রয়েছে এক সরল অঙ্ক। ‘ছুটি’ পাইয়ে দেওয়ার অঙ্ক। ৭ মার্চ, মঙ্গলবার দোল। পরের দিন, ৮ মার্চ বুধবার হোলির ছুটি দিয়ে রেখেছে রাজ্য সরকার। এর পরের দিন, ৯ তারিখ ধর্মঘট ডাকার ক্ষেত্রে কৌশলগত ভাবে ‘উপযুক্ত’ ছিল। সেই দিনটি বদলালেও যে দিন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, সেই ১০ মার্চ শুক্রবার। পরের দু’দিন শনি আর রবি। ছুটি। ফলে পর পর তিনদিনই কাজ নেই।
অতীতেও এমন অনেক উদাহরণ এই রাজ্যে দেখা গিয়েছে। যেমন বাম বা কংগ্রেস ভারত বন্ধের ডাক দিত এমন ছুটির অঙ্ক। সাধারণ ভাবে সোম বা শুক্রবারকে বন্ধ ডাকার জন্য বাছা হত। আবার অন্য কোনও কারণে ছুটি, এমন দিনের আগের দিন বা পরের দিন বন্ধ ডাকারও উদাহরণ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক কারণে সমর্থন না থাকলেও সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ছুটির টানে বন্ধে সামিল হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
বিরোধীদের ডাকা যে কোনও বন্ধ বা ধর্মঘটকে কড়া হাতেই মোকাবিলা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার। বস্তুত, মমতার হুঁশিয়ারিতেই বৃহস্পতিবারের প্রস্তাবিত পাহাড় বন্ধের কর্মসূচি থেকে পিছু হটেছেন বিনয় তামাঙেরা। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দু’দিনের কর্মবিরতির সময় নবান্ন বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষণা করেছিল, ওই কর্মবিরতিতে অংশ নিয়ে সরকারি দফতর, স্কুল বা কলেজে না এলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের শো-কজ করা হবে। ১০ মার্চের ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের তরফে তেমন কড়া পদক্ষেপ করারই সম্ভাবনা। অতীতে ধর্মঘট রুখতে আগের দিন থেকে কর্মচারীদের দফতরে রেখে দেওয়ার উদ্যোগও নিতে দেখা গিয়েছে। এবার তা হয় কি না, সেটাও দেখার।
বাঙালি যে ছুটিপ্রিয়, সে সত্য এবং তথ্য সকলেরই জানা। অতীতে বামেদের ডাকে ভারত বন্ধ বাকি দেশে ছাপ ফেলতে না পারলেও কম আয়াসে সেটি বাংলায় ‘সফল’ করে ফেলা যেত। যদিও বিরোধীদের দাবি ছিল, রাজ্য সরকারের ‘সক্রিয় সমর্থন’-এই সফল হত সেই সব ধর্মঘট। তবে ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূল সরকার বন্ধ-বিরোধী নীতি ঘোষণা করে। কিন্তু বিরোধীরা বলেন, বন্ধ হতে না-দিলেও বাঙালির ছুটির চাহিদা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘অন্য ভাবে’ পুষিয়ে দিয়েছেন। তালিকা বলছে, মমতার আমলে রাজ্যে ছুটির সংখ্যা অতীতের থেকে বেড়েছে। কোনও সাধারণ ছুটির দিন রবিবার পড়লে রাজ্য সরকার তার ‘পরিবর্ত ছুটি’ ঘোষণা করেছে। জামাইষষ্ঠী বা ছটপুজোয় অর্ধদিবস ছুটিও শুরু হয়েছে।
যেমন, গত ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনই ছিল সরস্বতী পুজো। বিষয়টি খেয়াল রেখে আগে থেকেই ২৫ জানুয়ারি ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছিল রাজ্য। চলতি বছরে ইদেও দু’দিনের ছুটি রয়েছে। ১৫ নভেম্বর ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার ছুটি। সে দিন আবার বীরসা মুণ্ডার জন্মদিন। পরের দিন ১৬ নভেম্বরও থাকছে ছুটি। তার আগে ১২ নভেম্বর কালীপুজো। সে দিনটি রবিবার। কালীপুজো উপলক্ষে তাই অতিরিক্ত ছুটি থাকছে ১৩ এবং ১৪ নভেম্বর। একই ভাবে ছটপুজো ১৯ নভেম্বর। সে দিন রবিবার হওয়াতে ছুটি থাকবে পরের দিন, ২০ নভেম্বর।
ছুটির ঘণ্টাই কি শোনা যাচ্ছে এধর্মঘট ডাকার মধ্যে? প্রশ্ন করায় কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘আমরা কোনও অঙ্ক কষে বন্ধ (ধর্মঘট) ডাকিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের হাতে সময় কম। সেই কারণেই ১০ মার্চ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তার পরের দু’দিন যে ছুটি, সেটা আমাদের হিসাবের মধ্যে নেই।’’ তবে তৃণমূল সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এমন কৌশল অতীতে অনেক দেখা গিয়েছে। তবে এ বার সেই কৌশল কাজে দেবে না। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করবে বলেই মনে হয়। আমার তো মনে হয়, সাধারণ দিনের থেকেও বেশি, মানে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত হাজিরা থাকবে ১০ মার্চ।’’