Fulbari Incident

‘প্রতিবেশীরা দু’-তিনটে চড় মেরেছে, মারতেই পারে’! ফুলবাড়িকাণ্ডে দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতার, গ্রেফতার ৪

এলাকায় সবার সামনেই তাঁর স্ত্রীকে এবং তাঁকে মারধর করা হয়েছিল বলে পুলিশে অভিযোগ করেন খোদ মহিলার স্বামী। এনজেপি থানায় সেই লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই গ্রেফতার চার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪ ১৩:০৩
Share:

(বাঁ দিকে) স্থানীয় তৃণমূল নেতা শম্ভু রায়। মৃতার স্বামী তাপস বর্মণ (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।

বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে সকলের সামনে মারধর, সেই অপমানে আত্মঘাতী মহিলা। ফুলবাড়ির ঘটনায় বাড়ল গ্রেফতারির সংখ্যা। মঙ্গলবার আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। কেন সকলের সামনে ওই মহিলাকে মারধর করা হল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শম্ভু রায়ের দাবি, ‘‘অতীতেও ওই মহিলা অন্য এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর ফিরে আসেন। বার বার এই ঘটনা ঘটায় আশপাশের মহিলারা দু’-তিনটে চড়-থাপ্পড় মেরেছে। সে দিতেই পারে।’’

Advertisement

শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি এক নম্বর অঞ্চলের বকরাভিটা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্বামীকে ছেড়ে এলাকার এক প্রতিবেশী যুবকের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন ওই মহিলা। এর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। প্রায় আট দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরে, ওই মহিলা স্বামীকে ফোন করে বাড়ি ফিরে আসার কথা বলেন। কিন্তু অভিযোগ, ফিরে স্বামীর কাছে আসতেই এলাকার কয়েক জন মহিলা মিলে গত শুক্রবার সালিশি সভা বসান। সেখানে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের ‘শাস্তি’ হিসেবে ওই মহিলাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

মারধরের ঘটনার পর বাড়িতে ঢুকে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন ওই মহিলা। এলাকায় সবার সামনেই তাঁর স্ত্রীকে এবং তাঁকে মারধর করা হয়েছিল বলে পুলিশে অভিযোগ করেন খোদ মহিলার স্বামী। এনজেপি থানায় সেই লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল। সোমবার এই ঘটনায় আরও দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

Advertisement

ডিসিপি (পূর্ব) দীপক কুমার সরকার জানান, ‘‘চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে দু’জন পুরুষ ও দু’জন মহিলা রয়েছেন। মৃত মহিলা সবিতা বর্মণের স্বামী তাপস পাড়ার তিন জন মহিলার নামে অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, তাঁর স্ত্রীকে ওই মহিলারা তাঁর বাড়িতে ডেকে পাঠান। সবিতা বাপের বাড়িতে ছিল। সেখান থেকে শ্বশুরবাড়িতে আসেন। সেখানেই শিবানী রায় নামে এক মহিলার সঙ্গে সবিতার কথা কাটাকাটি হয়। সেই কথা কাটাকাটির ঘটনা থেকেই হাতাহাতি। তার পরই সবিতা কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেন। শিবানী-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে পাঠানো হবে। আমরা রিমান্ডে নেব তাঁদের।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, শিবানীর স্বামীর সঙ্গেই সবিতা পালিয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে দাবি, তাপসের অভিযোগে কোনও সালিশি সভার উল্লেখ নেই। তবে তাপসের অভিযোগ, সবিতাকে বাড়িতে ঠাঁই দেওয়া হলে বাড়িও ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি, তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন তাপস। চোপড়ার পর প্রায় একই রকমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় ফুলবাড়ি এলাকায়।

এই ঘটনায় উঠে এসেছে স্বপ্না অধিকারী নামে এক মহিলার নাম। স্থানীয় সূত্রে দাবি, ওই মহিলা এলাকায় তৃণমূল করতেন। হেমা রায় নামে স্থানীয় এক মহিলা বলেন, ‘‘স্বপ্না আগেও এমন মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এলাকায় সব সময় মাতব্বরি করে।’’ পুলিশ এই স্বপ্নাকে গ্রেফতার করেছে।

সেই ঘটনা নিয়ে ফুলবাড়ি পঞ্চায়েতের সদস্যা মালতী রায়ের স্বামী শম্ভু বলেন, ‘‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। তবে যখন ঘটেছে, তখন আমি ছিলাম না। পরে এসে শুনলাম মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। বাড়ির আশপাশের মহিলারা দু’-চারটে থাপ্পড় দিয়েছে, তা দিতেই পারে। এর আগে দু’বার একই ঘটনা ঘটেছে। আগেও অভিযোগ এসেছে। একটা ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল, তার পর ফিরে এসে বাড়িতে লুকিয়ে ছিল। পাড়ার লোকেরা দাবি করেছিল, ওকে ওখানে রাখবে না। তার পর এই ঘটনা ঘটল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement