নবান্ন সূত্রের খবর, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী পরে রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন, রাজীবকে অবিলম্বে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিতে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ইস্তফাপত্রে ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ রয়েছে জানিয়ে রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে মন্ত্রিসভা থেকে ‘অপসারণ’ করা হল। শুক্রবার সন্ধ্যায় নবান্ন সূত্রে তেমনই জানানো হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে রাজীব জানিয়েছেন, তিনি আর কোনও বিতর্কে যেতে চান না। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা যেমন খুশি ব্যাখ্যা করতে পারেন। আমার কিছু বলার নেই।’’
রাজীবের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বলা হয়েছে, স্যানিটাইজেশনের কারণে শুক্রবার নবান্ন বন্ধ থাকায় দুপুরে রাজীব মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে যান। সেখানে বাড়ি লাগোয়া দফতরে তিনি মুখবন্ধ খামে নিজের ইস্তফাপত্রটি মুখ্যমন্ত্রীর এক সহায়কের হাতে দিয়ে আসেন। রাজীবের এক ঘনিষ্ঠের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দফতরে ইস্তফা জমা দেওয়ার এক ঘণ্টা পর উনি রাজভবনে রাজ্যপালকে ওই ইস্তফার একটি প্রতিলিপি দিতে গিয়েছিলেন। উনি রাজ্যপালের সঙ্গে দেখাও করতে চাননি। ইস্তফার প্রতিলিপি রাজভবনের দফতরে জমা দিয়ে চলে আসতে চেয়েছিলেন। তখন রাজভবন থেকেই তাঁকে বলা হয়, রাজ্যপাল তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। তার পরেই তিনি সেখানে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেন।’’
তবে ওই ইস্তফাপত্রে কী ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ আছে, তা নিয়ে আর জলঘোলা করতে চাইছে না রাজীবের ঘনিষ্ঠমহল। রাজীব নিজেও ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না। কিন্তু নবান্ন সূত্রে যা বলা হচ্ছে, তা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট— মন্ত্রিত্বে রাজীবের ইস্তফা ‘গ্রহণ’ না করে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে ‘অপসারণ’ করা হল, সেটিই নথিতে লেখা থাকবে। অর্থাৎ, রাজীব যে ‘ত্যাগ’-এর পথে হাঁটার বার্তা দিতে চেয়েছেন, সেই সুযোগ তাঁকে দেওয়া হবে না। প্রশাসনিক মহল মনে করছে, এতদ্বারা রাজীবের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ই ঘোষণা করে দিল নবান্ন। কারণ, এর আগে পতদ্যাগী দুই মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এবং লক্ষ্ণীরতন শুক্লর ক্ষেত্রে এমন কিছু করা হয়নি। শুভেন্দুর ইস্তফাপত্র মুখ্যমন্ত্রী গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। তার পর তিনি রাজ্যপালের কাছে সেই বার্তা পাঠান। লক্ষ্ণীরতনের ক্ষেত্রেও একই পন্থা অনুসরণ করা হয়েছিল। নবান্নের একটি সূত্রের মতে, রাজীব যে ভাবে রাজভবন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘অসৌজন্য’-এর অভিযোগ করেছেন, তা ভাল ভাবে নেয়নি নবান্ন। শুভেন্দু বা লক্ষ্ণীরতনের ক্ষেত্রে তেমনকিছু ঘটেনি। তাঁরা ইস্তফা দেওয়ার সময় শুধু মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিই পাঠিয়েছিলেন। প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য বা অভিযোগ করেননি। বস্তুত, ইস্তফা গ্রহণ করার পর মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্ণীরতন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘ও ভাল ছেলে।’’
নবান্ন সূত্রের খবর, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী পরে রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন, রাজীবকে অবিলম্বে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিতে। রাজ্যপালও সেই অনুরোধ মেনে নেন। অর্থাৎ, তখনই ঠিক হয়ে যায়, ইস্তফা নয়, রাজীবকে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ‘অপসারণ’ই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে সন্ধ্যায় জানা যায়, রাজীবের ইস্তফাপত্রে ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ ছিল। সে কারণেই তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়েছে।