প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গত কয়েক দিনে রাজ্যে একের পর ‘গণপিটুনি’তে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। পুলিশি গ্রেফতারির পরও থামছে না এমন ঘটনা। যা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। এ বার এই নিয়ে কড়া পদক্ষেপের কথা বলল রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করল নবান্ন। হোমগার্ডের চাকরিও দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয়। এর জন্য সকলকে সতর্ক করা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মনোজের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ঘটনা রাজ্য সরকারের নজরে এসেছে। পুলিশকে সর্বাধিক সতর্কতা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। কড়া আইনানুগ পদক্ষেপ করতেও বলা হয়েছে। মানুষকে জাগ্রত থাকতে হবে। এই সকল ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য কোনও ক্ষতিপূরণই যথেষ্ট নয়। তবে রাজ্য সরকারের তরফে মৃত পরিবারের সদস্যদের হোমগার্ডের চাকরি এবং দু’লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হবে।’’
গত কয়েক দিনের মধ্যেই কখনও ছেলেধরা সন্দেহে, কখনও আবার চোর সন্দেহে রাজ্যে একাধিক ‘গণপিটুনি’র ঘটনা ঘটেছে। তাতে আক্রান্তের মৃত্যু পর্যন্তও হয়েছে। কলকাতার বৌবাজারে উদয়ন হস্টেলে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে বছর সাঁইত্রিশের ইরশাদ আলমকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। সল্টলেকের পোলেনাইট এলাকায় মোবাইল চোর সন্দেহেই প্রসেন মণ্ডল নামের এক যুবককে মারধর করার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে।
এ ছাড়াও রাজ্যের বেশ কিছু জায়গাতে একই ধরনের অভিযোগ উঠছে। ঝাড়গ্রাম, কালনা, গাইঘাটা-সহ একাধিক জায়গায় এমন মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর। ধরপাকড়ও শুরু করেছে পুলিশ। রবিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার আড়িয়াদহে মারধরের ঘটনায় মৃত্যু হয় মা এবং পুত্রের। ঘটনাস্থলে থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মঙ্গলবার প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার উপরে মা এবং পুত্রের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন কয়েক জন। চলছে বেধড়ক মারধর (যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৌবাজার, সল্টলেক, ঝাড়গ্রাম-সহ আরও মোট পাঁচটি মৃত্যুর ঘটনার জন্য এ বার ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করল সরকার। তবে রাজ্য সরকার কোথাও ‘গণপিটুনি’র কথা উল্লেখ করেনি।
উল্লেখ্য, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে গণপ্রহার নিয়ে এত দিন আলাদা কোনও বিধান ছিল না। তবে সোমবার থেকে দেশ জুড়ে চালু হওয়া নয়া ফৌজদারি আইনে এই গণপ্রহারের ধারা যুক্ত করা হয়েছে। গণপ্রহারের জেরে মৃত্যু হলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। দেশে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন চালু হয়েছে। সোমবার সে নিয়েই সাংবাদিক বৈঠকে গণপ্রহারের বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।