রবিবার রায়নার দেরিয়াপুর গ্রামে তদন্তকারী আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার ত্রিপল ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলকে কুপিয়ে খুনের পর তাঁর উপর গুলিও চালানো হয় বলে ধারণা তদন্তকারী আধিকারিকদের। এবং এই খুনে সুপারি কিলারকে কাজে লাগানো হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান তাঁদের। বিপুল সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের জেরেই সব্যসাচীকে খুন করা হয়েছে বলেও মনে করছেন তদন্তকারীরা। তদন্তে নেমে সব্যসাচীর গাড়িচালক আনন্দ সাউ এবং রাঁধুনি পার্থ সাঁতরাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার দেরিয়াপুর গ্রামে শম্পা মণ্ডল নামে দূরসম্পর্কের এক কাকিমার বাড়িতে রহস্যজনক ভাবে খুন হন সব্যসাচী। তদন্তে নেমে রবিবার বিকেলে দেরিয়াপুর গ্রামে যান সিআইডি এবং ফরেন্সিক দল। শম্পার পরিবারের দুই মহিলাকে ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। তবে তদন্তের জন্য দেরিয়াপুর গ্রামে নিয়ে গেলেও আনন্দ, রাজবীর এবং পার্থকে পুলিশ তাঁদের গাড়িতেই রাখে। দেরিয়াপুরের ঘটনাস্থলে গিয়ে সিঁড়ি ও ছাদের বিভিন্ন জায়গার নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করেন তাঁরা। রবিবার তদন্তকারীদের দলের সঙ্গে ছিলেন এসডিপিও (দক্ষিণ) আমিরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘‘তদন্তে নেমে অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে তবেই গ্রেফতারির কথা ভাবা হবে।’’
সব্যসাচী মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।
সব্যসাচীর বাবা দেবকুমার মণ্ডলের দাবি ছিল, ভাইপো দীনবন্ধু এবং সোমনাথ মণ্ডলই সুপারি কিলার লাগিয়ে তাঁর ছেলেকে খুন করিয়েছে। শনিবার বর্ধমান পুলিশ মর্গে দেবকুমার বলেন, ‘‘আমাদের পরিবারে সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের চরম বিবাদ চলেছে। ২০১৬ সালে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর শ্মশানে সব্যসাচীকে বেধড়ক মারধর করে দীনবন্ধু এবং সোমনাথ। আমার ধারণা, তাঁরাই সুপারি কিলার লাগিয়ে ছেলেকে খুন করিয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতায় ন’টি দোকান, হাওড়ায় দু’টি বাড়ি, বর্ধমানে প্রায় ৩০০ বিঘা জমি রয়েছে মণ্ডল পরিবারের। সব্যসাচীর সঙ্গে তাঁর কাকা গৌরহরি মণ্ডল এবং কাকার দু’ছেলে সোমনাথ এবং দীনবন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলছিল। মামলা-মোকদ্দমাও চলছে উচ্চ আদালতে। গত ৮ অগস্ট হাওড়ার শিবপুরে নবীন সেনাপতি লেনে সব্যসাচীর বাড়িতে পেট্রল বোমা মারার অভিযোগ ওঠেও কাকার পরিবারের বিরুদ্ধে।
সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরেই খুনের অনুমান করলেও এ নিয়ে ফরেন্সিক দলের সদস্যরা কিছু বলতে অস্বীকার করেন। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিত্রাক্ষ সরকার বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। এর বাইরে কিছু বলতে পারব না।’’