পুরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
জনজাতিদের উন্নয়নে একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের ফিরিস্তিই নয়, পুরুলিয়ার সার্বিক উন্নতির জন্য তার সরকার আরও কাজ করবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়ার সরকারি মঞ্চ থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কারা কারা উপভোক্তা, তার উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু জনজাতি অধ্যুষিত পুরুলিয়ায় পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাঁর লক্ষ্য যে আদিবাসী ভোট, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি, সারি এবং সারনা ধর্মের কোডকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ নিয়ে বহুবার বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন রাজ্যের নানা প্রান্তে বিক্ষোভও দেখিয়েছে। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার সরকারি মঞ্চ থেকে মমতা জানান, তাঁর সরকার সারি এবং সারনা ধর্মকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বৃহস্পতিবারই পশ্চিম মেদিনীপুরের সভা থেকে আদিবাসীদের এই দুই ধর্মের স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দেওয়ার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘কৃষকবন্ধু’ এবং ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের কথা। মমতা দাবি করেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদিবাসীদের জন্য কিছু করেনি। কিন্তু তার সরকার প্রায় সব কাজই করে দিয়েছে। পুরুলিয়াকে পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য স্থান করে দেওয়ার জন্যও তাঁর সরকার কাজ করেছে বলে জানান মমতা। কুর্মি-সহ জনজাতিদের জন্য আলাদা বোর্ড গড়ে দেওয়া হয়েছে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। শিয়রেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। গত লোকসভা নির্বাচনে তো বটেই, গত বিধানসভা নির্বাচনে পুরুলিয়ায় আশানুরূপ ফল করতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা বলেন, “এখানে আমাদের এমপি (সাংসদ), দু’জন মাত্র এমএলএ। তাও আমরা পুরুলিয়াকে ভুলিনি। এরপরই বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, যারা বলেছিল সব করে দেবে, তারা কিছুই করেনি। উল্টে আমাদেরই সব করতে হচ্ছে।
আবাস প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক এবং একাধিক ক্ষেত্রে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ নিয়ে জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত করতে মমতা বলেন, “বাড়ি করতে দিচ্ছে না সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট। আমাদের একটু সময় দিন, আমরা করে দেব।” গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজ অনেকের কাছেই বিশেষ ভরসার জায়গা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেওয়া বন্ধ করায় থমকে গিয়েছে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। বিজেপির কেউ কেউ ভুল বোঝাতে এলে, সেগুলো না শোনারও পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। কেন্দ্রীয় সরকার অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়াদের বৃত্তি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে তাঁর সরকার মেধাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে এই সব পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের বৃত্তি দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি। পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে ছৌ অ্যাকাডেমি কিংবা স্বনির্ভর গোষ্ঠীরল মাধ্যমে পলাশ ফুল থেকে ভেষজ আবির তৈরির পরিকল্পনা যে তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বঞ্চিত পুরুলিয়ার ছাত্রযুবরা যাতে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারে, তার জন্য সরকার সচেষ্ট থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।