লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েও একসঙ্গে লড়াই করতে হবে বলে সকাল থেকে সন্ধ্যা ক্লাস করানো হল সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষদের। ফাইল চিত্র।
নাম ‘সমন্বয় বৈঠক’। সঙ্ঘ পরিবারের বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ের উদ্দেশেই এমন বৈঠক করে থাকে আরএসএস। কিন্তু বৃহস্পতিবারের সেই বৈঠকে বিজেপির মধ্যে সমন্বয়ের বার্তা দিলেন সঙ্ঘ কর্তারা। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন তো বটেই, তার পরে ‘বড় লড়াই’ লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েও একসঙ্গে লড়াই করতে হবে বলে সকাল থেকে সন্ধ্যা ক্লাস করানো হল সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষদের।
ছিলেন অমিতাভ চক্রবর্তীও। তবে বৈঠকে ছিলেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্ঘের পক্ষে এই বৈঠকে শুভেন্দুকে যে ডাকা হবেই, তেমন কোনও কথা ছিল না। কারণ, শুভেন্দু রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা। তিনি সঙ্ঘের কোনও শাখার নেতৃত্বে নেই। বৃহস্পতিবারের সমন্বয় বৈঠক ছিল সঙ্ঘ পরিবারের বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর কারণেই।
রাজ্য বিজেপি যে নানা ভাগে বিভক্ত, তা সকলেরই জানা। তা জানেন আরএসএস কর্তারাও। সম্প্রতি দিলীপ-শুভেন্দু পরস্পরকে খোঁচা দেওয়া শুরু করেছেন প্রকাশ্যে। বিজেপির অন্দরে শুভেন্দুর সঙ্গে দিলীপের সম্পর্ক প্রথম থেকেই যথেষ্ট ‘মধুর’। কিন্তু এ ভাবে তা কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। ফলে বাড়তি অস্বস্তিতে গোটা গেরুয়া শিবিরই। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই হল সঙ্ঘের বৈঠক। সেখানে সঙ্ঘের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে হাজির ছিলেন সহ-সরকার্যবাহ অরুণ কুমার। অন্যান্য সংগঠনে যা সহকারী সাধারণ সম্পাদকের পদের সমতুল। রাজ্যে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হওয়ার পরে এটাই ছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে প্রথম সমন্বয় বৈঠক। সেই কারণেই বিজেপিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ পরিষদীয় নেতা হিসাবে শুভেন্দুকে ডাকা হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। যদিও সঙ্ঘের তরফে জানানো হয়, এখানে কাকে ডাকা হবে বা কাকে নয় তা সঙ্ঘ প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিক করে। পদ দেখে নয়, কাজের প্রয়োজন দেখে।
গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা দিনের বৈঠকে মূলত বিভিন্ন সংগঠনের কাজের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়। কোথায় কতটা অগ্রগতি হয়েছে, খোঁজ নেওয়া হয় সে বিষয়েও। বুধবারও কয়েকটি সংগঠনকে ডাকা হহয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার বিজেপি নেতাদের ডাক পড়েছিল। সেখানে সরাসরি কোনও পরিস্থিতি বা কারও নাম উল্লেখ না করা হলেও ‘মিলেমিশে’ কাজ করার উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সুকান্ত, দিলীপ, অমিতাভরা রিপোর্ট পেশ করা ছাড়া বাকি সময় শ্রোতা হিসাবেই ছিলেন। অন্য দিকে, আগামী দিনে কী ভাবে কাজ করতে হবে তা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বৃহস্পতিবারের বক্তারা বার বার সংগঠনের ভিতরে এবং অন্য সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা বলেন। প্রসঙ্গত, জানুয়ারি মাসেই পাঁচ দিনের সফরে বাংলায় থাকবেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত। তার আগে ঐক্যের চেহারা যাতে দেখা যায় সে দিকেও বাড়তি নজর রয়েছে সঙ্ঘের।
অনেকেই মনে করছেন, এই বার্তার পিছনে গেরুয়া শিবিরের বর্তমান ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব’ বড় কারণ। নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে থাকার কথা বলে সেই সব কোন্দলের দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে। তাতে সঙ্ঘের প্রচারক থেকে রাজনীতিক হওয়া দিলীপের প্রতিও বার্তা ছিল। একই ভাবে সুকান্ত-দিলীপ সংঘাতও যাতে নজরে না আসে, সে বিষয়েও বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে দলের একাংশের দাবি। এর আগে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় এসে একাধিক বৈঠকে দল এবং পরিষদীয় দলের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলেছিলেন। নিয়মিত বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার কথাও শুনিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সরাসরি সেই কথা না বলা হলেও তেমন ইঙ্গিত ছিল সঙ্ঘকর্তাদের বক্তব্যে।
পরে এক সঙ্ঘকর্তা এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আরএসএস সামাজিক সংগঠন। লক্ষ্য পরমবৈভবশালী ভারত গঠন। স্বয়ংসেবকরা বিভিন্ন সংগঠনে থাকলেও একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন। সঙ্ঘ সরাসরি কারও কর্মসূচি ঠিক করে দেয় না। কোথাও হস্তক্ষেপও করে না। তবে কোথাও সমস্যা তৈরি হলে তার সমাধানের পাশাপাশি নিয়মিত ভাবে দিকনির্দেশ করে। সেই কাজটাই হয়েছে এই বৈঠকে।’’
রাজ্য বিজেপির নেতাদের মধ্যের সমন্বয়ের অভাব নিয়ে কি সঙ্ঘ ‘বিব্রত’? উত্তরে ওই সঙ্ঘকর্তা বলেন, ‘‘সঙ্ঘের অন্যান্য সংগঠনে স্বয়ংসেবকরাই প্রধান ভূমিকা নেন। কিন্ত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তো আর সেটা সম্ভব নয়। সকলকে নিয়ে চলতে হয়। সেই চলাটাও নিশ্চিত করতে হয় স্বয়ংসেবকদেরই। এটাই আমাদের কার্যপদ্ধতি। যা বলা হয়েছে সেটা সামগ্রিক ভাবে। আলাদা করে কাউকে বার্তা দেওয়া সঙ্ঘের কাজ নয়।’’
বৃহস্পতির বৈঠকে ঠিক কী কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানতে সুকান্ত ও দিলীপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউই কোনও উত্তর দিতে চাননি। ঐক্যের সুরে জানিয়েছেন, এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখন নজর আগামী সোমবার দিল্লির বৈঠকের দিকে। যেখানে বাংলার সাংসদদের নিয়ে বসবেন কেন্দ্রীয় নেতা বিএল সন্তোষ। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সব কেন্দ্রীয় নেতাকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। হাজির থাকতে বলা হয়েছে শুভেন্দুকেও। সাম্প্রতিক বিতর্কের পরে বৈঠকের স্থান দিলীপের দিল্লির বাড়ি থেকে সরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের বাড়ি হয়ে গিয়েছে।