আরজি কর-কাণ্ডে শনিবার শিয়ালদহ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সঞ্জয় রায়। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে যে রায় দিয়েছে আদালত, তা চ্যালেঞ্জ করবেন না তাঁরা। শনিবার রায় ঘোষণার পরে আনন্দবাজার অনলাইনকে তেমনই জানিয়েছেন সঞ্জয়ের দিদি। সোমবার সঞ্জয়ের শাস্তি ঘোষণা করবে আদালত। দোষী সাব্যস্ত সিভিকের সর্বনিম্ন সাজা হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। সেই শাস্তিকেও তাঁরা চ্যালেঞ্জ করবেন না। যদিও শনিবার আদালতের রায়ের পর সঞ্জয়ের দিদির কণ্ঠ কিছুটা বিষণ্ণই শুনিয়েছে।
ভাইয়ের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ নেই দিদির। সঞ্জয় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে দেখাও করতে যাননি। এখনও চান না দেখা করতে। শনিবার আদালত চত্বরেও ছিলেন না। বস্তুত, সঞ্জয় গ্রেফতার হওয়ার পরে ভাইয়ের ‘কঠোর থেকে কঠোরতম’ শাস্তির দাবিই জানিয়েছিলেন তিনি। এমনকি, পরিবারের তরফে তাঁরা কোনও আইনজীবীও দেননি।
সঞ্জয় এজলাসে একটি রুদ্রাক্ষের মালার কথা বলেছেন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে বলতে গিয়ে বলেছেন, তিনি ওই ঘটনার (ধস্তাধস্তি ধর্ষণ, খুন) সঙ্গে জড়িত থাকলে মালাটি ছিঁড়ে পড়ে যেত। আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টায় আরও বলেছিলেন, রুদ্রাক্ষের মালা গলায় পরে তিনি কি এই অপরাধ করতে পারেন! সঞ্জয়ের দিদি অবশ্য জানাচ্ছেন, তিনি ওই রুদ্রাক্ষের মালার বিষয়ে কিছুই জানেন না। ওই বিষয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমার সঙ্গে সে রকম পরিচয় (যোগাযোগ) ছিল না। তাই আমি কিছু বলতে পারব না।”
সঞ্জয়কে আদালত দোষী সাব্যস্ত করার পর পরবর্তী কোনও আইনি পদক্ষেপের ভাবনাচিন্তা নেই পরিবারের। ভাইয়ের যদি সর্বোচ্চ সাজা (মৃত্যুদণ্ড) হয়? তা নিয়েও কিছু ভাবতে চাইছেন না তিনি। কিছুটা ভারাক্রান্ত গলায় বললেন, “আমার কিছু বলার নেই। সরকার বা প্রশাসন যা ঠিক মনে করছে, তা-ই করবে। আমার চাওয়া বা না-চাওয়ার মধ্যে তো কিছু নেই।” আদালতে শনিবারের ঘটনাক্রম নিয়ে মা’কেও কিছু জানাননি তিনি। প্রশ্ন করায় বললেন, “মায়ের তো মানসিক স্থিতি ঠিক নেই। মা’কে তো সে রকম কিছু বলাও যায় না।”
সঞ্জয় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কি তাঁরা উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা? সেই প্রশ্নেও একটি বাক্যে উত্তর, ‘‘নাহ্!’’ গত অগস্ট মাস থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও আইনি সাহায্য তিনি ভাইকে দেননি। এখন কি ভাইকে কোনও ভাবে সাহায্য করতে চান? তাতেও একই উত্তর, ‘‘নাহ্!’’ জানালেন, সঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা আগে থেকেই বন্ধ ছিল। এত দিন দেখাও করেননি। আগামী দিনেও দেখা করতে চান না। আদালত দোষী সাব্যস্ত করার সময় সঞ্জয় শনিবার বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তা নিয়েও এক বাক্যে উত্তর সঞ্জয়ের দিদির। বললেন, “যেটা জানছি, যেটা দেখছি, সেটাই বুঝতে পারছি।”
আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় এখনও পর্যন্ত একমাত্র দোষী সঞ্জয়ই। নির্যাতিতার দেহ উদ্ধারের ১৬২ দিনের মাথায় শনিবার রায় জানিয়েছে আদালত। শিয়ালদহ আদালত ভবনের তিনতলার ২১০ নম্বর কক্ষে শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ এজলাস বসে। ১২ মিনিটেই রায় ঘোষণা শেষ হয়েছে। রায় শুনে আদালতের ভিতরেই চিৎকার করতে শুরু করেন সঞ্জয়। বিচারককে বলেন, তিনি ‘নির্দোষ’। তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। বিচারক তাঁকে জানিয়েছেন, আগামী সোমবার (সাজা ঘোষণার দিন) সঞ্জয় এবং তাঁর আইনজীবীর বক্তব্য শোনা হবে।
(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম, পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই নিয়ম মেনেই আরজি কর পর্বের প্রথম দিন থেকে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম বা ছবি প্রকাশ করেনি। শনিবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা তাঁর নাম এবং ছবি প্রকাশ করা শুরু করছি।)