বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সরকার ৩ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে বুধবার। এর পরেও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বড় অংশ ক্ষুব্ধ। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মচারী সংগঠনগুলি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে সরব। তৃণমূলপন্থী সংগঠনেরও বক্তব্য, কর্মচারীদের অনেক ‘প্রত্যাশা’ ছিল। এই পরিস্থিতিতে বুধবার কোনও মন্তব্য না করলেও বৃহস্পতিবার রাজ্যের বক্তব্য জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুর শহরের প্রশাসনিক সভায় তিনি জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার ‘জাদুকর’ নয়। অনেকে আরও বেশি চাইলেও টাকা যে জোগাড় করতে হয় সেটাও স্মরণ করান মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশাসনিক সভায় সরাসরি ‘ডিএ’ শব্দটা উচ্চারণ না করলেও মমতা বলেন, ‘‘আমরা তো ম্যাজিশিয়ান নই। টাকাটাও জোগাড় করতে হবে। অনেকে বলে, এটা পেলাম, ওটা দাও, এটা পেলাম, ওটা দাও। আরে যেটা পেলে সেটাকে ধরে রাখতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন সেটা কোথা থেকে জোগাড় হবে? কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না। বঞ্চনা করছে আর মিথ্যা কথা বলছে।’’
শুধু কেন্দ্রীয় সরকার নয়, রাজ্য বিজেপির দিকেও আঙুল তুলেছেন মমতা। টেনে এনেছেন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা আটকে রাখার প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপির নেতারা গিয়ে বলছে, রাস্তার টাকা দিয়ো না, জলের টাকা দিয়ো না, বাড়িতে টাকা দিয়ো না। একশো দিনের কাজের টাকা দিয়ো না।’’ বিজেপি ভোটের দিকে তাকিয়েই এমন আচরণ করছে বলেও অভিযোগ মমতার। তিনি বলেন, ‘‘এগুলো বলছে কারণ, তা হলে মানুষ উপকৃত হবে, আমি কী করে ভোট চাইব? কিন্তু তোমাদের লজ্জা থাকা উচিত। কারণ, এগুলো মানুষের টাকা। তোমাদের টাকা নয়। জনগণের ট্যাক্স নিয়ে দিল্লি এই টাকা তুলে নিয়ে যায়।’’
এখন কেন্দ্রীয় সরকার যে হারে ডিএ দিচ্ছে তার তুলনায় রাজ্যের কর্মচারীরা ৩৫ শতাংশ কম পান। মার্চ মাস থেকে যে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা হয়েছে সেটা হলে ফারাক কমে দাঁড়াবে ৩২ শতাংশ। যদিও শীঘ্রই আরও ৪ শতাংশ ডিএ কেন্দ্র বাড়াতে চলেছে। ফলে ফারাক আবার বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছেই। বকেয়া ডিএ না মিটলে পঞ্চায়েত ভোটে কাজ করবে না বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। তার পরেই বুধবার ৩ শতাংশ ডিএ বাড়ে। এর পরেও ওই সংগঠন আগামী সোম এবং মঙ্গলবার রাজ্যে একটানা ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকটাই চাপে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের পক্ষে যতটা সম্ভব ততটাই বাড়ানো হয়েছে বলে বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় জানিয়েছিলেন। এ দিন ফের মুখ খুললেন।
প্রসঙ্গত, ডিএ-র দাবি নিয়ে আদালতেও চলছে লড়াই। সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলা এখনও বিচারাধীন। আগামী ১৫ মার্চ মামলাটির পরবর্তী শুনানি। তৃণমূলপন্থী কর্মচারী সংগঠনও জানিয়েছে, রাজ্য ৩ শতাংশ ডিএ বাড়ালেও তারা আদালতের দিকেই তাকিয়ে। রাজ্য সরকারের যে হিসাব তাতে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে গেলে রাজ্যের কোষাগারে ৪১,৭৭০ কোটি টাকার ‘বোঝা’ চাপবে। ডিএ যে বকেয়া সেটাই মানতে নারাজ রাজ্য। সুপ্রিম কোর্টের সওয়ালেও রাজ্যের পক্ষে দাবি করা হয়, বছরে দু’বার করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়টি কোনও নিয়মে নেই। ফলে মহার্ঘ ভাতা বকেয়া থাকার যুক্তিটাই ‘কল্পনাশ্রয়ী’।