সিবিআই দফতরে রাজীব কুমার। —নিজস্ব চিত্র।
সিবিআই -এর মুখোমুখি হলেন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। শুক্রবার তাঁকে সিবিআই দফতরে তলব করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়েই সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন তিনি। এ দিন প্রায় ৪ ঘণ্টা জেরা করা হয় রাজীব কুমারকে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। রেকর্ড করা হয়েছে বয়ানও। সিবিআই সূত্রে খবর, ফের তাঁকে তলব করা হতে পারে।
এর আগে শিলংয়ে প্রায় ৪০ ঘণ্টা রাজীব কুমারকে জেরা করে সিবিআই। সূত্রের খবর, তার পরেও সারদা কাণ্ডে তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাই ফের এ দিন তাঁকে তলব করা হয়।
শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ তিনি সিবিআইয়ের মুখোমুখি হন। সিবিআই সূত্রে খবর, সারদা কাণ্ড ছাড়াও তাঁকে অন্যান্য চিটফান্ড মামলাতেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে চিটফান্ড কাণ্ড সামনে আসার পর রাজ্য সরকার বিশেষ তদন্তকারী দল(সিট)গঠন করে। এই দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন রাজীব কুমার। সেই সময় রাজীব কুমারের কী ভূমিকা ছিল, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে কী কী নথি উদ্ধার হয়েছিল, তা জানতে চায় সিবিআই।
সম্প্রতি আট ট্রাঙ্ক ভর্তি সারদার নথি সিবিআইয়ে জমা করেছে বিধাননগর দক্ষিণ থানা। সারদার তদন্তের ক্ষেত্রে এই নথিগুলি গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এখনও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে আসেনি সারদার সেই লাল ডায়েরি এবং পেনড্রাইভ, যা সারদা তদন্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে রাজীব কুমার কিছু জানেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। এ ছাড়াও সুদীপ্ত এবং দেবযানী যখন পলাতক ছিলেন, সেই সময় বিভিন্ন প্রভাবশালীদের সঙ্গে তাঁদের কথাবার্তা হত বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সেই কল রেকর্ডও পেতে চান তাঁরা। এ বিষয়ে রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার হয়েচে বলে খবর।
আরও পড়ুন: ব্যাপক বোমাবাজি, কাঁদানে গ্যাস, বারাসতে রাতভর পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ
আরও পড়ুন: মহিলাদের সঙ্গে ‘দুষ্কর্ম’ করতেন সম্রাট আকবর, দাবি বিজেপি নেতার
রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের আগে গত কয়েকদিনে জেরা হয়েছে সারদার প্রথম তদন্তকারী অফিসার প্রভাকর নাথকে। জেরা করা হয়েছে বিধাননগরের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষকে (সেই সময় রাজীব কুমার বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন)। কয়েকদিন আগেই জেরার মুখে পড়েছিলেন সিটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তথা রাজ্য পুলিশের অফিসার দিলীপ হাজরা। জেরা করা হয় আর এক পুলিশ অফিসার আরআই মোল্লাকেও। এই সব পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ বার দ্বিতীয় দফায় জেরার সম্মুখীন রাজীব কুমার।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজীব কুমার গ্রেফতারি এড়াতে পারলেও, শিলংয়ে ৪০ ঘণ্টা তাঁকে জেরা করে সিবিআই। পরবর্তী ক্ষেত্রে রাজীব কুমার যে গ্রেফতারি এড়ানোর ‘রক্ষাকবচ’ পেয়েছিলেন, তা নাকচ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর পরই রাজীব কুমারের গ্রেফতারির সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনা শুরু হয়। এরই মধ্যে সিবিআই দ্বিতীয় দফায় জেরার জন্য তাঁকে নোটিস পাঠায়। সেই নোটিসের বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। রাজীব কুমার হাইকোর্টের নির্দেশে আপাতত গ্রেফতারি এড়ানোর রক্ষাকবচ পেলেও, আদালত জানিয়ে দেয়, সিবিআই যখনই ডাকবে, তাঁকে হাজির হতে হবে এবং তাঁকে সিবিআইয়ের কাছে পাসপোর্ট জমা দিয়ে কলকাতাতেই থাকতে হবে। এই নির্দেশ মতো অবশেষে এ দিন রাজীব কুমার সিবিআইয়ের মুখোমুখি হলেন। এ দিন মদন মিত্রের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক বাপি করিমকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর জানতে পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগ।)