গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটের মধ্যেই আবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এল সন্দেশখালি। সৌজন্যে ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ‘স্টিং অপারেশন’ ভিডিয়ো! ওই ভিডিয়োটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। গোপন ক্যামেরায় তোলা সেই ভিডিয়োয় এক বিজেপি নেতা দাবি করেছেন, গত কয়েক মাসে সন্দেশখালিতে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগগুলি ‘সাজানো’ ছিল! টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন মহিলারা। তাঁর দাবি, সবটাই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘মস্তিষ্কপ্রসূত’ বলেও দাবি করেছেন ওই পদ্মনেতা। যা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি।
শনিবার সকালে ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতেই আসরে নামে তৃণমূল। শাসকদলের দাবি, ওই ভিডিয়োর মাধ্যমেই সন্দেশখালিতে বিজেপির ‘ষড়যন্ত্র’ ফাঁস হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিজেপি সন্দেশখালি নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ করে পশ্চিমবঙ্গকে কালিমালিপ্ত করেছে। এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘বিজেপির মনে বাংলা-বিরোধী মনোভাব আর বাংলার প্রতি ঘৃণা কতটা গভীর, তা এই ষড়যন্ত্রে স্পষ্ট। ভারতের ইতিহাসে আগে কখনও দিল্লির শাসকদল এ ভাবে আমাদের রাজ্যকে অসম্মানিত করার চেষ্টা করেনি। কিন্তু এর পর বাংলা এর জবাব দিতে যে ভাবে জাগবে, তা ইতিহাস তৈরি করবে।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বিজেপির যে কেন্দ্রীয় নেতারা লাগাতার সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টেনে বাংলার ‘বদনাম’ করেছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের ক্ষমা চাইতে হবে। বিজেপি অবশ্য ভিডিয়োটিকে ‘ভুয়ো’ এবং ‘বিকৃত’ বলে দাবি করেছে। সিবিআই তদন্ত চেয়েছে তারা। ভিডিয়োয় যে বিজেপি নেতার দাবি নিয়ে এত শোরগোল, সেই গঙ্গাধর কয়ালও ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। শুভেন্দুর দাবি, এই ভিডিয়োর নেপথ্যে তৃণমূলের হাত রয়েছে। অভিষেককেই নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘পুরো বিষয়টা নিয়ে অনেক দূর যাব। কয়লা ভাইপোকে জেলে পুরব।’’
প্রকাশ্যে আসা স্টিং অপারেশনের ভিডিয়োয় দাবি করা হয়েছে, গঙ্গাধর সন্দেশখালি-২ ব্লকে বিজেপির ‘মণ্ডল সভাপতি’। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য তা মানতে রাজি নন। পদ্মের রাজ্য নেতারাও এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, গঙ্গাধর একটি ঘরে চেয়ারে বসে আছেন। কেউ বা কারা তাঁকে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করে চলেছেন। আড্ডার ছলে প্রশ্নকর্তাকে জবাব দিচ্ছেন গঙ্গাধর। সেই কথোপকথনে বার বার উঠে এসেছে শুভেন্দুর নাম। গঙ্গাধরকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এই আন্দোলন (সন্দেশখালির আন্দোলন) এত দিন টিকে আছে কেন? তিনটে ছেলে এ দিক-ও দিক যাচ্ছে, গোটা বিষয়টা পরিচালনা করছে। শুভেন্দুদার আমাদের উপরে আস্থা আছে। শুভেন্দুদা এক বার ঘুরে গিয়েছে, তাতেই আন্দোলন এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।’’ ভিডিয়োয় গঙ্গাধরের ‘স্বীকারোক্তি’, ‘‘শুভেন্দুদা টাকা আর মোবাইল ফোন দিয়ে গিয়েছেন। কারণ, এই ধরনের কাজ খালি হাতে হয় না।’’
ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, প্রশ্নকর্তা গঙ্গাধরকে বলছেন, ‘‘দাদা, তোমরা কী লেভেলের কাজ করেছ, বুঝতে পারছ? ধর্ষণ হয়নি, তাকে ধর্ষণ বলে চালিয়েছ! তোমার বাড়ির বৌকে দিয়ে এই কাজ করাতে পারতে? আমরা তো পারব না।’’ এই প্রশ্ন শুনে সম্মতিসূচক হাসি হাসতে দেখা গিয়েছে গঙ্গাধরকে। ‘‘কী ভাবে ওদের ব্রেনওয়াশ (মগজধোলাই) করালেন?’’ উত্তরে গঙ্গাধর বলেন, ‘‘শুভেন্দুদার নির্দেশেই আমরা এই কাজ করেছি। উনি আমাদের সাহায্য করেছেন। শুভেন্দুদা বলেছেন, এটা না করলে, তাবড় তাবড় লোককে গ্রেফতার করানো যাবে না। আমরাও ওখানে দাঁড়াতে পারব না।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কথায় কথায় শুভঙ্কর গিরি নামের এক ব্যক্তির কথা বলেন গঙ্গাধর। তিনি বলেন, ‘‘শুভঙ্কর ছেলেটা ভাল ছিল। কিন্তু টাকার গোলমালের জন্য ও পরে হটে গেল।’’ গঙ্গাধরের দাবি, ‘শুভেন্দুর সহকারী’ পীযূষও সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন। জানান, শুভঙ্করই গ্রামবাসীদের ‘ব্রেনওয়াশ’ করেছিলেন। বিজেপি নেতার দাবি, ‘‘আমরা যা বলেছি, মহিলারা শুনেছে। কেউ না করেনি। ওদের বলেছিলাম, যদি আপনারা অভিযোগ না লেখান, তা হলে আপনাদের এই আন্দোলন সফল হবে না। এখানে আপনাদের টিকতেও দেবে না।’’
শুভেন্দুর দাবি, লোকসভা নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই এই ‘চক্রান্ত’ করা হয়েছে। বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, ‘‘সন্দেশখালির মুখ পীড়িত মহিলারা। ৩৮৯টি অভিযোগ হয়েছে। কিছু পুলিশের কাছে জমা পড়েছে। পরে প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের নেতৃত্বেও অভিযোগ জমা পড়েছে। তৃণমূল দাবি করেছে, ২৩৯টি জমি ফেরত দিয়েছে। পুলিশ নিজে তিনটি ধর্ষণ, হেনস্থার এফআইআর ট্রিট করেছে। সব কি মিথ্যা?’’ অভিষেককে নিশানা করে এক্স পোস্টে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘সত্যকে ভুল ভাবে তুলে করা হতে পারে। কিন্তু তা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়। পরের বার এটা মনে রাখবেন কয়লা ভাইপো।’’
গত ৫ জানুয়ারি প্রথম সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে সন্দেশখালি। রেশন দুর্নীতি মামলায় সেখানকার তৎকালীন তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিকেরা। শাহজাহান পরে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে ইডি হেফাজতে। কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার পর সন্দেশখালিতে আন্দোলন শুরু হয়। শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের পাশাপাশি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ তুলে পথে নামেন স্থানীয় মহিলাদের একাংশ। পরে থানায় ধর্ষণের একাধিক অভিযোগও দায়ের হয়। লোকসভা ভোটকে নজরে রেখে তখন থেকেই সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে বাংলার শাসকদলকে বিঁধতে শুরু করে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দুরা তো বটেই, ভোটের প্রচারে রাজ্যে এসে সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে বার বার সুর চড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরা। গত মার্চ মাসে বারাসতের দলীয় সভায় গিয়ে সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতা’দের সঙ্গে একান্তে প্রধানমন্ত্রী মোদী কথাও বলেছিলেন বলে খবর বিজেপি সূত্রে। পরে লোকসভা ভোটে সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতা’ রেখা পাত্রকে বসিরহাট কেন্দ্রে প্রার্থী করে পদ্মশিবির।
গঙ্গাধর ভিডিয়োয় দাবি করেছেন, সেই রেখা নাকি টাকার বিনিময়ে পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পরে রেখাকে দেখেই বাকিরা সাহস পান! গঙ্গাধরের কথায়, ‘‘রেখাকেও টাকা দেওয়া হয়েছিল। ও তখনও প্রার্থী হয়নি। ও আর এক জনকে টাকা দিতে বলেছিল। তাকেও টাকা দেওয়া হয়েছিল।’’ সন্দেশখালিতে আন্দোলন শুরুর পর সেখানে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কমিশনের প্রতিনিধি দল যায়। কথা বলে স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে। গঙ্গাধরের দাবি, তখন আন্দোলনকারী মহিলারা কেউ কেউ ভয় পেয়ে যান। এ প্রসঙ্গে জুঁই সিংহ (নাম পরিবর্তিত) নামে এক মহিলার কথা বলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, এসটি কমিশনের লোকেদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিশদে কিছু বলতে পারেননি জুঁই। কারণ, তিনি ‘ঘাবড়ে’ গিয়েছিলেন। গঙ্গাধর এ-ও জানান, জুঁইকে ‘ট্রেনিং’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা নিতে পারেননি। ভিডিয়োয় জুঁইও দাবি করেন, তাঁকে না জানিয়ে কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ওই কাগজে ইংরেজিতে ধর্ষণের অভিযোগের বয়ান লেখা ছিল। রেখার অবশ্য দাবি, ভয় দেখিয়ে গঙ্গাধরকে দিয়ে এ সব করানো হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভয় দেখিয়ে ওঁকে দিয়ে এ কথা বলানো হয়েছে। যা বলা হয়েছে তা সত্য নয়।’’
সন্দেশখালির ওই ভিডিয়ো নিয়ে শনিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিষেক। অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপির একটা নির্লজ্জ চেষ্টা প্রকাশ্যে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দিন থেকে বলে আসছেন, সন্দেশখালিতে যা বলা হচ্ছে, তা হয়নি। এর আগেও কলকাতার রাজপথে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। আমরা শুধু শুধু বিজেপিকে বাংলা-বিরোধী বলি না। নির্লজ্জতার সমস্ত নজির ভেঙে দিয়েছে। বিজেপির মণ্ডল সভাপতিই বলছেন, সাজানো ঘটনা! যাঁকে নির্যাতিত বলে দেখানো হচ্ছে, তিনিই বলছেন, তাঁর সঙ্গে কিছু হয়নি। শুভেন্দু তাঁদের বলেছেন, তাবড় তাবড় মাল গ্রেফতার না করালে তোমাদের কিছু হবে না। আমি বলছি না, ওদের মণ্ডল সভাপতিই বলেছেন।’’
স্টিং অপারেশন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে পরিবেশিত খবরের ফুটেজও সাংবাদিক বৈঠকে দেখান অভিষেক। তাতে মোদী, শুভেন্দুর করা নানা মন্তব্যের ফুটেজও ছিল। অভিষেক বলেন, ‘‘শুভেন্দু তো বলেছেন, ৩৫৫ জারির পরিস্থিতি তৈরি হবে। প্রায়ই এই সব বলছেন। বলে থাকেন। এমনও বলেন, ২০২৬ সালে ভোট হবে না বাংলায়। তার আগেই সরকার ভেঙে দেব। পিঠে-পাটিসাপটা বানানো নিয়ে কত কথা বলেছিল সংবাদমাধ্যম। কী ভাবে খবর প্রকাশ হয়েছিল! আর এখন এরা বলছে ধর্ষণই হয়নি। উল্টে যাতে মেডিক্যাল পরীক্ষা না হয়, সে জন্য ৭ মাস আগের অভিযোগ দায়ের করেছে।’’ অভিষেকের দাবি, সন্দেশখালিকে হাতিয়ার করে পশ্চিমবঙ্গকে বদনাম করেছে বিজেপি। এর জন্য বিচার ব্যবস্থার একাংশকেও দায়ী করেছেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘এ কথা বলার জন্য যদি আমি আদালত অবমাননার দায়ে পড়ি, তবে পড়ব, কিন্তু সত্যি কথা বলা থেকে আমাকে আটকানো যাবে না। গঙ্গাধর সকালেই বলেছিলেন ভিডিয়োয় তিনি রয়েছেন। গলার স্বর তাঁর। বিকেলে বলছেন, তাঁর কণ্ঠস্বর প্রযুক্তির মাধ্যমে বিকৃত করা হয়েছে।’’
ভিডিয়ো ঘিরে শোরগোলের মধ্যে সিবিআইকে চিঠি দিয়েছেন গঙ্গাধর। তাঁর দাবি, ওই ভিডিয়োটি ‘বিকৃত’। ওই কণ্ঠস্বর তাঁর নয়। ভিডিয়োয় তাঁর ছবি এবং কথার মধ্যে কোনও মিল নেই। এমন ভাবে ভিডিয়োটি এডিট করা হয়েছে, যাতে তা বোঝা না যায়। ভিডিয়ো থেকে বক্তার ঠোঁটের নড়াচড়াও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে না। সেই জন্যই ‘সাবটাইটেল’ (ইংরেজি তর্জমা) বলেই দাবি গঙ্গাধরের। চিঠিতে তাঁর বক্তব্য, ‘উইলিয়ামস’ নামে একটি চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছে ভিডিয়োটি। যে চ্যানেলে অন্য কোনও ভিডিয়ো নেই। ২০২৪ সালের ৩ মে চ্যানেলটি খোলা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে ‘বদ’ উদ্দেশ্যেই এমনটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ গঙ্গাধরের। তাঁর দাবি, ১৮ মিনিটের মাথায় ভিডিয়োটিতে এক মহিলাকে দেখা যায়। তখন ভিডিয়ো সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও অডিয়ো বন্ধ রাখা হয়নি। ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’-এর মাধ্যমে ওই মহিলার কথাও কাটছাঁট করা হয়েছে বলে দাবি গঙ্গাধরের।
স্টিং-ভিডিয়োতে আর কী কী
ভিডিয়োয় প্রশ্নকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথনে গঙ্গাধরকে বলতে শোনা যায়, ‘‘জমি দখলের অভিযোগ তেমন গুরুত্ব পাবে না। ধর্ষণ একটা বড় জিনিস। তাই এটা সাজাতে হয়েছে। বাণী (নাম পরিবর্তিত) নামের একটা মেয়ে ছিল। জবানবন্দি দিয়েছিল। আমিই ওকে ম্যানেজ করেছি। এর মধ্যে এখানকার একটা মেয়ে কোচবিহারে গিয়ে নাকি উল্টো দিয়ে এসেছে শুনলাম। বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছে। ও নাকি বলেছে, আমরা আন্দোলন করেছি, আমরা আর গুরুত্ব পাচ্ছি না। যারা করেনি, তাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোচবিহারে যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদের কারা এ সব শিখিয়েছে, আমি জানি না।’’
টাকার বিনিময়ে কী ভাবে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ হয়েছে, তা-ও বিস্তারিত বলতে শোনা যায় গঙ্গাধরকে। তিনি বলেন, ‘‘শুভঙ্করের মাধ্যমে জুঁইকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। মাত্র ২০০০ করে দেওয়া হয়েছিল। রেখাকেও টাকা দেওয়া হয়েছিল। মোট ৬০ জন মহিলা আছেন। প্রত্যেককে হাতে রাখার জন্য তিন হাজার করে দেওয়া হবে। কিন্তু দল পাঁচটি খেপে এই টাকা দিতে চায়। ৭০০, ৬০০, ৫০০, ৫০০— এ ভাবে দেওয়া হবে। যাঁরা অভিযোগ করেছেন, এবং যাঁদের মুখ টিভি বা ভিডিয়োতে প্রকাশ্যে এসেছে, তাদের আমরা এই টাকা দেব।’’
