RG Kar Case Verdict

গলায় রুদ্রাক্ষের মালা নিয়ে এই অপরাধ করব? রায় শুনে চিৎকার সঞ্জয়ের, ১২ মিনিটেই কোর্ট শেষ

আরজি কর মামলায় সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে শিয়ালদহ আদালত। সোমবার তাঁর সাজা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক অনির্বাণ দাস। রায় শুনে আদালতে চিৎকার করে ওঠেন সঞ্জয়।

Advertisement

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৫৫
Share:

আরজি কর মামলায় দোষী সাব্যস্ত ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। —ফাইল চিত্র।

আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে শিয়ালদহ আদালত। ১২ মিনিটেই রায় ঘোষণা শেষ হয়েছে। রায় শুনে আদালতের ভিতরেই চিৎকার করতে শুরু করেন সঞ্জয়। বিচারককে তিনি জানান, তিনি নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। নিজের গলার রুদ্রাক্ষের মালার কথাও আদালত কক্ষের ভিতরে উল্লেখ করেন সঞ্জয়। বিচারক জানিয়েছেন, সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় তাঁর কথা শুনবেন এবং ওই দিনই সাজা ঘোষণা করা হবে।

Advertisement

শিয়ালদহ আদালত ভবনের তিনতলার ২১০ নম্বর কক্ষে শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ এজলাস বসে। সঞ্জয়কে এজলাসে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন বিচারক অনির্বাণ দাস।জানান, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। আদালতে বিচারকের সঙ্গে সঞ্জয়ের কথোপকথন নীচে তুলে দেওয়া হল।—

বিচারক: আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি ৯ অগস্ট ভোরের দিকে আরজি কর হাসপাতালে ঢুকেছিলেন। সেখানে এ দিক-ও দিক ঘোরাঘুরি করার পর এক মহিলা চিকিৎসককে আক্রমণ করেন। তাঁর মুখ চেপে ধরেন। গলা চেপে ধরেন। তাতে উনি মারা যান। আপনি যৌন হেনস্থাও করেন।

Advertisement

বিচারক: চার্জশিটে আপনাকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬, ১০৩(১) ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই ধারায় চার্জগঠন করা হয়েছে। যে সাক্ষীদের জেরা করা হয়েছে এবং সিবিআইয়ের আইনজীবীরা যা নথি ও তথ্য নিয়ে এসেছেন, তাতে আপনার অপরাধ প্রমাণিত। আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করা হল।

বিচারক: যে ভাবে আপনি গলা চেপে ধরে হত্যা করেছেন, তাতে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। আপনার এবং আপনার আইনজীবীর কথা সোমবার শুনব।

সঞ্জয়: আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা আছে। এই মালা পরে আমি এই অপরাধ করব?

সঞ্জয়: আমি ওখানে কিছু করলে আমার রুদ্রাক্ষের মালা ছিঁড়ে পড়ে যেত। আমাকে পুরো ফাঁসানো হচ্ছে। স্যর, আপনি কি বুঝতে পারছেন যে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে?

বিচারক: সব সাক্ষীকে জেরা করে এবং সিবিআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে যা মনে হচ্ছে, তাতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। শাস্তি আপনাকে পেতে হবে। কী শাস্তি, তা সোমবার বলব।

এর পরেও আদালতে হাত জোড় করে ‘স্যর’ ‘স্যর’ বলে চিৎকার করতে থাকেন সঞ্জয়। বলেন, ‘‘আপনি তো দোষী সাব্যস্ত করে দিলেন। আমি গরিব। আমি এই কাজ করিনি। যারা করেছে, তাদের কেন ছাড়া হচ্ছে?’’ এর পর আদালত থেকে একপ্রকার জোর করেই বার করে নিয়ে যাওয়া হয় সঞ্জয়কে।

বিচারকের রায় শুনে কেঁদে ফেলেন নির্যাতিতার বাবা এবং মা। তাঁরা বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার উপর যে আস্থা আমরা রেখেছিলাম, তার পূর্ণমর্যাদা রেখেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’’ বিচারক জানান, সোমবার তাঁদের কথা শোনা হবে।

উল্লেখ্য, গত ৯ অগস্ট আরজি করের সেমিনার হল থেকে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরের দিনই সঞ্জয়কে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তার পর সিবিআই এই মামলার তদন্তভার নিলে তাদের হাতে সঞ্জয়কে তুলে দেওয়া হয়। তদন্তের পর সিবিআই যে চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে, তাতে সঞ্জয়কেই একমাত্র অভিযুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়।

ঘটনার দিন আরজি কর হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয়কে দেখা গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছিল, সেমিনার হলে প্রবেশের সময়ে তাঁর গলায় একটি ব্লুটুথ হেডফোন দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে আধ ঘণ্টা পর বেরিয়ে আসার সময়ে ওই হেডফোন আর তাঁর গলায় ছিল না। ঘটনাস্থল থেকে ওই ছেঁড়া হেডফোন উদ্ধার করা হয় বলেও জানিয়েছিল পুলিশ। তারা কোনও রুদ্রাক্ষের মালার কথা বলেনি। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী অমর্ত্য দে জানান, এর আগে কখনও রুদ্রাক্ষের মালার প্রসঙ্গ ওঠেনি। ঘটনাস্থল থেকে বা গ্রেফতারির পরও তা বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। এটা যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ হত, তা হলে আগেই এর কথা জানানো উচিত ছিল।

সঞ্জয় পরে আদালতে একাধিক বার দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। আদালত চত্বরে প্রিজ়ন ভ্যান থেকেও চিৎকার করে এই দাবি করেছিলেন সঞ্জয়। শনিবার রায় ঘোষণার পরেও একই কথা শোনা গেল তাঁর মুখে। বিচারক জানিয়েছেন, ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ ১০ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হতে পারে। খুনের ঘটনায় ২৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। যে ভাবে সঞ্জয় গলা টিপে হত্যা করেছেন, তাতে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড হতে পারে তাঁর।

(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম, পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই নিয়ম মেনেই আরজি কর পর্বের প্রথম দিন থেকে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম বা ছবি প্রকাশ করেনি। শনিবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা তাঁর নাম এবং ছবি প্রকাশ করা শুরু করছি।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement