Netaji Subhash Chandra Bose Birthday

সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে ঘুরে আসতে পারেন তাঁর স্মৃতি ঘেরা কিছু জায়গায়!

২৩ জানুয়ারি প্রিয় দেশনেতার জন্মদিন উদ্‌যাপন করতে পারেন একটু অন্য রকম ভাবে। সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে দেখে আসতে পারেন তাঁর স্মৃতি জড়িয়ে থাকা কিছু জায়গা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫৯
Share:

শ্যামবাজার মোড়ে নেতাজির মূর্তি।

বাঙালির প্রিয় দেশনায়কের জন্মদিন। সেই জন্মদিন কী ভাবে পালন করে বাংলা? শোনা যায়, এক কালে কিছু বাঙালি বাড়িতে প্রিয় নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে পায়েস রান্না হত। তিনি না-ই থাকুন, তাঁর ফ্রেমে বাঁধানো ফুল-চন্দন চর্চিত ছবির সামনে ভোগের মতো অর্পণ করা হত সেই পরমান্ন। বাকিদের ভাগ করে দেওয়া হত তার পরে।

Advertisement

যিনি নেই, যাঁর সঙ্গে কোনও দিন দেখা হয়নি, যাঁকে শুধু তাঁর কীর্তি আর কাহিনি দিয়েই চেনা এবং জানা, তাঁর জন্য জন্মদিনে পায়েস রাঁধতে একমাত্র আবেগে ভাসা বাঙালিই পারে। আবার সেই বাঙালিই সুভাষের মৃত্যু নিয়ে আলোচনায় ‘যুক্তিহীন’ তত্ত্বকে কঠোর ভাবে নস্যাৎ করে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই সুভাষকে নিয়ে কথা হোক, তার গুঞ্জন বাঙালির কানে এসে পৌঁছবেই। আর তা হলেই জেগে উঠবে বাঙালি। তথ্যের অঙ্ক কষে বুঝিয়ে দেবে সুভাষের মৃত্যু নেই। অন্তত বাঙালি মনে তো নেই-ই। তাই বাংলা তাঁর মৃত্যুদিন পালন করে না। সুভাষের শুধুই জন্মদিন।

২৩ জানুয়ারি প্রিয় নেতার জন্মদিন উদ্‌যাপন করতে পারেন একটু অন্য রকম ভাবে। সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে দেখে আসতে পারেন তাঁর স্মৃতি জড়িয়ে থাকা কিছু জায়গা। সুভাষকে যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের থেকেই জানা যায়, তিনি খাদ্যরসিক ছিলেন। সুভাষের স্মৃতি ছুঁয়ে বেড়ানোর ফাঁকে তাঁর প্রিয় খাবারের ঠিকানাতেও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।

Advertisement

নেতাজি ভবন

নেতাজি ভবন। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতার এলগিন রোডের সুভাষচন্দ্রের বাড়ি এখন নেতাজি ভবন। ১৯০৯ সালে ওই বাড়ি বানিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্রের বাবা জানকীনাথ বসু। বিপ্লবের সূত্রপাত এই বাড়ি থেকেই। আবার এই বাড়িতেই সুভাষ গৃহবন্দিও হন। ১৯৪১ সালে বন্দি থাকাকালীনই লুকিয়ে বাড়ি ছাড়েন। তার পর বার্লিন যাত্রা, আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন, ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে এই বাড়িতে এসেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এবং জওহরলাল নেহরু। বর্তমানে বাড়িটি নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর তত্ত্বাবধানে। ভিতরে রয়েছে সংগ্রহশালা।

