আসানসোলে পদপিষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা রাজ্যের। ফাইল চিত্র।
আসানসোলে কম্বলদান কর্মসূচিতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের অনুমতি চেয়ে রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আর তার পরেই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হল রাজ্য।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে আবেদন খারিজ হওয়ার পরই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে চেয়ে দুপুর ২টোয় কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ্য। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার একক বেঞ্চের নির্দেশ পরিবর্তিত করার আর্জি জানানো হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ আবেদন গ্রহণ করে দ্রুত শুনানির আশ্বাস দিয়েছে।
আসানসোলে বুধবার সন্ধ্যার ওই দুর্ঘটনার জেরে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের আবেদন জানিয়ে রাজ্যের তরফে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি পিএস নরসিমহার ডিভিশন বেঞ্চে সওয়াল করেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিন বলেন, ‘‘কম্বল বিতরণ কর্মসূচিতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনার জড়িত এক ব্যক্তির পক্ষে আগের একটি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টে এক বিচারপতির বেঞ্চ একটি স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু ওই স্থগিতাদেশ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভবিষ্যতের এফআইআরগুলির ক্ষেত্রে গ্রাহ্য হতে পারে না।’’
প্রসঙ্গত, এর আগে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ২৬টি এফআইআর-এর স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। একই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ ছিল, আগামী দিনের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর করতে গেলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। বৃহস্পতিবার সেই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গেল রাজ্য। যদিও বিচারপতি মান্থার ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের আইনজীবী আবু সোহেল। সেই মামলাটি এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চকে সিঙ্ঘভি জানান, বিচারপতি মান্থার ওই নির্দেশের কারণেই কম্বলকাণ্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তির (শুভেন্দু) বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ রাজ্যের আবেদন খারিজ করে এ বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন জানাতে বলে। তার পরেই রাজ্যের তরফে হাই কোর্টে আবেদন জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, বুধবার পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের রামকৃষ্ণডাঙায় পুরসভার প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির স্ত্রী তথা বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারি আয়োজিত একটি কম্বল বিতরণ কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন শুভেন্দু। সেখানেই কম্বল নেওয়ার হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১ জন শিশুও রয়েছে। আহত কমপক্ষে ৪ জন। এই ঘটনার পরেই শুভেন্দুর কর্মসূচি ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বিরোধী দলনেতাকে ‘ডিসেম্বর’ খোঁচা দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যদিও দুর্ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না শুভেন্দু। বৃহস্পতিবার আসানসোলের দুর্ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বললেন রাজ্য বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বৃহস্পতিবার প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কিছু ঘটনা ঘটে যেটা কারও হাতে থাকে না। দুর্ঘটনা হয়েছে। দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। না ঘটলেই ভাল হত।’’