বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা রাজীবের। —ফাইল চিত্র।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের মন্ত্রি পরিষদ থেকে একেবারে সরিয়ে দেওয়া হল। শুক্রবার বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন রাজীব। তার পর সটান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। সেখান থেকে তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরই রাজ্যপালের কাছে তাঁকে মন্ত্রি পরিষদ থেকে সত্ত্বর সরানোর অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সেই অনুরোধ গ্রহণ করেছেন রাজ্যপাল।
রাত পোহালেই রাজ্যে পা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা ছাড়লেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দুপুরে বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তার পর রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করেন। তাতেই তাঁর বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার জল্পনা নতুন করে জোর পেয়েছে। কারণ ঘটনাচক্রে শনিবারই বঙ্গসফরে আসনে মোদী।
ফেসবুকে নিজের পদত্যাগপত্রটি পোস্ট করেছেন ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব। জানিয়েছেন, মমতাকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পদত্যাগের একটি কপি পাঠিয়েছেন রাজ্যপালকেও। সাধারণত কোনও মন্ত্রী পদ ছাড়লে, মুখ্যমন্ত্রীই সে কথা রাজ্যপালকে জানান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজীব নিজেই রাজ্যপালকে বিষয়টি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে রাজভবনে ধনখড়ের সঙ্গে ‘সৌজন্য’ সাক্ষাত করতেও যান তিনি। তাঁর পদত্যাগপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ধনখড়। রাজভবনে রাজীবের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি এবং ভিডিয়ো টুইট করেছেন তিনি।
শুভেন্দু অধিকারী, লক্ষ্মীরতন শুক্ল-র পর এই নিয়ে তিন জন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার থেকে ইস্তফা দিলেন। তবে বেশ কিছু দিন ধরেই প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন তিনি। তাঁর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘এমনটাই প্রত্যাশা করছিলাম আমরা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাচ্ছিলেন না বেশ কিছু দিন ধরেই। ওঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। দলে থেকেও কোনও কাজ করছিলেন না।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছেন, তাতে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না। উনি যে যাবেন তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। ডোমজুড় কেন্দ্রে রাজীবকে ছাড়াই বড় ব্যবধানে জিতবে তৃণমূল।’’
গত ১৯ ডিসেম্বর অমিত শাহের উপস্থিতিতে মেদিনীপুরের সভায় শুভেন্দু অধিকারী পদ্মশিবিরে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দলের বিরুদ্ধে প্রকাশে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন রাজীব। ‘আমরা দাদার অনুগামী’ লেখা পোস্টারও পড়ে হাওড়া। তা নিয়ে কোনও সাফাই দেওয়ার পরিবর্তে দলের নানা বিষয় নিয়ে অসন্তোষের কথাই বরাবর জানিয়ে এসেছেন তিনি। প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেও একাধিক বার ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ়
বিষয়টি নিয়ে রাজীবের সঙ্গে আলোচনাতেও বসেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বসিয়ে তাঁর মান ভাঙানোর চেষ্টা চলে। কিন্তু তার পরেও মন্ত্রিসক্ষার বৈঠকে দেখা যায়নি তাঁকে। বরং ফেসবুক লাইভ করে সম্প্রতি ফের কাজ করতে পারছেন না বলে ঠারোঠোরে বুঝিয়ে দেন তিনি। রাজীবের তৃণমূল ছেড়ে চলে যাওয়া যে সময়ের অপেক্ষা, তখন থেকেই তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। তবে এ দিন মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও এখনও পর্যন্ত বিধায়ক পদ ছাড়েননি রাজীব। এখনও তৃণমূলেই রয়েছেন তিনি। তবে এ ব্যাপারে সতীর্থ শুভেন্দু অধিকারীকেই তিনি অনুসরণ করছেন বলে মনে করছেন রাজনীতিরা। রাজীবকে ইতিমধ্যে দলে স্বাগত জানিয়ে রেখেছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।