শেখ শাহজাহান। —ফাইল চিত্র।
দু'বার তাঁর বাড়িতে গিয়েও নাগাল পায়নি ইডি আধিকারিকেরা। তবে গত বুধবার সন্দেশখালির তৃণমূল নেতার বাড়িতে গিয়ে নোটিস টাঙিয়ে এসেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। তাতে বলা হয়েছিল ২৯ জানুয়ারি সকাল ১১টার মধ্যে শাহজাহানকে কলকাতায় ইডি দফতরে হাজিরা দিতে হবে। ২৪ দিন পর তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। তবে সোমবার সকালে ইডির দেওয়া সময়সীমা পেরোলেও কলকাতায় তদন্তকারী সংস্থাটির দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে যাননি শাহজাহান। মনে করা হচ্ছিল, নিজে না এলেও আইনজীবী মারফত নথিপত্র তদন্তকারীদের কাছে পাঠাবেন ‘নিখোঁজ’ তৃণমূল নেতা। তবে সকাল ১১টা পর্যন্ত শাহজাহানের কোনও প্রতিনিধিই সিজিওতে যাননি।
শাহজাহান ইডির ডাকে সাড়া দেবেন কি না, তা নিয়ে গোড়া থেকেই সংশয় ছিল। শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যায়, ইডি দফতরে হাজির হলে গ্রেফতারির আশঙ্কা করছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে নাকি অন্য কোনও ভাবে ‘আত্মসমর্পণ’ করতে পারেন তিনি। অবশ্য ইডি সূত্রে খবর, শাহজাহান না এলেও তদন্ত যেমন চলার তেমনই চলবে। ইতিমধ্যেই তদন্তকারীদের হাতে বেশ কিছু নথি এসেছে। সেগুলি খতিয়ে দেখার পর শাহজাহানকে ফের তলব কিংবা পরবর্তী কোনও পদক্ষেপের বিষয়ে ভাববে তদন্তকারী সংস্থাটি। সম্পত্তি কেনাবেচার ক্ষেত্রে দুর্নীতির টাকা ব্যবহৃত হয়েছে— এমন প্রমাণ মিললে অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইনে পদক্ষেপ করা হতে পারে বলেও ইডি সূত্রের খবর।
গত ৫ জানুয়ারি থেকেই শাহজাহানের কোনও সন্ধান নেই। ইডির সন্দেহ, তিনি বাংলাদেশে গা ঢাকা দিয়েছেন। গত বুধবার তালা ভেঙে তাঁর বাড়িতে ঢোকে ইডি। ভাঙা হয় আলমারিও। ভিতরে চিরুনিতল্লাশি চালানো হয়। তার পর দুপুরে ইডি আধিকারিকেরা ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তবে যাওয়ার আগে বাড়ির দরজায় সেঁটে দেওয়া হয় ওই তলবি নোটিস।
নোটিসে লেখা ছিল, রেশন মামলায় শাহজাহানের হাজিরা জরুরি। তাই ২০০২ সালের আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ)-এর ধারা অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারি সকাল ১১টার মধ্যে শাহজাহানকে কলকাতায় ইডি দফতরে হাজিরা দিতে হবে। সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে বেশ কিছু নথিও। শাহজাহানকে ইডি দফতরে যাওয়ার সময়ে সঙ্গে রাখতে হবে আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড এবং নিজের পাসপোর্ট আকারের ছবি।
গত শনিবারই সন্দেশখালির ‘নিখোঁজ’ এই তৃণমূল নেতার সমালোচনা করে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, ‘‘শাহজাহান যা করেছে অন্যায় করেছে। আমি গণমাধ্যমে দেখেছি, মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি আধিকারিকদের। যেটা করেছে, নিশ্চিত করে বলছি, অন্যায় করেছে!’’ দল শাহজাহানের থেকে দূরত্ব বৃদ্ধি করছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। এই আবহেই নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ইডি দফতরে গরহাজিরই থাকলেন শাহজাহান।
রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তের সূত্রে গত ৫ জানুয়ারি শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। সেখানে পৌঁছে তারা বিক্ষোভের মুখে পড়ে। গ্রামবাসীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে ইডির তদন্তকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। মার খান সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। ইডির তিন আধিকারিককে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। তাঁদের মধ্যে এক জনের চোট ছিল গুরুতর। ওই দিন শাহজাহানের দেখা মেলেনি। ইডির দাবি, শাহজাহানের বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছিলেন ৮০০ থেকে ১০০০ লোক। সকলেই তৃণমূল নেতার ‘অনুগামী’।
ওই ঘটনার পরে তৃণমূলের তরফে কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘অনভিপ্রেত ঘটনা।’’ পাশাপাশি, শাসকদল এ-ও প্রশ্ন তুলেছিল যে, কেন স্থানীয় প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে সন্দেশখালিতে অভিযান চালাল ইডি?
এর মধ্যে শাহজাহানের গতিবিধি নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলেন। প্রথমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, শাহজাহান মায়ানমার পালিয়ে গিয়েছেন। তার দু’দিন পরেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, সরবেড়িয়া থেকে ধামাখালির মধ্যে ভেড়ির মাঝে রয়েছেন শাহজাহান। স্থানীয় এক সিপিএম নেতা বলেন, শাহজাহানকে তিনি সরবেড়িয়া পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে ঢুকতে দেখেছেন। আবার রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি বলেছিলেন, ‘‘শেখ শাহজাহান চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়েছেন। উনি অসুস্থ ছিলেন। তবে এখন কোথায় আছেন, নিশ্চিত ভাবে পুলিশ তা খুঁজে বার করবে।’’ তার মধ্যে আবার অন্তরাল থেকে শাহজাহানের একটি ‘অডিয়োবার্তা’ প্রকাশ্যে আসে। যেখানে শাহজাহান বলছেন, তিনি কোনও অন্যায় করেননি।