‘তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র সদস্যপদ ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার শালডিহা হাইস্কুলের ৩২ শিক্ষক-শিক্ষিকা। —নিজস্ব চিত্র।
বকেয়া ডিএ এবং শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবদাওয়া নিয়ে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের অবস্থান স্পষ্ট নয়। এই অভিযোগ তুলে শাসকদলের শিক্ষক সংগঠন থেকে একসঙ্গে ইস্তফা দিলেন বাঁকু়ড়ার ৩২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। সোমবার রাতে গণইস্তফার পর মঙ্গলবার স্কুলে গিয়ে কর্মবিরতিও পালন করেন তাঁরা। যদিও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই কর্মসূচির জেরে মঙ্গলবার স্কুলের পঠনপাঠন প্রভাব পড়েনি বলে দাবি সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের।
বাঁকুড়ার ইন্দপুর ব্লকের শালডিহা হাইস্কুলের ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা সোমবার রাতে ‘তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র সদস্যপদ ছেড়ে দিয়েছেন। ওই হাইস্কুলে মোট ৩৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত। তার মধ্যে প্রধান শিক্ষক-সহ ৩৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ওই সংগঠনের সদস্য ছিলেন। প্রধান শিক্ষক বাদে বাকি ৩২ জন সোমবার রাতে লিখিত ভাবে সংগঠনের ব্লক নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন, বকেয়া ডিএ প্রদান এবং স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন তাঁরা।
বাঁকুড়ার পদত্যাগী শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের লিখিত আবেদনে তৃণমূল শিক্ষা সেলের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করার কথা উল্লেখ করায় তা নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে বলে দাবি। সমিতির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি গৌতম দাসের দাবি, ‘‘তৃণমূল শিক্ষা সেল নামে কোনও রেজিস্টার্ড শিক্ষক সংগঠন নেই। পদত্যাগী ওই ৩২ জন শিক্ষক ‘তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র সদস্য ছিলেন। তাঁরা সেই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না বা তা করে থাকলে এর কারণ কী, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’
বকেয়া ডিএ এবং স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকা দু’দিনের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার স্কুলে যথাসময়ে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করেছেন ওই ৩২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তবে তাঁরা শ্রেণিকক্ষের যাওয়ার বদলে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্কুল চত্বরেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষক অজয় মাজি বলেন, ‘‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আন্দোলনে আমরা শামিল হয়েছি। তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনেই এত দিন ছিলাম আমরা। কিন্তু ডিএ এবং স্বচ্ছ নিয়োগের দাবির বিষয়ে ওই সংগঠনের কোনও নির্দিষ্ট অবস্থান না থাকায় আমরা সদস্যপদ ত্যাগ করেছি।”
মঙ্গলবার শ্রেণিকক্ষে গরহাজির হলেও ওই ৩২ জনের জন্য পঠনপাঠন বিঘ্নিত হয়নি বলে দাবি শালডিহা হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ বলেন, ‘‘স্কুলে ৫ জন পার্শ্বশিক্ষক, বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য কয়েক জন শিক্ষক এবং ৩ জন অস্থায়ী ভোকেশনাল টিচার দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের একটা বড় অংশ কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়ায় শুধুমাত্র একাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষক সংগঠন থেকে স্কুলের কোনও শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন কি না, তা আমার জানা নেই। আমি দীর্ঘ দিন ধরে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন করে আসছি। এখনও সেই সংগঠনেই রয়েছি।”
বাঁকুড়ার আগে জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাটেও একই দাবিদাওয়ায় ইস্তফা দিয়েছেন ১৮ জন শিক্ষক। সোমবার তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন বানারহাট ব্লকের দুরামারি চন্দ্রকান্ত হাইস্কুলের ওই শিক্ষকেরা।