জুঁইকেও বলতে শোনা যায়, ‘‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করেছি। দল পাশে না দাঁড়ালে, আমিও দলের পাশে থাকব না। আমাকে একটি কাগজে রাতের অন্ধকারে এসে সই করিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তাতে ইংরাজিতে লেখা ছিল। আমি পড়তে জানি না। কী লেখা আছে আমাকে ভাল করে বোঝায়নি। তাই পরের দিন কমিশনের লোকেরা এসে যখন জিজ্ঞেস করলেন, আমি বলতে পারলাম না। বৌদি এসে বলে দিল, ধর্ষণ হয়নি। আগে তৃণমূলের এক জন আমাকে সত্যিই মেরেছিল। সেই ঘটনা কমিশনকে বলে দিয়েছি। এলাকায় তিন জন জুঁই সিংহ রয়েছে। এক জন শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিল। সেটা আমি নই।’’
স্টিং-ভিডিয়ো প্রসঙ্গে ‘ধর্ষিতা’র আত্মীয়
সন্দেশখালির জুঁই (নাম পরিবর্তিত) ধর্ষিতা নন। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে এমনটাই জানিয়েছেন জুঁইয়ের বৌদি অর্পিতা (নাম পরিবর্তিত)। ভাইরাল ভিডিয়োয় জুঁই জানান, তিনি সন্দেশখালির বাসিন্দা। ভিডিয়োতে প্রশ্নকর্তা জুঁইকে প্রশ্ন করেন, তাঁর সই করা কাগজে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছিল কি না। সেই প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলে সম্মতি জানান জুঁই। তিনি বলেন, সন্দেশখালি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চলাকালীন রাতের অন্ধকারে কয়েক জন এসে তাঁর কাছে ওই অভিযোগপত্রে সই করিয়ে নিয়ে গিয়েছে। পুরো অভিযোগপত্র ইংরেজিতে থাকায় তিনি অভিযোগপত্রের বিষয়বস্তু ‘বুঝতে পারেননি’। ‘না বুঝেই’ সই করে দিয়েছেন অভিযোগপত্রে। পরে এসসিএসটি কমিশনার তাঁকে অভিযোগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ঘাবড়ে যান। তাঁর হয়ে এসসিএসটি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন তাঁর বৌদি। অর্পিতা জানিয়েছেন, ননদকে ধর্ষণ করা হয়নি। শাহজাহান এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছিল, তা মিথ্যা। তাঁর কথায়, ‘‘ননদ পড়াশোনা জানে না। ওই কাগজে ইংরেজিতে কী লেখা ছিল, তা বুঝতে পারেনি। এসসিএসটি কমিশনার এসে বললেন যে কাগজে ধর্ষণের কথা লেখা আছে। কিন্তু ওর সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। আগেও ও স্বীকার করে যে, ওর সঙ্গে কিছু হয়নি। কে লিখেছিল, বুঝতে পারছি না। তখন খুব আন্দোলন চলছিল। অনেকে এসে সই করিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ইংরেজিতে। তাড়াতাড়ি করে এসে সই নিয়ে চলে যায়। তার পর যখন ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন ও কিছু বলতে পারেনি। ও কিছু জানে না বলে জানিয়েছিল। আমিও কথা বলি।’’ তাঁর ননদ যে ধর্ষিতা হননি, তা পুলিশকে জানিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন অর্পিতা। দিল্লি থেকে এসসিএসটির কমিশনার এসে তথ্য নিয়ে গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, শাহজাহানকে তাঁরা কেউই ভাল ভাবে চিনতেন না। তাঁর কথায়, ‘‘শাহজাহানকে চিনতাম বললে ভুল হবে। আমরা এখানকার ছেলেমেয়ে। তাই নিশ্চয়ই দেখেছি। এক বার মিটিংয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ধর্ষণ করা হয়নি। এই সব দেখিয়ে আমাদের ডাকা হচ্ছে। ভিডিয়ো করে নিচ্ছে। আমরা ফেঁসে যাচ্ছি। আমরা মিথ্যা বলিনি। পুলিশও জানে।’’ অভিযোগপত্রে সই করানোর জন্য ননদকে ভয় দেখানো হয়নি বা টাকা দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেছেন বৌদি।