ইস্তফা দিয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। — ফাইল ছবি।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে ব্রাত্য বসুর বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা মেনে ইস্তফা দিয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। রাজভবন সূত্রের খবর, সেই ইস্তফাপত্রে তিনি এ-ও লিখেছেন যে, তাঁকে যেন উপাচার্য পদে আর পুনর্বহাল করা না হয়। শুধু রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, রাজ্যের অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই উপাচার্য পদে তিনি বসতে চান না বলেই লিখেছেন সব্যসাচী। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, যদি সব্যসাচী উপাচার্য পদে না থাকতে চান, তবে বিকল্প নাম দ্রুতই ভাবা শুরু হবে।
গত মঙ্গলবার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ব্রাত্য। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্যের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়ে সমস্যা হয়েছে, তাঁদের ইস্তফা দিতে হবে। একই সঙ্গে রাজ্যপাল তাঁদের তিন মাসের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করবেন। ইতিমধ্যে অনেকেই উপাচার্য রাজভবনে গিয়ে ইস্তফা জমা দিয়েছেন। তাঁদের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। গত ১ মার্চ রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যকেও একই ভাবে ফোনে রাজভবনে এসে পুনর্বহালপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য জানানো হয়েছিল। সেই সময় তিনি সরকারি কাজে উত্তরবঙ্গে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরে তিনি ইমেলে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য পদে সব্যসাচীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৮ মার্চ। রাজভবন সূত্রে খবর, তিনি রাজ্যপালকে ইমেল করে ইস্তফা দিয়েছেন। পাশাপাশি নিজের বক্তব্যও জানিয়েছেন। ইমেলে তিনি অনুরোধ করেছেন, তাঁকে যাতে পুনর্বহাল না করা হয়। অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদেও তিনি যেতে চান না বলেও জানান। উপাচার্য পদে থাকতেই চান না বলে জানিয়েছেন সব্যসাচী। কেন উপাচার্য পদে আর থাকতে চাইছেন না তিনি? রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘনিষ্ঠ মহলে সব্যসাচী জানিয়েছেন, এক বার উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলা এবং তার পর হাতে হাতে পুনর্বহালপত্র নিতে বলা তাঁর পক্ষে ‘অপমানজনক’। এতে উপাচার্য পদের পদমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। এখন তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েই রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াচ্ছেন। শিক্ষকতাই করতে চান তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে সব্যসাচী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের জন্য গবেষণার কাজে ক্ষতি হচ্ছিল। সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত।
অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব্যসাচীর সঙ্গে কিছু সমস্যা হয়েছিল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে সংঘাত তৈরি হয়েছিল তাঁর। সেই সময় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য দাবি করেছিলেন, দু’তরফের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে জট কাটাতে তিন দিন রাজভবনে বৈঠক করেছিলেন ব্রাত্য। ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যের রাজ্যপালই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাঁর অধীনস্থ যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদেই নিয়োগের জন্য রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়োগে সই করেননি প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইলগুলি রাজভবনে পড়েছিল। অন্য দিকে, এই উপাচার্যদের পুনর্বহাল করতে চেয়েছিল রাজ্য। তা নিয়ে সংঘাত বেড়েছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে পুনর্বহাল করার মামলা সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছয়। সুপ্রিম কোর্ট রায়ে জানায়, আচার্য সই না করলে উপাচার্যকে সরে যেতে হবে। তার পরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরে যেতে হয়।
এর মধ্যেই রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ব্রাত্য। ঠিক হয়, উপাচার্যরা নিজে থেকে ইস্তফা দেবেন। নতুন রাজ্যপাল তাঁদের তিন মাসের জন্য মেয়াদ বাড়াবেন। প্রথম বৈঠকের দিন সাত জন উপাচার্যের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পরের দিন যাদবপুর-সহ ছ’জন উপাচার্য এ ভাবে এক্সটেনশন নিয়েছেন। যদিও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তা করতে রাজি হননি।