সুভাষের পৈতৃক ভিটে

কোদালিয়ার বাড়ি। ছবি সংগৃহীত।

ছোটবেলার কিছুটা সময় সুভাষ কাটিয়েছিলেন কোদালিয়ায় তাঁর পৈতৃক ভিটেতে। বড় হওয়ার পরেও এসেছেন নিয়মিত। নিজের অসমাপ্ত জীবনীতে সুভাষ লিখে গিয়েছেন তাঁর ‘দেশের বাড়ি’ নিয়ে। সেই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে বংশের ইতিহাসও। সুভাষ লিখেছেন তাঁদের বোস পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দশরথ বোস। তাঁর একাদশতম উত্তরসূরি মাহিপতি বোস বাংলার সুলতানের কাছে সুবুদ্ধি খান উপাধি পান। পান একটি জায়গিরও। সেই জায়গির কোদালিয়ার কাছেই মাহীনগরে। মাহীনগরে সুভাষের পূর্বসূরি মহিপতির বাড়ির ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করেছিলেন জনকীনাথ। তার কাছেই সুভাষের পৈতৃক ভিটে। তাঁর ঠাকুরদা হরনাথ বোসের তৈরি বাড়ি ‘হরনাথ লজ’। গ্রামে রয়েছে বোসেদের মন্দিরও। সার দেওয়া সেই মন্দিরে দুর্গাপুজো হত। সুভাষ পুজোর সময় দেশের বাড়িতে যেতেনও। পুজোর কথা সুভাষ জেলবন্দি থাকাকালীন দাদা শরৎ বসুকে চিঠিতেও লিখেছিলেন। সুভাষ জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর একটা সপ্তাহ তোমরা কোদালিয়াতেই থাকবে নিশ্চয়ই। জেলে আমরাও দুর্গাপুজোর আয়োজন করছি...।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোদালিয়া অবশ্য এখন সুভাষগ্রাম। ২৩ জানুয়ারি সেখানে প্রতি বছরই অতিথি সমাগম হয়। বিদেশ থেকেও আসেন পর্যটকেরা।

স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল

স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল। —ফাইল চিত্র।

প্রেসিডেন্সি কলেজের ঠিক পিছনে দিকেই রয়েছে একটি পাইস হোটেল। নাম স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল। কলেজের যা বয়স, দোকানের বয়স তার চেয়ে খুব কম নয়। প্রেসিডেন্সির ছাত্রেরা মাঝেমধ্যে খেতেন ওই হোটেলে। তবে তাঁদের এক জন প্রায়ই ভাত খেতে আসতেন দুপুরে। ভালবাসতেন পুঁইশাকের চচ্চড়ি এবং মুড়িঘণ্ট। সৌম্যকান্তি এবং উজ্জ্বল সেই ছাত্রকে ঘিরে পরবর্তী কালে অনেক ইতিহাস রচিত হয়েছে। সেই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ১১৩ বছরের পুরনো হোটেলটিও। আজও প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি ওই ছাত্রটির জন্মদিন উদ্‌যাপন করে দোকানটি। প্রথম ১০০ জন ক্রেতার জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করে তারা। সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে বেড়ানোর এক ফাঁকে মধ্যাহ্নভোজ সেরে নিতে পারেন সুভাষের গল্প শুনতে শুনতে।

প্যারামাউন্ট

এক দিকে বইপাড়া অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়। মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা প্যারামাউন্ট শরবতের দোকানের সঙ্গেও জুড়ে আছে সুভাষচন্দ্রের স্মৃতি। তখন অবশ্য প্যারামাউন্ট তার নতুন নাম পায়নি। ওই জায়গায় যে দোকান ছিল, তার নাম ছিল প্যারাডাইস। সেই দোকানের লাগোয়া পিছনের দিকের একটি ঘরে বসত বিপ্লবীদের সঙ্গে সুভাষের গোপন বৈঠক। ১৯৩৪ সালে সেই আড্ডার খোঁজ পেয়ে দোকানটি বন্ধ করে দেয় ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ। যদিও কিছু দিন পরে দোকান আবার মাথা তোলে। সুভাষের গোপন বৈঠকের সেই ঘরটিতে এখন শরবত বানানো হয়।

লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স

লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স। ছবি: কমলিকা ভট্টাচার্য।

প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সুভাষচন্দ্রকে বহিষ্কার করা হয় অধ্যাপক ওটেন সাহেবের উপর হামলার ঘটনায়। পরে তিনি গিয়ে ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজে। সেখানে খাদ্যরসিক সুভাষের নতুন ঠিকানা হয় লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স। এই দোকানের তেলেভাজা খেতে ভালবাসতেন সুভাষ। আজও সুভাষের জন্মদিন, অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারি সেখানে বিনামূল্যে তেলেভাজা খাওয়ানো হয় দোকানে আসা খরিদ্দারদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement